বাজারে নেই মনিটরিং, বাড়তি মাছ-মাংস-ডিমের দাম

Dhaka Post Desk

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ জানুয়ারি ২০২১, ০৩:৩০ পিএম


বাজারে নেই মনিটরিং, বাড়তি মাছ-মাংস-ডিমের দাম

বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ক্রেতারও মোটামুটি সাধ্যের মধ্যে ক্রয় করতে পারছে সবকিছু। কিন্তু গত সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়েছে মানুষের আমিষের চাহিদা মেটানো ডিম। একইসঙ্গে মাছ-মাংসের বাজারও কিছুটা ঊর্ধ্বভাব দেখা গেছে।

সবজি বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ বাড়ায় গত দুই সপ্তাহ ধরে শীতকালীন সবজির দাম কমছে। এ সপ্তাহেও বাজারে পর্যাপ্ত সবজি থাকায় দাম স্থিতিশীল। তবে নিদিষ্ট কয়েকটি সবজির ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছে। কারণ হিসেবে তাদের দাবি, ঘন কুয়াশার কারণে গ্রাম থেকে সবজির গাড়ি এসে ফেরিঘাটে আটকে আছে। তাই যেসব সবজি অল্প সময়ে পচনশীল, সেইগুলোর ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা, ফকিরাপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে— আলু প্রতি কেজি ২০ টাকা, শশা-খিরা ৩০, বেগুন ৩০-৩২, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, টমেটো ২৫-৩০, কাঁচা পেঁপে ২০ থেকে ২২, বরবটি ৫০ থেকে ৫৫, লতি ৪০ থেকে ৪২, ফুলকপি প্রতি পিস ২০ থেকে ২২, মিষ্টি কুমড়া কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পাতাকপি ২০-২২ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৩৫ ধরে বিক্রি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কাঁচামরিচ এবং শিমের দাম কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়েছে।

সেগুনবাগিছা কাঁচা বাজারের সজবি বিক্রেতা শরিফ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ সপ্তাহে শীতকালীন সবজির দাম বাড়েওনি আবার কমেও নাই। দাম একই রকম আছে। তবে, ঘন কুয়াশার কারণে ফেরিঘাটে মালের গাড়ি আটকে থাকায় অল্প সময়ে পচনশীল সবজির ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি ১ থেকে ২টাকা বেড়েছে। এছাড়া সব কিছু আগের মতই আছে।

এদিকে বাজার করতে আসা আজিজুল হক বলেন, কিছু-কিছু সমজির দাম এখনও কম আছে। তবে মরিচ, পেঁয়াজ, বেগুন এগুলোর দামতো আর কমে নাই। তাছাড়া শীতকালীন সবজির বাজার হিসেবে যে দাম থাকা দরকার, তার চাইতে বেশি দামে এ বছর সবজি বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় একশ ব্রয়লার মুরগির ডিমে ২০ টাকার মত পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে, সেটা খুচরা বাজারে গিয়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়ছে। আর দেশি হাঁসের ডিম হালিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫ টাকার মত। ডিমের পাশাপাশি গরুর মাংসও গত মাসের চাইতে এখন কেজি প্রতি ২০ টাকা দাম বেড়েছে। তবে ব্রয়লার ও কর্ক মুরগির দাম আগের মতই আছে।  

ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে ৬০০ টাকায় একশত ডিম কেনা গেলেও এখন সেটা ৬২০ টাকা দিয়ে আনতে হচ্ছে তাদের। আর সেটা খুচরা বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকা পর্যন্ত। আর দেশি হাঁসের এক হালি ডিম গত ২ দিন আগেও ছিল ৫০ টাকা, সেটা এখন বেড়ে ৫৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।  

ডিম ব্যবসায়ী রফিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিমের হালি প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা দাম বেড়েছে। আর একশতে ২০ টাকার মতো দাম বেড়েছে। বাজারে মালের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে।

মাংস ব্যবসায়ী মো. আতিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে গরুর মাংসের দাম একটু বেশি। আগে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন সেই দামে আমাদের কিনতে হচ্ছে, বিক্রি করতে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায়। প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বেড়েছে। তার দাবি, গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মাংসও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

ডিম ও মাংসের মতো গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, ঘন কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া ও অন্যান্য ফেরিঘাটে গাড়ি আটকে থাকে। এ কারণে বাজারে মাছের সরবরাহ কম, তাই দাম বেড়েছে।

ফকিরাপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে,  এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, আর ৫শ গ্রামেরটা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, রুই কেজি ২৩৫ থেকে ২৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, বড় কার্প ১৮০ থেকে ১৯৫ টাকা। আর কই ৩০০ থেকে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি শিং এবং মাগুর মাছ ৬২০ থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী শরিফুর ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত সপ্তাহের চাইতে মাছের কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। তার দাবি, কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে মাছের গাড়ি আটকে থাকে, যার কারণে বাজারে মাছের সরবরাহ ঠিক থাকে না।

মাছ কিনতে আসা লতিফুর রহমান বলেন, কি হবে এসব রিপোর্ট করে। বাজার কি কারও নিয়ন্ত্রণে আছে। যে যার মতো দাম বাড়াচ্ছে। মনে চাইলে তারাই আবার দাম কমিয়ে দিচ্ছে। সব কিছুর বাজারই ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে।  

তিনি আরও বলেন, সাগরের বাইলা মাছের কেজি ৭শ টাকা। এটা ভাবা যায় বলেন?। কিন্তু কি করবো খেতে হচ্ছে। টেংরা মাছ নিয়েছি ৫৫০ টাকা করে। এটা গত তিন দিন আগেও নিয়েছি ৫০০ টাকা করে। দুই দিনের ব্যবধানে ৫০ টাকা বেড়ে গেছে। আপনারও এসব নিয়ে লেখেন, কিন্তু সরকার তো কোনো ব্যবস্থা নেয় না। বাজারের বাইরে সিটি করপোরেশনে যে বাজার তালিকা দিয়েছে তার সঙ্গে বাজারের বর্তমান মূল্যের কোনো মিল নেই।

ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনের বাজারের তালিকা যাচাই করেও কোনো মিল পাওয়া যায়নি। সিটি করপোরেশনের বাজারের তালিকা বরং কিছু কিছু সবজির দাম বাজারের চাইতে বেশি দামে উল্লেখ করা আছে। সিটি করপোরেশনের তালিকা বেগুনের দাম উল্লেখ করা হয়েছে ৬৫ থেকে ৭৮ টাকা, সেটা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, ব্রয়লার মুরগি দাম দেওয়া আছে ১৬৯ থেকে ১৭৫ টাকা, সেটা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়।  

চালের দাম কমেছে
চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারের এখন চালের দাম কম। মিনিকেট থেকে শুরু করে মোটা চালে কেজি প্রতি ৫ টাকার মতো দাম কমেছে। মিনিকেট চাল কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, নাজির চাল ৬০ থেকে ৬৫ এবং মোটা চাল কেজি ৪০ থেকে ৪২ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

শান্তিনগর বাজারের চাল ব্যবসায়ী আরিফ বলেন, কেজিপ্রতি ৫ টাকা মতো কমেছে প্রায় সব ধরনের চালে। যেমন মিনিকেট আগে ৬০ টাকা বিক্রি হতো, এখন সেটা আমরা ৫৫ টাকায় বিক্রি করি। আর মোটা চালে প্রকারভেদে ভিন্নতা রয়েছে।

এএইচআর/এসএম

Link copied