খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।
ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করা সংগঠনগুলোর মধ্যে– দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এবং রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) রয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পৃথক পৃথক শোক বার্তায় মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে সংগঠনগুলো।
সারাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই শোক বার্তায় জানায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়ার অবদান ও দীর্ঘ সংগ্রাম জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। তার মৃত্যুতে জাতি একজন সৎ ও দেশপ্রেমিক নেত্রীকে হারালো। তার দীর্ঘ সংগ্রাম ও আপসহীন নেতৃত্বে জাতি সবসময় মুক্তির অনুপ্রেরণা পেয়েছে। ব্যবসায়ী সমাজ তাকে বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে পাশে পেয়েছে।
এফবিসিসিআই খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করছে। মহান আল্লাহ তাআলা তাকে বেহেশত নসীব করুন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি ও সাহস দান করুন।
ঢাকার ব্যবসায়ীদের সংগঠন ডিসিসিআই তাদের পাঠানো শোক বার্তায় জানায়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে খালেদা জিয়া অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন। সেই সাথে সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি আজীবন নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছেন, যা জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
শোক বার্তায় ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ এবং সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন।
পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর শোক বার্তায় বলা হয়, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমরা সমগ্র পোশাক শিল্প পরিবার গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। দেশ একজন অভিভাবক ও কালজয়ী দেশপ্রেমিক নেতাকে হারালো। জাতীয় জীবনে এই অপূরণীয় শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক শিল্পের বিশ্বব্যাপী প্রসারে তার আন্তরিকতা এবং সময়োপযোগী ও সাহসী সিদ্ধান্তগুলো আমাদের এই শিল্পের অগ্রযাত্রায় চিরকাল মাইলফলক হয়ে থাকবে। দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের ইতিহাসে তার অর্থনৈতিক দর্শন ও কর্মময় জীবন অম্লান হয়ে থাকবে।
বিজিএমইএ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে এবং আধুনিক শিল্পায়নের পথ সুগম করতে খালেদা জিয়া অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তার সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই বাংলাদেশে মুক্তবাজার অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ পথচলা শুরু হয়, যা বেসরকারি খাতকে বিকাশের অবারিত সুযোগ করে দেয়।
পোশাক খাতের আরেক সংগঠন বিজিএমইএ শোক বার্তায় জানায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক, আপসহীন দেশনেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিকেএমইএ এবং দেশের পোশাক শিল্প পরিবার গভীর শোক প্রকাশ করছে। জাতীর প্রতি তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাজুসের শোক বার্তায় বলা হয়, খালেদা জিয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এক মহাকালের সমাপ্তি ঘটলো। দেশ হারালো একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, যার ক্ষতি কোনো কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। তিনি শুধু একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রীই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটি আরো জানায়, খালেদা জিয়া স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য বারবার সংগ্রাম করে গেছেন। তার আপসহীন নেতৃত্বের কারণে দেশ ও জনগণ স্বৈরশাসনের হাত থেকে বারবার মুক্ত হয়েছে। দেশ যখন পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ধাবিত হচ্ছিল ঠিক তখনই আমরা দেশনেত্রীকে হারালাম। এটা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
এদিকে, বাংলাদেশের পেশাদার অর্থনীতিবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতিও জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে। সংগঠনটি এক শোক বার্তায় জানায়, খালেদা জিয়া কেবল একজন রাজনৈতিক নেত্রী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ কারিগর। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মুক্তবাজার অর্থনীতির উদারীকরণ বেগবান হয়। তার সরকারের চালু করা খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচি বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে এক মাইলফলক হয়ে আছে। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি ও অবৈতনিক শিক্ষা চালু করার মাধ্যমে তিনি দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে যে ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, তা বাংলাদেশের অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রেখেছে।
আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এক শোক বার্তায় জানায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে খালেদা জিয়ার অবদান ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন এমন এক নেত্রী, যিনি সংকটের মুহূর্তেও আপস করেননি এবং সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ব্যবসায়ী সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে পাশে পেয়েছে, যা তার নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতারই প্রতিফলন।
রিহ্যাব গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছে। মহান আল্লাহ তাআলা খালেদা জিয়াকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। আমিন।
প্রসঙ্গত, আজ ভোর ৬টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়া শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত (৩১ ডিসেম্বর এবং ১ ও ২ জানুয়ারি) তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। এছাড়া বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সারা দেশে সাধারণ ছুটি থাকবে।
এমএমএইচ/বিআরইউ