সজীব গ্রুপের সম্পদের বিমা আছে, শ্রমিকদের নেই

Dhaka Post Desk

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১১ জুলাই ২০২১, ০৭:১৭ পিএম


সজীব গ্রুপের সম্পদের বিমা আছে, শ্রমিকদের নেই

হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজসহ সজীব গ্রুপের সব কারখানার সম্পদের বিমা থাকলেও শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য কোনো বিমা করেননি গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম। অথচ তিনি নিজেই তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স নামে একটি বিমা কোম্পানির পরিচালক। শুধু তাই নয়, সজিব গ্রুপে শ্রমিকদের জন্য নেই কোনো কল্যাণ তহবিলও।

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের কর্মকর্তা নিসার উদ্দিন। তিনি সজীব গ্রুপের কারখানা পরিদর্শনের দায়িত্বে রয়েছেন। তার দায়িত্ব হলো, কোম্পানিগুলো শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক গ্রুপ বিমা করেছে কি না এবং শ্রমিকদের জন্য কোনো কল্যাণ ফান্ড আছে কি না তা দেখভাল করা। নিসার উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত হাসেম ফুডসের ওই কারখানার কোনো গ্রুপ বিমা আছে বলে তথ্য পাইনি।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুনেছি তাদের কারখানার সম্পদের বিমা আছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুসারে শ্রমিকদের জন্য গ্রুপ বিমা এবং কল্যাণ তহবিলের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।

তিনি বলেন, নিয়ম অনুসারে কারখানায় শ্রমিকদের কল্যাণে বিমা এবং কল্যাণ ফান্ড বাধ্যতামূলক, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কিছুই ছিল না। এজন্য আমরা কারখানাটির বিরুদ্ধে এরইমধ্যে মামলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তার মধ্যেই সেখানে অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

কোম্পানির তথ্য মতে, ব্যবসায়ী আবুল হাসেম পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক। কিন্তু তিনি তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ও সজীব গ্রুপের কোনো কর্মীর বিমা করেননি। এ বিষয়ে তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সজীব গ্রুপের কোনো বিমা আমাদের কোম্পানিতে নেই।

সজীব গ্রুপের ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এমদাদুল হক এবং দারোয়ান সামসুজ্জামান বলেন, আমাদের কোনো কল্যাণ তহবিল নেই। আর গ্রুপ বিমা আছে কি না তা আমরা জানি না। সজীব গ্রুপের বিভিন্ন কারখানায় প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করে। এর মধ্যে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক ছিল, যার বেশির ভাগই শিশু। তবে করোনার কারণে গত সপ্তাহে এক থেকে দেড়শ শ্রমিক কাজ করছিল।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে ৫২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হন শতাধিক শ্রমিক।  

আবুল হাসেম নব্বইয়ের দশকে ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৬ সালের পর থেকে নিত্যনতুন পণ্যের নাম যুক্ত হতে থাকে তার ব্যবসায়। আমদানির পাশাপাশি সেজান জুসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের উৎপাদক হয়ে ওঠেন তিনি। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণেই হঠাৎ করে ফুলেফেঁপে ওঠে আবুল হাসেমের ব্যবসা। 

এক দশক আগে সজীব গ্রুপের ব্যাংক-ঋণের আকার ছিল ৫০০ কোটি টাকারও কম। কিন্তু এখন গ্রুপটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায়। দেশের অন্তত এক ডজন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছে শিল্প গ্রুপটি

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাসে সজীব গ্রুপের ১১টি কোম্পানির নামে ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৯৩ কোটি টাকা ঋণ ছিল হাসেম ফুডস লিমিটেডের নামে। 

এমআই/জেডএস/জেএস

টাইমলাইন

Link copied