বহুমুখী ব্যবসায়িক অগ্রযাত্রায় নাভানা গ্রুপ

দেশের প্রতিটি শহরে বাড়ির গ্যারেজে গাড়ির যে ব্র্যান্ডটি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে তা হলো টয়োটা। জাপানি এই টয়োটা গাড়ির জনপ্রিয়তা সময়ের সঙ্গে একটুও মলিন হয়নি। বরং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও ব্র্যান্ডটি পরিবর্তিত ও আধুনিক রূপ লাভ করেছে। সেই সঙ্গে নাভানাও বাংলাদেশে টয়োটার একমাত্র পরিবেশক হিসেবে বছরের পর বছর ধরে সুনাম ধরে রেখেছে।
অতিপরিচিত টয়োটা ব্র্যান্ডের বাংলাদেশের একমাত্র পরিবেশক ও বাজারজাতকারক প্রতিষ্ঠান নাভানা গ্রুপ। ১৯৬৪ সাল থেকে টয়োটা-জাপানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক একচ্ছত্রভাবে বজায় রেখেছে স্বনামধন্য এই শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তবে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার ক্ষেত্র শুধু টয়োটাই নয়, নাভানা গ্রুপ মানে এমন একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান যার বিচরণ আজ আবাসন থেকে শুরু করে খাদ্যশিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করেছে।
বাংলাদেশের অটোমোবাইলস ও আবাসন শিল্পের অগ্রদূত জহুরুল ইসলামের হাত ধরে ইসলাম গ্রুপের শুভ সূচনা এবং তারই অনুপ্রেরণায় উত্তরাধিকার স্বরূপ পরবর্তীতে নাভানা গ্রুপের জন্মলাভ। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে তাদের মধ্যে অন্যতম নাভানা গ্রুপ
বাংলাদেশের অটোমোবাইলস ও আবাসন শিল্পের অগ্রদূত জহুরুল ইসলামের হাত ধরে ইসলাম গ্রুপের শুভ সূচনা এবং তারই অনুপ্রেরণায় উত্তরাধিকার স্বরূপ পরবর্তীতে নাভানা গ্রুপের জন্মলাভ। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে তাদের মধ্যে অন্যতম নাভানা গ্রুপ। টয়োটা গাড়ির বাজারজাতকরণ ও হিনো কমার্শিয়াল ভেহিক্যালসের ডিলারশিপ দিয়ে শুরু। এরপর বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ইসলাম গ্রুপ, যার একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নাভানার জন্ম।

বিশিষ্ট এই শিল্পপতির মৃত্যুর পর ১৯৯৬ সালে তারই ছোট ভাই শফিউল ইসলাম কামাল নাভানা ও হিনো কমার্শিয়াল ভেহিক্যালসের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ক্রমেই নাভানা গ্রুপকে নিয়ে যায় অনন্য পর্যায়ে। শফিউল ইসলাম কামালের নতুন নেতৃত্বে নাভানা থেকে জন্ম নেয় নাভানা এলপিজি গ্যাস, টয়োটা আফটার সেলস সার্ভিস, আবাসন, বিল্ডিং কন্সট্রাকশন, নাভানা ফুডসহ অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এভাবে বিভিন্ন খাতে ব্যবসা প্রসারের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় নাভানা গ্রুপ।
ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে নাভানা গ্রুপের সফল বিচরণ নিঃসন্দেহে অনন্য ও অনুকরণীয়। দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যাপক চাহিদা থাকায় নিরাপদ এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বাজারজাতকরণের মাধ্যমে এই খাতের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহকের চাহিদা মেটাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। এছাড়া আধুনিক আবাসন প্রকল্পের আওতায় কন্ডোমিনিয়ামের মতো আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করে চলেছে নাভানা রিয়েল এস্টেট। যেখানে রয়েছে সুইমিং পুল, বাচ্চাদের খেলার পার্কসহ প্রয়োজনীয় সব সুবিধা।

এ সম্পর্কে নাভানা গ্রুপের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা আরফাদুর রহমান বান্টি ঢাকা পোস্টকে বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য চাহিদার কথা মাথায় রেখে যেকোনো প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করে থাকি। শুধু সাময়িক সময়ের জন্য সফলতা নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য নয়। বরং দেশের আপামর জনগণের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে টেকশই উন্নয়নের পথ নির্ধারণই আমাদের উদ্দেশ্য।
নাভানার রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকুইপমেন্ট, সিএনজি, ব্যাটারি, জেনারেটর, নিরাপত্তা প্রদানকারী যন্ত্রাদিসহ আরও অনেক ব্যবসায়ী ইউনিট। এছাড়া রয়েছে নাভানা লজিস্টিকস, বিল্ডিং প্রোডাক্টসহ আবাসন ও বাণিজ্যিক শিল্পের সব পণ্য ও সেবা। নাভানা ফার্নিচারও দীর্ঘদিন ধরে উন্নতমানের ও আধুনিক আসবাবপত্র বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
তবে শুধু সোনালী দিনেরই সাক্ষী নয় নাভানা। ২০১৬ সালে যখন নাভানা গ্রুপের চেয়ারম্যান শফিউল ইসলাম কামাল অসুস্থ হয়ে পড়েন, এর সুযোগ নিয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত কিছু অসাধু কর্মকর্তা নাভানার দীর্ঘদিনের সুনাম ধ্বংস করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। এই গ্রুপের কষ্টার্জিত সম্মান বিনষ্ট করে কিছু মানুষ দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজ স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করে। কিন্তু বেশিদিন তাদের এই দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রম চলতে দেওয়া হয়নি। নাভানা গ্রুপকে পুনরায় ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া দ্রুতই হাতে নেন নাভানা গ্রুপের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমন ও ভাইস চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে নাভানা গ্রুপের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার শারমিন হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রুপের ভেতরেই কিছু অসাধু ব্যক্তির দুর্নীতির ফলে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হই। আমাদের স্থিতিশীলতা হয়ে যায় নড়বড়ে। তবে আমরা সেই অবস্থা থেকে উত্তোরণের ব্যবস্থাও করেছি। দুর্নীতিগ্রস্তদের আমরা চিহ্নিত করে অপসারণ করেছি।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নাভানা গ্রুপের সব ব্যবসায়িক খাতে আধুনিকায়নের ছোঁয়া দিতে ওয়াহেদ আজিজুর রহমানকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নতুন আঙ্গিকে নাভানার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার এই প্রক্রিয়ায় তার নেতৃত্বে কাজ করে চলেছেন একটি দক্ষ টিম, যারা বিভিন্ন সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত থেকে গ্রুপের সব ধরনের কার্যক্রম দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
সিইও ওয়াহেদ আজিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তিনি বলেন, ব্যবসার আধুনিকায়ন ও পরিবর্ধন, নতুন ব্যবসায়িক বিনিয়োগ, যুগোপযোগী প্রশাসনিক পরিকল্পনা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ইতোমধ্যে নাভানার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায় আরও উন্নতিসাধন এখন আমাদের প্রধান ও একমাত্র লক্ষ্য।

নাভানা গ্রুপের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম এবং প্রত্যেকের অবস্থান সুষ্ঠুভাবে কাঠামোবদ্ধকরণের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা ইশতিয়াক মাহমুদ বলেন, আগে যেভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কর্মী নিয়োগ হতো, সেই প্রক্রিয়ায় আমরা পরিবর্তন এনেছি। ব্যক্তিগত সম্পর্কের বদলে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি প্রত্যেকের কাজ কী এবং তা ঠিক মতো পরিচালিত হচ্ছে কি না, তার ওপর।
শুধু শিল্পের ক্ষেত্রে নয়, ব্যবসায় সফলতার পাশাপাশি নাভানার দাতব্য ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডগুলোও সমানভাবে উল্লেখযোগ্য। করোনার মতো মহামারির সময়ও নাভানা গ্রুপের হাল শক্ত হাতে ধরে রেখেছিলেন চেয়ারম্যান শফিউল ইসলাম কামাল। তাকে সহযোগিতা করে আসছেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমন ও ভাইস চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম।
করোনাকালে দেশের ৬৩টি জেলা হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও প্রয়োজনীয় মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহ করে নাভানা গ্রুপ। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের কথা মাথায় রেখে ১৫টি উপজেলা কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও স্থাপন করা হয়।

করোনাকালে দেশের ৬৩টি জেলা হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও প্রয়োজনীয় মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহ করে নাভানা গ্রুপ। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের কথা মাথায় রেখে ১৫টি উপজেলা কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও স্থাপন করা হয়
এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে গ্রুপের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয় প্রয়োজনীয় মেডিকেল সরঞ্জামাদি। দেশের প্রথম অস্থায়ী ফিল্ড হাসপাতাল ‘চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল’ স্থাপন করে নাভানা গ্রুপ। সেখানে টানা ১০ মাস করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (গুলশান বিভাগ) সঙ্গে ছয় মাস বিভিন্ন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের নিকট মাসিক বাজার পৌঁছানোর দায়িত্বও পালন করে নাভানা গ্রুপ।
গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানে উন্নত কর্মপদ্ধতি, কর্মসংস্কৃতি ও মানবসম্পদ উন্নয়নই নাভানার বিশেষ লক্ষ্য। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি সফল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। দেশ স্বাধীনের আগে থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নাভানা গ্রুপ দেশের বিভিন্ন শিল্প উন্নয়ন ও রাষ্ট্রীয় আর্থিক ব্যবস্থাপনায় যে অবদান রেখে চলেছে তা অনস্বীকার্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যেভাবে নাভানা গ্রুপ এর সুনাম ধরে রেখেছে, আগামীতেও সেটি অক্ষুণ্ন থাকবে— মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসআই/এমএআর/