অনুৎপাদনশীল খাতে যাচ্ছে প্রণোদনার ঋণ, মনিটরিংয়ের নির্দেশ

করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনার ঋণ ঘোষণা করে। কিন্তু এ ঋণ যথাযথ খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে না। ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে দিচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয় বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই প্যাকেজের ঋণের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে নিয়মিত মনিটরিং করার নির্দেশ দিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণকারী এ সংস্থাটি।
সোমবার (২ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ দেশের কার্যরত সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রদত্ত ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ প্রসঙ্গে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়েছে, লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ যথাযথ খাতে ব্যবহৃত না হয়ে কিছু ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রণোদনা ঋণ দিয়ে ঋণগ্রহীতার বিদ্যমান অন্য কোনো ঋণের দায় সমন্বয় করছে। প্যাকেজের নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালন করছে না। এতে করে প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে, যা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়- বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এমন পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ কার্যকর বাস্তবায়ন ও ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজন নিয়মিত মনিটরিং করা। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রদত্ত ঋণ যাতে অনুৎপাদনশীল খাতে না যায় সেজন্য ঋণের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের মাধ্যমে যাচাইপূর্বক নিশ্চিত হওয়ার জন্যও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ভর্তুকির সুদে প্রণোদনার ঋণ দিয়েছে সরকার। ব্যাংকগুলো সুদ ভর্তুকির টাকা ইতোমধ্যে বিতরণ করেছে। এখন আসলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ঋণ পেয়েছেন কি না বা ঋণের টাকা কোথায় ব্যবহার হয়েছে, বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য এ ঋণ দেওয়া হলেও তা অন্য খাতে ব্যবহার হচ্ছে। অনেকে ঋণ নিয়ে পুরোনো ঋণ পরিশোধ করছে। কেউ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে। আবার কেউ কেউ নতুন কারখানা কিনেছেন।
এদিকে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের চলতি মূলধন জোগান দেওয়ার জন্য চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। এর মধ্যে সাড়ে ৪ শতাংশ দেবেন গ্রাহক। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।
সবমিলিয়ে গত বছর ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙা করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এর আগে গত ২৫ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সবগুলো ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে প্রণোদনা ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে যাতে ব্যবহার না হয় সে বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে বলা হয় ব্যাংকগুলোকে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও প্রণোদনার ঋণ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান।
এসআই/জেডএস