করোনা সহনশীল ১২০০ গ্রাম
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মাত্রা কমিয়ে ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রযুক্তিগত নির্দেশিকা অনুসরণ করে বেশকিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে করোনা সহনশীল ১২০০ গ্রাম।
দি হাঙ্গার প্রজেক্টের আওতায় ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে এসব গ্রামকে করোনাভাইরাস সহনশীল গ্রাম (সিআরভি) গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। রোববার (১ আগস্ট) দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. বদিউল আলম মজুমদার এক ভার্চুয়াল সংলাপে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর পক্ষ থেকে ‘করোনা মোকাবিলায় স্থানীয় জনসম্পৃক্ত উদ্যোগ’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল সংলাপটির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। ইতোমধ্যে করোনার ডেল্টা (ভারতীয়) রূপটি মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমণের মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে সরকার। এর মূল লক্ষ্য চলমান সংক্রমণের শৃঙ্খলকে ভেঙে ফেলা। এই শৃঙ্খলকে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যকরভাবে ভেঙে ফেলা সম্ভব। যেমন- মানুষের আচরণের পরিবর্তনসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা; সংক্রমিত রোগীদের বিচ্ছিন্ন করা; সংক্রমিত হওয়ার সন্দেহ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের পৃথক করার ব্যবস্থা করা এবং টিকার আওতা বাড়ানো। প্রকৃতপক্ষে, করোনা মোকাবিলায় এগুলোই বর্তমানে প্রকৃত উপায়। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট গতবছরের এপ্রিল মাস থেকে প্রায় এক হাজার ২০০ গ্রামকে করোনাভাইরাস সহনশীল গ্রাম (সিআরভি) হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রযুক্তিগত নির্দেশিকা অনুসরণ করে এই মডেল গ্রামগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা পরিচালিত এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে আশাব্যঞ্জক উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
করোনাভাইরাস সহনশীল গড়ে তোলার প্রক্রিয়া
প্রতিবেদনে স্বেচ্ছাব্রতী নির্ভর কমিউনিটি গড়ে তুলে চারটি ধাপে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে। প্রথম ধাপে করোনার ঝুঁকি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে কমিউনিটি মোবিলাইজেশন, ঘোষণা প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।
এরপর দ্বিতীয় ধাপে সময়মতো ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে গুজব ও অপতথ্যের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো। পাশাপাশি মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া ও পরস্পর থেকে দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা।
তৃতীয় ধাপে রয়েছে করোনা প্রতিরোধ ও রোগী ব্যবস্থাপনা- এই ধাপে রোগী চিহ্নিতকরণ ও স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নিশ্চিত করা। অন্যদিকে চিহ্নিত করার পর কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে সহায়তা ও রোগীকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা। এর পাশাপাশি করোনা আক্রান্তদের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো। একই সঙ্গে করোনা পরীক্ষা কিংবা স্বাস্থ্যসেবা পেতে ও টিকা নিবন্ধনে সহায়তা করা।
চতুর্থ ধাপে রয়েছে অর্থনৈতিক প্রভাব নিরসন। এ ধাপের আওতায় গ্রামে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও দরিদ্র পরিবার চিহ্নিত করা এবং তালিকা প্রণয়ন করে সামাজিক নিরাপত্তা স্কিমগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কাজ করা। এর পাশাপাশি কমিউনিটি ফিল্যানথ্রেপির মাধ্যমে দরিদ্রদের সহায়তা দেওয়া ও কৃষকদের উৎপাদন বাড়ানোতে সহায়তা করা।
কর্ম-এলাকা হিসেবে দেশের ২১ জেলার ৩৭ উপজেলার আওতায় ১২৯ ইউনিয়নের এক হাজার ১৬১ গ্রামকে নির্বাচন করা হয়। এরপর সেখানে এক লাখ ৫১ হাজার ৪৭৬ প্রশিক্ষিত উজ্জীবক, ৯ হাজার ৩৯৫ জন প্রশিক্ষিত নারীনেত্রী, ৪৭ হাজার ইয়ুথ লিডার, এক হাজার ১৬১টি গ্রাম উন্নয়ন দল, এক হাজার ৩৭১ ইয়ুথ ইউনিটিস, এক হাজার ১১১টি সেলফ-হেল্প দল ও ২৯ হাজার ৮৬৩ সদস্য নিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।
সংলাপে যুক্ত ছিলেন- সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান প্রমুখ।
আরএম/এসএসএইচ