ঈদের আগে লবণে সিন্ডিকেট, বস্তায় দাম বাড়ল ১৫০ টাকা   

Md Shofiqul Islam

১২ জুলাই ২০২১, ১০:৩৯ এএম


ঈদের আগে লবণে সিন্ডিকেট, বস্তায় দাম বাড়ল ১৫০ টাকা   

• দেশে লবণের পর্যাপ্ত মজুদ আছে : বিসিক
• ৫৫০ টাকার লবণের বস্তা এখন ৭০০ টাকা 
• যারা দাম বাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বেড়েছে পশুর চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপাদান লবণের দাম। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে প্রতি বস্তা লবণ বিক্রি হতো ৫৫০ টাকায়, কয়েক দফা বেড়ে এখন ওই বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবারই সংকটের কথা বলে একটি অসাধু চক্র কোরবানির আগে লবণের দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও তারাই দাম বাড়াচ্ছে। পাইকার ও আড়ৎদারদের দাবি সরবরাহের ঘাটতির কারণে দাম সামান্য বেড়েছে।  

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে চাহিদার তুলনায় দেশে লবণের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সিন্ডিকেট করে যারা দাম বাড়াবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হচ্ছে। 

কাঁচাচামড়া সংরক্ষণের সঙ্গে জড়িত পোস্তার ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির আগে লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় চামড়া সংরক্ষণের খরচ বাড়বে। আবার অনেকে ব্যয় কমাতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় কম লবণ ব্যবহার করবে। এতে করে চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।

এ বিষয়ে পুরান ঢাকার পোস্তার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হাজি টিপু সুলতান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সারা বছরে যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়, তার ৫০ শতাংশই আসে কোরবানিতে। প্রতি বছর দেখা যায়, কোরবানি সামনে রেখে চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপাদান লবণের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। এবারও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লবণের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আগে যে লবণের বস্তা ছিল ৫৫০ টাকা, এখন তা কিনতে হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়। এ বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই।’ 

পুরান ঢাকার লালবাগে লবণের খুচরা ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, কোরবানির পশু চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত আয়োডিনবিহীন মোটা লবণের প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি) এখন ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করছি, যা ১০ থেকে ১৫ দিন আগে ছিল ৫৫০ টাকা। পাইকারি ও আড়ৎদাররা দাম বেশি নিচ্ছে তাই আমাদের বাধ্য হয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে তিনি জানান। এ লবণ গবাদিপশুকে খাওয়ানোর ও ডাইং কারখানায়ও ব্যবহৃত হয়।

Dhaka Post

লবণের দাম বাড়ার বিষয়ে পূবালী সল্টের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি পরিতোষ কান্তি সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাষীরা ক্রুড লবণের (মোটা লবণের কাঁচামাল) দাম বাড়িয়েছে। এছাড়া সরবরাহ কম ছিল। এ কারণে কোরবানির পশু চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত মোটা লবণের দাম প্রতি কেজিতে দেড় থেকে দুই টাকা বেড়েছে। এক বস্তায় ৭৫ কেজি থাকে অর্থাৎ প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা। 

লবণের পর্যাপ্ত মজুদ আছে বলে দাবি করছে সরকার। তাহলে কেন দাম বাড়ছে? জানতে চাইলে লবণ মিল মালিকের সাবেক এ নেতা বলেন, যদি মজুদ পর্যাপ্তই থাকতো তাহলে দাম কেন বাড়ে। সরকারের কাছে যে মজুদের তথ্য আছে তা সঠিক নয়। তাদের তথ্য সঠিক হলে সংকটের কারণে বাজারে দাম বাড়তো না।

অসাধু চক্র সিন্ডিকেট করে কোরবানির আগে লবণের দাম বাড়াচ্ছে জানিয়ে বিসিকের চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি অসাধু চক্র বেশি মুনাফার লোভে কোরবানির আগে দাম বাড়াচ্ছে। যার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কারণ দেশে এখন চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত লবণ মজুদ আছে। আমরা মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন দাম বাড়বে না। তারপরও যারা দাম বাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি লবণ মৌসুমে লবণ মাঠে ১৬ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড লবণ উৎপাদন হয়েছে। চলতি লবণ মৌসুমে নতুন লবণ আসার আগ পর্যন্ত পুরাতন লবণের মজুদ ছিল তিন লাখ ৪৮ হাজার মে. টন। সব মিলিয়ে মোট লবণের পরিমাণ ১৯ লাখ  ৯৯ হাজার মে. টন। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মাঠ ও মিল পর্যায়ে লবণের মোট মজুদ ছিল ১১ লাখ ৪৫ কোটি মে. টন (লবণ মাঠে ৯ লাখ ৬০ হাজার মে. টন এবং মিলে লবণ ১ লাখ ৮৫ হাজার মে.টন)। এছাড়াও, দেশের বিভিন্ন জেলায়, উপজেলায় অবস্থিত ডিলার, পাইকারি, খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ আছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী ঈদুল আজহায় সম্ভাব্য কোরবানি যোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ। এর মধ্যে গরু ও মহিষ ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার এবং ছাগল ও ভেড়া ৭২ লাখ ৫৬ হাজার। কোরবানি যোগ্য পশুর সংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিটি গরু-মহিষের চামড়া সংরক্ষণে ১০ কেজি এবং ছাগল ও ভেড়ার চামড়া সংরক্ষণে ৫ কেজি লবণের প্রয়োজন হয়; যার পরিমাণ ৮১ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন। ঈদুল আজহায় দেশব্যাপী কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কম-বেশি ১ লাখ মেট্রিক টন লবণের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে। এ হিসাবে বর্তমানে মজুদ করা লবণ দিয়েই আসন্ন ঈদে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণসহ ভোজ্য লবণের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

এসআই/এনএফ 

Link copied