৫০ কোটি টাকা আত্মসাতে পিকে হালদারসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের দুর্নীতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আলোচিত আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার বা পিকে হালদারসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানান। মামলার সুষ্ঠু বিচারের লক্ষ্যে শিগগিরই এই চার্জশিট আদালতে পাঠানো হবে।
চার্জশিটভুক্ত অপর আসামিরা হলেন—রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মৈত্রেয়ী রানী বেপারী, পরিচালক ডা. উদ্দাব মল্লিক, বাসুদেব ব্যানার্জি, মো. আবুল শাহজাহান, এমএ হাশেম, মো. নুরুল আলম, জহিরুল আলম, মোহাম্মদ আবুল হাসেম, মো. আনোয়ারুল কবীর, মো. নুরুজ্জামান, মো. নওশেরুল ইসলাম, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের সাবেক এমডি রাশেদুল হক, জিইও শিপিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুজিত কুমার বিশ্বাস, পরিচালক অর্চিতা রাণি বিশ্বাস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপাল কৃষ্ণ বিশ্বাস, পরিচালক পূজা ব্যানার্জি, রতন কুমার বিশ্বাস, অনঙ্গ মোহন রায়, পাপিয়া ব্যানার্জী, শিবু প্রসাদ ব্যানার্জী, মর্জিনা আক্তার, আল মামুন সোহাগ ও রাফসান রিয়াদ চৌধুরী।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয়ে অবৈধভাবে ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠান পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে অবৈধভাবে ঋণ গ্রহণের জন্য ভুয়া রেকর্ডপত্র তৈরি করেন। এর মাধ্যমে আসামিরা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ওই কাগুজে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৫০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুরি দিয়ে সেখান থেকে ৪৯ কোটি ৭৪ লাখ ৯৮ হাজার ২৮৩ টাকা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে পিকে হালদার সিন্ডিকেটের ভুয়া কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যক্তির হিসাবে ওই অর্থ স্থানান্তর এবং রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন ও পাচার করার অপরাধ তদন্তকালে প্রমাণিত হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে অবেশেষে এ মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হলো। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ড বিধি ১৮৬০ এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারা; দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২), (৩) ধারায় এই চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও পাচার অভিযোগ ওঠে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে অর্ধশত মামলা করা হয়েছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে করা দুদকের মামলায় গত বছরের অক্টোবরে পিকে হালদারকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
পিকে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে ২০২১ সালের শুরুতেই তিনি ভারত পালিয়ে যান। পরে ২০২২ সালের ১৪ মে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরের একটি বাড়ি থেকে পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরএম/এসএম