রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হলেও ছুঁতে পারেনি লক্ষ্যমাত্রা

Dhaka Post Desk

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

০৬ জুলাই ২০২১, ১২:০৯ পিএম


রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হলেও ছুঁতে পারেনি লক্ষ্যমাত্রা

মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের রফতানি খাত, বাড়ছে আয়। তবে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ (৩৮ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এ আয় তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। তবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের রফতানি আয়ের লক্ষ্য ছিল ৪১ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে মহামারির শুরুর সময়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। তার আগের বছর রফতানি হয়েছিল ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার ধাক্কায় গত বছরের এপ্রিলে শিল্পকারখানা উৎপাদন প্রায় বন্ধ ছিল। আবার অনেক বিদেশি ক্রেতা বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্রয়াদেশ বাতিল করায় রফতানি তলানিতে নেমে গিয়েছিল। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহামারির কিছুটা উন্নতি হয়। ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনীতি সচল হতে শুরু করে। বাতিল হওয়া ক্রয়াদেশ প্রত্যাহারের পাশাপাশি আসতে থাকে নতুন পণ্যের অর্ডার। এসব বিবেচনায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে লকডাউন জারি হলেও চলছে সচল রাখা হয়েছে শিল্পকারখানা। এ কারণে রফতানি বাড়ছে। সামনে রফতানি বাজার আরও সম্ভাবনা দেখছেন রফতানিকারকরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার মধ্যেও আমদের রফতানি বেড়েছে এটাকে আমি ভালো বলবো। বিশেষ করে অর্থবছরের শেষের দিকে আমাদের রফতানি বেশি হয়েছে। তবে আমরা এখনও কোভিডের পূর্বে আমাদের যে অবস্থা ছিল সেখানে যেতে পারিনি। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি।ৎ

শিগগিরই আগের অবস্থায় পোশাক রফতানি ফিরে যাবে প্রত্যাশা করে পোশাক শিল্প কারখানার মালিকদের এ নেতা বলেন, সরকারের সহযোগিতা ও আমাদের নানামুখী উদ্যোগের কারণে ইতোমধ্যে বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পেরেছি। ওয়াল্ট ডিজনির মতো প্রতিষ্ঠান আমাদের এখানে ফিরে আসছে। আমাদের আশা এখন থেকে রফতানি বাড়বে। অক্টোবরের মধ্যে কোভিড আসার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবো। এখন যদি আমরা করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি, আর নৌ, স্থল ও বিমানবন্দরে যে সব বাধা সৃষ্টি হয় তা দূর হলে আগামীতে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবো।

দেশের রফতানির আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। করোনার কারণে গত মার্চ থেকে এ খাতের রফতানি কমতে শুরু করে; এপ্রিলে পোশাক রফতানিতে ভয়াবহ ধস নামে। মে মাসেরও তা অব্যাহত থাকে। তবে গত বছরের জুন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। এরপর থেকেই পোশাক রফতানির ধারাবাহিক বাড়ছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের নিটওয়্যার ওভেনসহ সব মিলিয়ে তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলোদেশ তিন হাজার ১৪৫ কোটি ডলার আয় করে। যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের এ খাতে রফতানি আয়ের অংক ছিল দুই হাজার ৭৯৪ কোটি ৯১ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের তৈরি পোশাক আয় বাড়লের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ পিছিয়ে ছিল।

গত অর্থবছরে নিটওয়্যার পণ্য রফতানি করে এক হাজার ৩৯০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ওভেন পণ্যের রফতানি থেকে আয় হয়েছে এক হাজার ৪০৪ কোটি ডলার।

গেল অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বেড়েছে।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং তার আগের অর্থবছরের থেকে প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি আয় হয়েছিল ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।

আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যে রফতানি করে আয় হয়েছে ১১ কোটি ৬১ লাখ ডলার; যা ক্ষ্যমাত্রার তুলানায় দশমিক ৪৭ শতাংশ কম। তবে তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরে প্লাস্টিক জাত পণ্য রফতানি ১১ কোটি ৫২ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এ আয় ৬ দশমকি ২৮ শতাংশ কম। তবে গত অর্থবছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্যমতে, গেল অর্থবছরের কৃষিপণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০৭ কোটি ডলার; এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১০২ কোটি ৮১ লাখ ডলার। যা ক্ষ্যমাত্রার তুলানায় দশমিক ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ কম।  তবে আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ২৭ শতাংশ আয় বেশি।

এদিকে একক মাস হিসেবে অগের অর্থবছরের শেষে মাস জুনে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেম আয় করেছে ৩৫৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। যা গত বছরের জুনে চেয়ে ৩১ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

এসআই/এসএম

Link copied