সরকারের ভাতা বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছে ‘নগদ’

কিছুদিন আগেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ভাতাভোগীদের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। ভাতার টাকা তুলতে গিয়ে পোহাতে হতো নানান ধরনের দুর্ভোগ। ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট, ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যসহ আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতেন ভাতাভোগীরা। এখন আর কাউকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না, মুহূর্তেই টাকা পাচ্ছেন ‘নগদ’-এর মাধ্যমে।
সম্প্রতি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় সরেজমিনে ভাতাভোগীদের সঙ্গে কথা হয়। উপজেলার বাসিন্দা মর্জিনা বেগম (৬২) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিধবা ভাতা পেয়ে আসছেন। ভাতার সেই টাকা দিয়ে তিনি ওষুধ কেনেন। আগে ভাতার টাকা তুলতে উপজেলা সমাজসেবা অফিস ও ব্যাংকে যেতে হতো। এতে তার ভোগান্তির শেষ ছিল না। বর্তমানে সরকার ‘নগদ’-এর মাধ্যমে এই ভাতা দেওয়ার করণে তার অনেক সুবিধা হয়েছে। প্রয়োজনে যেকোনো সময় টাকা তুলতে পারেন তিনি।
একই জেলার করটিয়া ইউনিয়ন বাজারে কথা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব মো. তৌফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন তালিকায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা ভোগ করছেন। বাজারে এসেছেন তার ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে। তিনি বলেন, আগে ব্যাংকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। অনেক সময় টাকা তোলার জন্য মানুষকে টাকা দিতে হতো। এখন ‘নগদ’-এ অ্যাকাউন্ট খোলার পর সেই কষ্ট নেই। যখন মন চায় তখন টাকা উঠাতে পারেন। এর ফলে তার যাতায়াতের কষ্ট ও খরচ বেঁচে গেছে।
টাঙ্গাইল জেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুধু টাঙ্গাইলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার ৮৯৩ জন। যার পুরোটাই বিতরণ করা হয় ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর মাধ্যমে।
এ বিষয়ে দেলদুয়ার উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোবারক হোসেন বলেন, ভাতা বিতরণে তাদের সফলতার হার ৯৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তিনি বলেন, ‘আগে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ভাতা বিতরণ করা হতো। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীরা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে দুর্ভোগ পোহাতেন। বিশেষ করে ঈদের আগে এই মানুষগুলো অনেক ভোগান্তির শিকার হতেন। তাছাড়া কর্মব্যস্ততার কারণে ব্যাংকগুলো সরকারি ভাতা তিন মাস অন্তর অন্তর দিতে চাইত। কিন্তু বর্তমানে সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণে মানুষ সহজেই তাদের ভাতা পেয়ে যাচ্ছেন। ভাতাভোগীরা তাদের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যখন খুশি টাকা উঠাতে পারছেন।’
‘নগদ’-এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণের ফলে ভোগান্তি কমেছে ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে। সরকারি সব প্রকার ভাতার এখন প্রায় সিংহ ভাগ বিতরণ হচ্ছে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা ডিজিটালাইজেশনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে এই এমএফএস প্রতিষ্ঠানটি।
‘নগদ’-এর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় আট কোটি সরকারি আর্থিক সহায়তা ২ কোটি ৫০ লাখ সুবিধাভোগীর মধ্যে বিতরণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। স্বচ্ছতার সঙ্গে ‘নগদ’ বিদ্যমান সরকারি সুরক্ষা ভাতা বিতরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতেও সহায়তা করেছে।
তাছাড়া সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এমঅফএস অপারেটরদের মাধ্যমে ৫ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। যেখানে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বা সুবিধাবঞ্চিতদের ভাতা, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ভাতাসহ মোট ৭৫ শতাংশ ভাতা স্বচ্ছতার সঙ্গে বিতরণ করেছে ‘নগদ’।
‘নগদ’-এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ভাতা বিতরণে সরকারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। ‘নগদ’-এর এই কর্মসূচি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বিতরণ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও স্বচ্ছ করেছে ‘নগদ’। ভাতা বিতরণ করতে গিয়ে ভুয়া নম্বর শনাক্ত করে এমএফএস অপারেটরগুলো সরকারি কোষাগারে ৩৮৫ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে, যা এর আগে কখনো ঘটেনি।’
সরকার করোনা মহামারির শুরু থেকেই দেশবাসীকে বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। এমএফএস প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য সরকারি সহায়তা হিসাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা স্বচ্ছতার সঙ্গে বিতরণ করে উপকারভোগীদের মধ্যে স্বস্তি নিয়ে এসেছে।
জেডএস