রেমিট্যান্সের গতি কমেছে

কিছুটা কমেছে অর্থনীতির সবচেয়ে ভালো সূচক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের গতি। নতুন বছরের প্রথম মাসে দেশে ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। যা সমাপ্ত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার কম। গত ডিসেম্বরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমট্যান্সের অংক ছিলো ২০৫ কোটি ডলার।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জানুয়ারিতে আসা রেমিট্যান্স গত ছয় মাসের সর্বনিম্ন। এছাড়া গত চার মাস ধরে ধারাবাহিক ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের উপরে থাকা রেমিট্যান্স প্রবাহ গেল মাসে কিছুটা কমে গেছে।
জানা গেছে, সরকারের নগদ প্রণোদনা কারণে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী মহামারিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তার কারণে জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সবমিলিয়ে সংকটের মধ্যেও দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। তবে মহামারী কারণে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে গেছে। তাই আগের রেমিট্যান্সের প্রবাহ সামনের দিনগুলোতে ধরে রাখা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা খাত সংশ্লিষ্টদের।
এর আগে বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। প্রবাসীরা দেশে ১০০ টাকা যার অ্যাকাউন্টে পাঠাচ্ছেন তিনি ১০০ টাকার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে ১০২ টাকা তুলতে পারছেন। পাঁচ হাজার ডলার অর্থাৎ পাঁচ লাখ টাকা আয় কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে রেমিট্যান্সের প্রণোদনা বাবদ তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত করে অনেক ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে আরও ১ শতাংশ বেশি প্রণোদনা দিচ্ছে। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে।
চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৪৯০ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১০৪ কোটি ডলার। সে হিসাবে সাত মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩০৫ কোটি ডলার। যা শতাংশের হিসাবে প্রায় ৩৪.৯৫।
বছরভিত্তিক রেমিট্যান্স
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সে আসে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার,২০১৮ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৫৫৫ কোটি ডলার, ২০১৭ সালে এসেছিল ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে এসেছিল ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার, ২০১৫ সালে আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ডলার, ২০১৪ সালে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৯২ কোটি ডলার।
অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড হয়। ওই সময় প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল। তারও আগে অর্থাৎ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। ওই সময় রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
এসআই/এমএইচএস