মাছ-মাংস-তেলে অস্বস্তি

মাছের দামে অস্বস্তি - ছবি : ঢাকা পোস্ট
শীতকালীন ঢাকার সবজি বাজারে স্বস্তি বিরাজ করলেও মাছ, মাংস আর তেলে বিরাজ করছে অস্বস্তি। তেলের দাম কমেনি। বেড়েছে মাছ আর মুরগির দাম। গুটি স্বর্ণা চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা কমলেও অন্য চালের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
শুক্রবার( ২৯ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর উত্তর পীরেরবাগ ছাপড়া মসজিদ কাঁচাবাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বেড়েছে রুই-কাতলা মাছের দাম। প্রতি কেজি মাঝারি আকারের রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। তবে ২ কেজিরগুলো আড়াইশ টাকা, ৩ কেজির বেশি ওজনের রুই-কাতলা ২৮০ থেকে সাড়ে তিনশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মৃগেল ১৮০-২২০ টাকা, ছোট তেলাপিয়া ১২০ ও বড় ১৮০-২০০ টাকা, বড় সিলভার কার্প মাছের দাম ১৬০-১৯০ টাকা। আইড় ৪০০-৬০০ টাকা, মেনি মাছ ৩০০-৫০০ টাকা, বেলে মাছ প্রকার ভেদে ৩০০-৫০০ টাকা, বাইন মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৬০০-৬৫০ টাকা, সরপুঁটি ১৫০-২৫০ টাকা, পোয়া ৩০০-৪৫০ টাকা, মলা ৩২০-৩০০ টাকা, পাবদা ৩৫০-৪০০ টাকা, টাকি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, শোল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, বোয়াল ৪০০-৬০০ টাকা, শিং ৩৮০-৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৪০০-৫০০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৬০-২০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০-২৮০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ছোট সাইজের ইলিশ ৬০০ টাকা, সর্বোচ্চ ৯০০ গ্রাম ইলিশ বিক্রি হচ্ছে পিস ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকায়।
মাছ বিক্রেতা তরিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে, শীতকালে মাছ সংরক্ষণ সুবিধাজনক হলেও মাছের সরবরাহ কম। গত ১৫ দিন আগেও রুই-কাতলা মাছ মিলতো সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা থেকে আড়াইশ টাকায়। এখন কেজিতে ৩০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
তেলের দাম কমেনি। বসুন্ধরা ৫ লিটার ৫৮৫ টাকা, রূপচাঁদা ৬০০-৬১০ টাকা, ফ্রেশ ৫৮০ টাকা ও তীর ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খোলা তেলে লিটারে কমেছে ৫ টাকা। ১০৫ থেকে ১১০ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজারে দেখা যায়, হাইব্রিড টমেটোর দাম কেজি ২০ টাকা, যা ২০ দিন আগেও মিলতো না ৬০ টাকার নিচে। দেশি কাঁচা ও পাকা টমেটো টাকা সর্বোচ্চ ৩০ টাকায় মিলছে। ৮০/৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে মটরশুঁটি।
ওজন ও আকার ভেদে ফুলকপির দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা। পাতাকপি ১০ টাকা থেকে ২৫ টাকা, শসা হাইব্রিড ৩০ টাকা, দেশি শসা কেজি ৪০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা। বেগুন ২০ থেকে ৩৫ টাকা, শিম ২৫-৩০ টাকা। করলার দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা। ৪০ টাকা কেজির করলা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
তবে কমেছে লাউয়ের দাম। গত সপ্তাহেও লাউয়ের পিস ছিল ৫০ টাকা। আজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। কাঁচকলার হালি ২৫-৩০ টাকা। ধনেপাতার কেজি মিলছে ৮০ টাকায়, ১০০ গ্রাম ধনে পাতা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। পেঁপের কেজি ৩০ টাকা, মুলা ২০ টাকা।
আলুর বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। ১৫ দিন আগেও ৩০ টাকার নিচে মিলতো না এক কেজি আলু। এখন বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়।
অন্যদিকে মুড়িকাটা দেশি পেঁয়াজ মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ ৩০ টাকা, ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। মরিচের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আড়াইশ গ্রাম মরিচ ২০ টাকা।

রাজধানীর উত্তর পীরেরবাগ ছাপড়া মসজিদ কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সোহাগ হোসেন বলেন, তুলনামূলকভাবে অনেক কিছুর দাম কমেছে। দেশি টমেটো, ধনেপাতা ও মরিচ এখন ক্রেতার নাগালের মধ্যে। তবে ইন্ডিয়ান আদার দাম আগের মতোই ২২০ টাকা, যেখানে দেশি আদা ৯০-১০০ টাকায় মিলছে।
এ ব্যাপারে আদা বিক্রেতা মনির হোসেন জানান, দেশি আদাই বেশি বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় চাইনিজ ও ইন্ডিয়ান আদাটা কম বিক্রি হচ্ছে।
লেবু প্রতি হালি ২৫-২০ টাকা দরে বিক্রি করছে। প্রতি আঁটি লাল শাক, পালং শাক ১৫ টাকা, পুঁই শাক ও ডাটা শাক ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লাউ শাক বিক্রি হচ্ছে প্রতি আঁটি ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।
পাশেই কাদের গোশতো বিতান নামক দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা।

বেড়েছে পাকিস্তানি ককের দাম। ১৫ দিন আগেও ১৮০-২০০ টাকায় মিলতো পাকিস্তানি কক। আজ বিক্রি হতে দেখা যায় ২২০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি ১৬৫ টাকা। আর দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা কেজি দরে। একই দোকানে ডিম (লেয়ার) প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়, খুচরায় ৯০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ১৫০ টাকা।
রফিকুল হক নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে ডিমের দাম কম, ঠিক আছে। সবজিতে স্বস্তি পাচ্ছি। কিন্তু তেলের দাম তো বেড়েছে।বড় মাছের দাম কেজিতে বেশি দেখছি ৫০-৬০ টাকা। আর চালের দাম কমছেই না।
চাল বিক্রেতা হাজী মহিউদ্দিন জানান, রশিদ মিনিকেটের বস্তা তিন হাজার টাকা। একইভাবে পাইজাম চালের বস্তা ২৪০০ টাকা হয়েছে। কেজিতে গুটি স্বর্ণা চালের দাম ৩ টাকা কমেছে, বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়।
জেইউ/এইচকে