কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে যা বললেন এনবিআর চেয়ারম্যান

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার জন্য সরাসরি কোনো সুবিধা রাখা হয়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেছেন, আগের মতো কোনো বিশেষ সুযোগ নেই। তবে নির্দিষ্ট খাতে অতিরিক্ত কর পরিশোধ করে কেউ চাইলে তার অপ্রদর্শিত আয়কে ব্যবহারের সুযোগ থাকছে।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এবার বাজেটে দুটি নির্দিষ্ট সুযোগ রাখা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো— কেউ যদি অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে কোনো ফ্ল্যাট বা জমি কেনেন, তাহলে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কিছুটা বাড়তি হারে কর দিয়ে সেটি বৈধ করতে পারবেন। তার বিরুদ্ধে কোনো সংস্থা যেমন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), আয়কর বিভাগ কিংবা ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর তদন্ত করবে না।
কেউ যদি অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে কোনো ফ্ল্যাট বা জমি কেনেন, তাহলে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কিছুটা বাড়তি হারে কর দিয়ে সেটি বৈধ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে কোনো সংস্থা (যেমন- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), আয়কর বিভাগ কিংবা ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং অন্যান্য) তদন্ত করবে না। তবে, বিশেষ প্রয়োজন হলে তথ্য চাইতে পারবে।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় সুযোগটি হলো— যদি কেউ নিজের নামে থাকা জমিতে অপ্রদর্শিত অর্থে বাড়ি নির্মাণ করেন, তাহলে তাকে দ্বিগুণ হারে কর দিতে হবে। এই অতিরিক্ত কর পরিশোধ করলেই তার বিনিয়োগ আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, এটা মূলত কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নয়। বরং নির্দিষ্ট খাতে অতিরিক্ত কর দিয়ে যেকোনো অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যবহারের একটা পথ রাখা হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গত বছর (আগস্ট ২০২৪) থেকে কালো টাকা বৈধ করার বিশেষ সুযোগ পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। এবারও তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান স্পষ্ট করে জানান, শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের ওপর কোনো কর আরোপ করা হয়নি। এটি একটি ভুল ব্যাখ্যা বা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য।
তিনি বলেন, শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের অর্থ করযোগ্য নয় এবং সেটিকে করের আওতায় আনার কোনো পরিকল্পনাও নেই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ আর্থিক খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।
এর আগে, ২ জুন বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট।
বাজেটে দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের বাজেটটি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর বাজেটের তুলনায় ভিন্ন। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা।
আরএইচটি/এমজে