চট্টগ্রাম-দোহাজারি প্রকল্পের ৩০ রেল ইঞ্জিন ক্রয়ে দুর্নীতির গন্ধ

‘চট্টগ্রাম-দোহাজারি মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজ রেলপথে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের অধীনে ৩০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির সম্ভাবনার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (৬ অক্টোবর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ের তিন সদস্যের এনফোর্সমেন্ট টিমের এক অভিযানে এমন প্রমাণ উঠে এসেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, অভিযানের সময় প্রাপ্ত তথ্য ও নথিপত্র পর্যালোচনায় প্রকল্পের স্পেসিফিকেশন অনুপস্থিতি ও প্রাক্কলন প্রক্রিয়ায় অস্পষ্টতা প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম, অস্বচ্ছতা এবং দুর্নীতির সম্ভাবনার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুদক টিম। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে প্রকৃত অবস্থা উদঘাটনপূর্বক টিম কমিশনে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।
আরও পড়ুন
দুদক সূত্রে জানা যায়, ‘চট্টগ্রাম-দোহাজারি মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজ রেলপথে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ৩০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ ক্রয় প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের প্রচেষ্টার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের সময় প্রাপ্ত তথ্য ও নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে ৩০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ ক্রয়ের কোনো নির্দিষ্ট প্রাযুক্তিক স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করা হয়নি। বরং এটি উল্লেখ ছাড়াই লোকোমোটিভ, ক্যাপিটাল স্পেয়ার এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সামগ্রীসহ বিল অব কোয়ানটিটিজ (বিওকিউ)-এর ভিত্তিতে ক্রয় প্রাক্কলন নির্ধারণ করা হয় প্রায় ২ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। যা ২০২৩ সালে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল। স্পেসিফিকেশন অনুপস্থিতি ও প্রাক্কলন প্রক্রিয়ায় অস্পষ্টতা প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম, অস্বচ্ছতা এবং দুর্নীতির সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয় বলে এনফোর্সমেন্ট টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
অন্যদিকে, দুদকের দাখিল হওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এর আগেও ৩০ নিম্নমানের টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ ক্রয়ের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা গচ্চা দেওয়া হয়েছিল। ওই ইঞ্জিনগুলো অধিকাংশই এখন অকেজো। যার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ছিল হুন্দাই রোটেম নামে একটি বিদেশি কোম্পানি। এবারও এডিপির ঋণে আরও ৩০ ইঞ্জিন আনা হচ্ছে। তার ওপর ইঞ্জিন প্রতি বাজেট বাড়িয়ে ৩২ কোটি থেকে ৮০ কোটি টাকা করা হয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে পাস হওয়া প্রকল্পের নথিপত্রে কৌশলে ইঞ্জিনের স্পেসিকেশন ঘর ফাঁকা রাখা হয়েছিল। একনেকে পাস হওয়া ওই প্রকল্পই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ডিপিপিতে গোপনে ফাঁকা জায়গায় নতুন শর্ত যোগ করে আগের কোম্পানি হুন্দাই রোটেমকে কাজ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, আগের দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের অন্যতম একজনকে তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে যোগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ৩০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ ক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করা খসড়া স্পেসিফিকেশন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) ড. শেখ মইনউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি করা হয়। ক্রয় কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। ক্রয় কার্যক্রম সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক আলোচনার পর উন্মুক্ত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টেন্ডার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে ওই কমিটি গঠন করা হয় বলে জানা গেছে।
আরএম/এসএসএইচ