নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ১৫ হাজার টন ই-বর্জ্য আমদানি, ঢাকার ই-বর্জ্য ১১৭৩ টন

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত তিন বছরে ১৪ হাজার ৯৮৫ টন ই-বর্জ্য উপাদান আমদানি হয়েছে। যার মধ্যে বস্ত্র ও পোশাক, সিমেন্ট ও সিরামিকস এবং বাণিজ্য ও বিবিধ খাতে সবচেয়ে বেশি ই-বর্জ্য আমদানি করে থাকে। অন্যদিকে ঢাকার অপ্রাতিষ্ঠানিক ই-বর্জ্যের হটস্পট থেকে বছরে প্রায় ১ হাজার ১৭৩ টন ই-বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘বাংলাদেশে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। টিআইবির গবেষক আবদুল্লাহ জাহীদ ওসমানী ও নাবিল হক গবেষণাটি উপস্থাপন করেন।
টিআইবি বলছে, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১ এবং আমদানি নীতি আদেশ, ২০২১-২০২৪ উপেক্ষা করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা ও পুরাতন ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম আমদানি হয়ে থাকে। ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা প্রণয়নের পরও বিগত তিন বছরে (২০২২-২০২৪) সাত লাখ ডলার মূল্যের ই-বর্জ্য উপাদান আমদানি হয়েছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন ধরনের ই-বর্জ্য আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৯৮৫ টন, যা রপ্তানি করা ই-বর্জ্য উপাদানের চেয়ে বেশি। বিভিন্ন খাতে ব্যবহারের জন্য এসব ই-বর্জ্য উপাদান আমদানি হয়েছে। যার মধ্যে বস্ত্র ও পোশাক খাতে ২৭ শতাংশ, বাণিজ্য ও বিবিধ খাতে ১৬, সিমেন্ট ও সিরামিকস, প্রকৌশল ও শিল্প, চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক খাতে ১১ শতাংশ ই-বর্জ্য আমদানি হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের ই-ভিএম মেশিনও ই-বর্জ্যের তালিকায় রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
গবেষণা দেখা গেছে, ই-বর্জ্য থেকে প্রাপ্ত প্লাস্টিক পোড়ানোর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে। রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনারের অনিরাপদ নিষ্পত্তিকরণের ফলে হাইড্রোক্লোরোফ্লুরোকার্বন গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে। যা গ্রিনহাউজ গ্যাস ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী। বাংলাদেশে ২০২৫ থেকে ২০৬০ সালের মধ্যে সোলার প্যানেল থেকে আনুমানিক ৫.৫ মিলিয়ন টন ই-বর্জ্য তৈরি হবে। ২০২২-২০২৫ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৭২৪টি বৈদ্যুতিক যানবাহন আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর আকার ও গঠন সম্পর্কে সামগ্রিক তথ্য না থাকার কারণে কী পরিমাণ ই-বর্জ্য তৈরি হবে তা প্রাক্কলন করা সম্ভব হচ্ছে না।
টিআইবি বলছে, ২০২২ সালের বন্যায় বাংলাদেশে প্রায় ২৪ হাজার ১৩ টন ই-বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছিল। দুর্যোগ সৃষ্ট এই বিপুল পরিমাণ ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বর্তমানে কোনো দুর্যোগ সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রটোকল নেই, ফলে সঠিক তথ্যের অভাব রয়েছে এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা সম্ভব হচ্ছে না। যথাযথই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার মাধ্যমে মূল্যবান ধাতুর জন্য খনির ওপর নির্ভরশীলতা ও আমদানি-রপ্তানি নির্ভরশীলতা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ই-বর্জ্য যদি সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা যায় তাহলে প্রায় ৩১ টন তামা উৎপাদন করা সম্ভব, যা থেকে বর্তমান বাজার দরে বার্ষিক ৩৫ মিলিয়ন টাকারও বেশি আয় করা সম্ভব বলে মনে করে টিআইবি।
সার্বিক পর্যবেক্ষণে টিআইবি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর, কাস্টমস বিপজ্জনক বর্জ্য ই-বিধিমালা, ২০২১ বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে না। অপ্রাতিষ্ঠানিক ই-বর্জ্য ব্যবসা পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতার বাইরে থাকলেও এরা প্রকৃতপক্ষে অপ্রাতিষ্ঠানিক নয়। ২০২১ সালে বিধিমালা প্রণীত হওয়ার পরও অদ্যাবধি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে তদারকির আওতায় আনতে না পারা জবাবদিহির ঘাটতিকে স্পষ্ট করেছে।
এ বিষয়ে নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই সেক্টরে এক ধরনের অরাজকতা বিরাজ করছে। সরকারের উদ্যোগ নেই। আইনের প্রয়োগ নেই। ব্যবস্থাপনায় যাদের দায়িত্ব আছে, তারা অনেকাংশেই নীরব ভূমিকা পালন করছে। বিধিমালা ও আমদানি নীতি আদেশ অনুসারে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ই-বর্জ্য এবং পুরোনো ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম আমদানি অব্যাহত থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার পরিচয় মিলেছে।
আরএম/জেডএস