বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত চলবে চাল আমদানি

Dhaka Post Desk

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৫:৪৩ পিএম


বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত চলবে চাল আমদানি

চাল

করোনার মহামারির মধ্যে গেল কয়েকমাস ধরেই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুল্ক কমিয়ে (৬২ থেকে ২৫ শতাংশ) নতুন করে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে বেসরকারি পর্যায়ের ২৯ প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যতদিন না পর্যন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসে ততদিন চাল আমদানি অব্যাহত রাখবে সরকার।

গত ২৭ ডিসেম্বর সরকারের তরফ থেকে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। সে অনুযায়ী রোববার (৩ জানুয়ারি) ১০ প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এরমধ্যে জয়পুরহাটের হেনা এন্টারপ্রাইজ ১০ হাজার টন, দিনাজপুরের রেনু কনস্ট্রাকশন ১৫ হাজার টন, খুলনার কাজী সোবহান ট্রেডিং করপোরেশন ১০ হাজার টন, বগুড়ার আলাল এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস ১০ হাজার ও আলাল এন্টারপ্রাইজ পাঁচ হাজার টন, নওগাঁর দীপ্ত এন্টারপ্রাইজ ১০ হাজার টন, আকাশ এন্টারপ্রাইজ ১০ হাজার টন, ঘোষ অটোমেটিক রাইস মিল ১৫ হাজার টন, মেসার্স নুরুল ইসলাম ১০ হাজার টন ও জগদীশ চন্দ্র রায় ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছে।

এরপর সোমবার (৪ জানুয়ারি) আরও ১৯ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ২৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।  আবেদন করা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যাচাই-বাছাই করে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভাঙা দানাবিশিষ্ট বাসমতি নয় এমন সেদ্ধ চাল, শর্তসাপেক্ষে আমদানি করা যাবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে।

এরমধ্যে যশোরের মেসার্স মজুমদার অ্যান্ড সন্স ২০ হাজার টন, মেসার্স লিটন এন্টারপ্রাইজ ১০ হাজার টন, মেসার্স সুশান্ত কৃষ্ণ রায় ১০ হাজার টন, মেসার্স গ্লোবাল এন্টারপ্রাইজ ৫ হাজার টন, সাতক্ষীরার মেসার্স মজুমদার এন্টারপ্রাইজ ২৫ হাজার টন, ময়মনসিংহের মেসার্স মজুমদার ট্রেডার্স ৫০ হাজার টন, গাইবান্ধার মেসার্স প্রধান ট্রেডার্স ৫ হাজার টন, পাবনার  পূর্বাশা ট্রেডিং ৫ হাজার টন, দিনাজপুরের মেসার্স ইউনাইটেড রাইস মিল ৫ হাজার টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেসার্স হোসেন ট্রেডার্স ১০ হাজার টন, মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্স ৫ হাজার টন, মেসার্স নবাব ফুড প্রোডাক্টস ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছে। 

এছাড়াও শেরপুরের মেসার্স এবি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ১০ হাজার টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেসার্স নজরুল সুপার রাইস মিল ১০ হাজার টন, সাতক্ষীরার মেসার্স নিশাত ইন্টারন্যাশনাল ১৫ হাজার টন, চট্টগ্রামের আল আমিন এস্টাব্লিশম্যান্ট ৫ হাজার টন, মেসার্স সামছুল আলম ১০ হাজার টন, মেসার্স এস অ্যান্ড কোং ১০ হাজার টন, বগুড়ার ফারিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ৫ হাজার টন চাল আমদানি করতে পারবে। 

দেশের বাজারে চিকন চালের দাম এখন প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) তিন হাজার ২০০ টাকা থেকে তিন হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। খুচরায় প্রতি কেজি সরু চালের দাম পড়ছে ৬৪ টাকা থেকে ৬৬ টাকার মধ্যে। সরু চালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঝারি ও মোটা চালের দামও বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরও (২০১৯-২০২০) প্রতি কেজি চালের গড় দাম ছিল ৫৬ টাকা। যা বর্তমান বাজারে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।  

আর কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পরে প্রতি বছর চালের উৎপাদন প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টন করে বেড়েছে। শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিন কোটি ৮৭ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। তবুও চালের দাম বাড়তে থাকায় আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। 

জানা গেছে, সরকারিভাবে ৪ লাখ মেট্রিক টন, জিটুজি পদ্ধতিতে দেড় লাখ মেট্রিক টন এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বেসরকারিভাবে চাল আমদানি করা হবে।   

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেসরকারিভাবে কত পরিমাণ চাল আমদানি করা হবে তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে যতদিন না পর্যন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসবে ততদিন পর্যন্ত চাল আমদানি চলবে। 

তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের পাশাপাশি কৃষকদের বিষয়ও আমাদের মাথায় রয়েছে। সবদিক বিবেচনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব, কখন চাল আমদানি বন্ধ করা হবে। 

একই কথা বলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তাহমিদুল ইসলাম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, কবে পর্যন্ত এ আমদানি চলবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। 

এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, চালের দাম নিয়ে ভোক্তাদের যাতে কষ্ট না হয়, আবার কৃষকও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

এ বছর সরকার ৩৭ টাকা কেজি দরে চাল এবং ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কিনছে। কিন্তু খোলা বাজারে কৃষক আরও ভালো দাম পাওয়ায় ওই দামে ধান কিংবা চাল কিনতে পারেনি সরকার। চুক্তিবদ্ধ মিলাররাও লোকসানের কথা বলে চাল সরবরাহ থেকে বিরত থেকেছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা প্রতিমণ ১ হাজার ৪০ টাকা করে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য বাজার উন্মুক্ত রেখেছি। কিন্তু বাজারে এখন ধানের দাম ১ হাজার ২০০ টাকা। কৃষক সরকারের কাছে না বিক্রি করে বেশি দামে অন্যত্র বিক্রি করছে। তবে সময় সুযোগ হলে কৃষকের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন ধান কিনে বাজার নিয়ন্ত্রণ করব।

এসএইচআর/এসএম

Link copied