টেকসই উৎপাদন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এএফবিএলের পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ

দেশে ফুড ও বেভারেজ খাতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান আকিজ ভেঞ্চার লিমিটেড (এএফবিএল) পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। শিল্প-বর্জ্য পুনর্ব্যবহার ও সবুজায়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পরিচ্ছন্ন ও টেকসই বাংলাদেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিষ্ঠানটির রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পুনর্ব্যবহার এবং সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রোডাকশন প্লান্ট ও ডিপো থেকে প্রায় ২৩০ ধরনের বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই বর্জ্য চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত– বিক্রয়যোগ্য ওয়াস্টেজ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য আইটেম, রিসাইকেলযোগ্য ওয়াস্টেজ এবং ডিস্পোজাল ওয়াস্টেজ।
প্রতিটি প্রোডাকশন ইউনিটে বর্জ্য পৃথককরণ, নিরাপদ সংরক্ষণ এবং ডিজিটাল ট্র্যাকিং নিশ্চিত করা হয়েছে। বিক্রয়যোগ্য ওয়াস্টেজ নিয়মিতভাবে অনুমোদিত পার্টনারদের মাধ্যমে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এএফবিএল বর্তমানে দুটি আধুনিক রিসাইক্লিং প্লান্ট পরিচালনা করছে, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৩০ টন পিইটি বোতল প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে– ফিডিং কনভেয়র, বোতল ওয়াশার, স্ক্রু কনভেয়র, মেটাল সর্টার, গ্র্যান্ডার, আনুভূমিক ড্রায়ার, এক্সক্রুডার এবং প্যালেটাইজিং ইউনিট।
এনার্জি-ইফিশিয়েন্ট প্রযুক্তির ব্যবহারে মোট বিদ্যুৎ ব্যবহার থেকে প্রায় ৬ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হচ্ছে। দক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজায়ন ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের জন্য প্রতিষ্ঠানটি পরপর দুইবার ‘গ্রিন ফ্যাক্টোরি অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছে।
রিসাইক্লিং কার্যক্রমের ফলাফলে দেখা যায়, ২০২৩ জুলাই–২০২৪ জুন: ৬,৫৪৮,৮১৪ পিইটি বোতল সংগ্রহ; ২০২৪ জুলাই–২০২৫ এপ্রিল: ৪,৮৬৯,৪৩৯ পিইটি বোতল পুনর্ব্যবহার এবং ২০২৫ আগস্ট পর্যন্ত: ৬৭০ টন পিইটি বোতল পুনর্ব্যবহার করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সদস্য প্লান্টগুলো টার্গেটের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি অর্জন করেছে, ফলে প্রায় ২ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। বিক্রয়যোগ্য বর্জ্য থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১ থেকে ১.৫ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। দৈনিক পানি পরিশোধন ক্ষমতা (ইটিপি) ৭৫,০০০ কিউবিক মিটার।
এএফবিএল সারাদেশে বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করতে ১০টি আধুনিক বর্জ্য সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি–বেল প্রেস মেশিন, সংগ্রহযান, বাছাই ও সংরক্ষণ সুবিধা। গাজীপুর, আশুলিয়া, বগুড়া, রংপুর, ময়মনসিংহ, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও হবিগঞ্জে কেন্দ্রগুলো অবস্থিত।
এএফবিএল বিশ্বাস করে, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেবল শিল্পের নয়, সমাজের জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর ফলে পানি ও মাটির দূষণ কমছে, বর্জ্য থেকে মূল্যবান সম্পদ তৈরি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের টেকসই শিল্পায়নের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠছে।
ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটি পরিকল্পনা করছে– প্রযুক্তি-নির্ভর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ, সারাদেশে রিসাইক্লিং সেন্টার স্থাপন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও কমিউনিটি লিডারদের প্রশিক্ষণ ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও কার্যকর করা।
এএফবিএল মনে করে, ‘বর্জ্য শুধু সমস্যা নয়, এটি সম্ভাবনার উৎস।’ প্রতিষ্ঠানটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পুনর্ব্যবহার ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন, টেকসই ও গর্বিত বাংলাদেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
বিআরইউ
