২৫ হাজার ব্যাংকার আক্রান্ত, মারা গেছেন ১৩৩ জন

Md Shofiqul Islam

২৪ জুন ২০২১, ১০:৪৪ পিএম


২৫ হাজার ব্যাংকার আক্রান্ত, মারা গেছেন ১৩৩ জন

মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও জরুরি সেবা হিসেবে চালু রয়েছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে ব্যাংকারদের। এখন পর্যন্ত করোনায় সাড়ে ২৫ হাজার ব্যাংককর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১৩৩ ব্যাংকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ ছুটি, লকডাউন কিংবা বিধিনিষেধের মধ্যেও জরুরি সেবা হিসেবে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। মানুষকে সেবা দিতে গিয়ে অনেক সময় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পরিপালন করা সম্ভব হয় না। আছে যাতায়াতে ভোগান্তি।  এসব কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন ব্যাংকাররা। দিনদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। তাই দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি অধিক কর্মীর সমাগম ঠেকাতে অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রমে জোর দেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।

জানা গেছে, গত বছরের মার্চ মাসে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয় বাংলাদেশে। করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। চলাচলেও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ ছিল এ সময়। কিন্তু জরুরি সেবা হিসেবে সীমিত পরিসরে খোলা রাখা হয় ব্যাংক। এ বছর মার্চে শুরু হয় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে এবার সংক্রমণও বেশ তীব্র। সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনসহ নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় জেলাভিত্তিক লকডাউন দেওয়া হয়। সর্বশেষ করোনার সংক্রমণ থেকে ঢাকাকে রক্ষার্থে রাজধানীর আশপাশের চার জেলাসহ মোট সাতজেলায় লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।

চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ হাজার ৪০০ ব্যাংককর্মী। তাদের মধ্যে ১৩৩ জন মারা গেছেন। সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী মারা গেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের। ব্যাংকটিতে এখন পর্যন্ত ২৫ কর্মী মারা গেছেন

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ হাজার ৪০০ ব্যাংককর্মী। তাদের মধ্যে ১৩৩ জন মারা গেছেন। সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী মারা গেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের। ব্যাংকটিতে এখন পর্যন্ত ২৫ কর্মী মারা গেছেন। গত বছর ২২ জন এবং চলতি বছর মারা যান তিনজন। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ছয়জন ও ন্যাশনাল ব্যাংকের ছয় কর্মী করোনায় মারা যান।

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ব্যাংককর্মীদের মধ্যে প্রথম মারা যান সিটি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ফার্স্ট ভাইস-প্রেসিডেন্ট মুজতবা শাহরিয়ার (৪০)। গত বছরের ২৬ এপ্রিল সকালে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ওই ঘটনার পর প্রাণঘাতী করোনার ভীতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংককর্মীদের কাজে ফেরাতে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। ঝুঁকিবিমাসহ যাতায়াত ভাতা, চিকিৎসা ভাতা এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এককালীন আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়।

এ বিষয়ে জান‌তে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী প‌রিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্ট‌কে বলেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে ব্যাংকসেবা চালু রাখতে হবে। এজন্য কর্মীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সরকারের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করে সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সংক্রান্ত সর্বশেষ নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে পদভেদে ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ অর্থ কোনোভাবেই কর্মীর ঋণ বা অন্য কোনো দায়ের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না।

dhakapost

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ্ সৈয়দ আব্দুল বারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত তাদের প্রায় ৪০০ কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ছয়জন। তিনি বলেন, ‘করোনার শুরু থেকে আমরা কর্মীদের পাশে আছি। কোনো কর্মীর শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে টেস্ট থেকে শুরু করে আক্রান্তদের চিকিৎসার সব খরচ ব্যাংক বহন করছে। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ বাড়তি অনুদান দেওয়া হচ্ছে।’ 

এছাড়া আমরা গর্ভবতী মা ও অসুস্থ কর্মীদের বাসায় থেকে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছি। পর্ষদের নির্দেশনা অনুযায়ী ন্যাশনাল ব্যাংক কর্মীদের সঙ্গে সবসময় মানবিক আচরণ করছেন বলেও জানান তিনি।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। বিশ্বজুড়ে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে। এ ভাইরাস বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কাড়ছে।

২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এরপর লকডাউনসহ সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য (২৪ জুন) অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশে মোট মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৬৮। মোট আক্রান্ত হয়েছেন আট লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ জন। সুস্থ হয়েছেন সাত লাখ ৯৪ হাজার ৭৮৩ জন।

গত মার্চ মাস থেকে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। মারাত্মক ভারতীয় ধরনের সংক্রমণ দেশের সীমান্ত জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ায় বেশ কয়েকটি জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সর্বশেষ সুপারিশ অনুযায়ী, করোনার ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা পেতে সারাদেশে ১৪ দিনের ‘শাটডাউন’ প্রয়োজন।

এসআই/এমএআর/

Link copied