৯ মাসে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে রেকর্ড ১৭০৪ কোটি টাকা লোকসান

চলতি ২০২৫ হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির রেকর্ড ১ হাজার ৭০৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ব্যাংকটিকে এর আগে কখনো এত বড় পরিমাণ লোকসান করতে হয়নি। ২০২৪ হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসে যেখানে ব্যাংকের নিট মুনাফা হয়েছিল ৫১ কোটি টাকা বেশি। ব্যাংকের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কর পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৭০৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছিল ৫১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
এই বড় লোকসানের কারণ হিসেবে সুদের ব্যয় বৃদ্ধি এবং বড় অংকের প্রভিশনিং গঠন নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়কালে ব্যাংকটিকে ২ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা আমানতকারীদের এবং ৮৯১ কোটি টাকা ঋণ খরচ মেটাতে দিতে হয়েছে। এর বাইরে ঋণ এবং অগ্রিমের বিপরীতে ৪০১ কোটি টাকা প্রভিশনিং গঠন করতে হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকটির শেয়ার, ব্রোকারেজ কমিশন এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা আয়ের বিপরীতে ৬৪৮ কোটি টাকা পরিচালন লোকসান হয়েছে।
ব্যাংকটির আলোচ্য সময়ের সুদ আয় থেকে এই ক্ষতিগুলো বাদ দিয়েও সার্বিকভাবে ১ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। যদিও চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয়মাসে ব্যাংকটি লোকসান দেখিয়েছিল মাত্র ৪৬৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ শেষ তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকের নিট লোকসান হয়েছে ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা, আগের বছরের একই সময়ের এই লোকসান হয়েছিল ২৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তহবিল ব্যয় তীব্রভাবে বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকটি সমস্যায় পড়েছে। মূলত আমানতের বিপরীতে উচ্চ সুদহার ও ঋণের ওপর উচ্চ সুদ ব্যয়ের কারণে এই ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ঋণের বিপরীতে প্রভিশনিং গঠনও কিছুটা নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
২০২৪ হিসাব বছরে ব্যাংকটির ১০১ কোটি ৭০ লাখ টাকা নিট লোকসান হয়েছিল। ওই লোকসানের কারণে ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংকের পুঞ্জীভূত লোকসান বা ধরে রাখা আয় দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকায়।
১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি সারা দেশে ১৮০টি শাখা, ২৩৬টি উপ-শাখা এবং ৩৭৫টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট পরিচালনা করে। এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোও রয়েছে— সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ, সোশ্যাল ইসলামী ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং সোশ্যাল ইসলামী ফাউন্ডেশন হাসপাতাল।
২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকটি অভিযুক্ত ব্যবসায়িক সংগঠন এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে যায়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালের আগস্টে ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয় এবং পাঁচ সদস্যের একটি নতুন বোর্ড গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি দেখানো হয়েছে ২০ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা।
এমএমএইচ/এসএম