পণ্যের দাম সহনীয় করতে কর কাঠামো পুনর্বিন্যাসের তাগিদ

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে দেশের কর কাঠামোকে সাময়িক সময়ের জন্য পুনর্বিন্যাস করার তাগিদ দিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তা না হলে আসন্ন রমজান মাসে ভোগান্তি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২১) বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ডিসিসিআই আয়োজিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির যোগ দেন। আলোচনায় ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের অর্থনীতির সার্বিক প্রেক্ষাপটের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে দেশের কর কাঠামোকে সাময়িক সময়ের জন্য পুনর্বিন্যাস করার দাবি জানান। তিনি বলেন, তা না হলে সামনের রমজান মাসে আরো ভোগান্তি বাড়বে। দেশের কৃষিখাতের উন্নয়নে কৃষিপণ্য প্যাকেজিং এবং লজেস্টিক ব্যবস্থাপনায় আরো মনোযোগী হওয়া দরকার। শিল্পখাতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে শিক্ষা ও শিল্পখাতের সমন্বয় আরো সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
তিনি এলডিসি উত্তোরণের পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ওষুধ শিল্পকে এখনই প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন। বলেন, টেকসই পণ্য হিসেবে পাট থেকে উৎপাদিত পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে এ ধরনের পণ্য রপ্তানি আরো বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের সঙ্গে এসএমই উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ সম্পৃক্ত থাকায় এখাতের প্রতি আরো যত্নবান হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
জসিম বলেন, দেশের লজিস্টিক খাতের উন্নয়নে ১২ বছরের জন্য একটি দীর্ঘময়োদী পরিকল্পনা দেওয়ার লক্ষ্যে এফবিসিসিআই কাজ করছে। যা শিগগিরই শেষ করে সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ নদীপথ ব্যবহার করা সম্ভব হলে, পণ্য পরিবহনের খরচ এক-তৃতীয়াংশ কমানো যেতে পারে এবং এলক্ষ্যে নদীপথের সংস্কারের জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এছাড়াও সিএমএসএমইদের জন্য ব্যাংকগুলোকে ঋণ সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ বাংকের নজরদারি আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন এবং এলডিসি উত্তোরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রসঙ্গে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী ভোগ্যপণ্যের সাপ্লাই চেইনের ওপর বেশি মাত্রায় চাপ পড়ায় আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ও কাঁচামাল আমদানিতে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়, স্থানীয় বাজারে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে আমদানিকারকদের ঋণ সহায়তা ও আমদানিকৃত পণ্যের উপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস করা হলে, সাধারণ জনগণ এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারে।
ওয়েবিনারের নির্ধারিত আলোচনায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম এবং ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় অংশগ্রহণ করেন।
এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সাভারের ট্যানার শিল্পে স্থাপিত সিইটিপিকে আন্তর্জাতিকমানের না হওয়ায় চামড়া খাতের উদ্যোক্তাদের বেশ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। হালকা প্রকৌশল এবং কৃষিখাতের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদিত পণ্যের ভ্যালু অ্যাড করা গেলে এখাতের রপ্তানি আরো বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের জন্য সর্বজন স্বীকৃত ক্রেডিট রেটিং নিশ্চিত করা সম্ভব হলে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নেগোশিয়নে আমাদের সক্ষমতা আরো বাড়বে।
গ্যাস, বিদ্যুৎ প্রভৃতি খাতে প্রস্তাবিত দাম বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং জনগণের জীবনযাত্রায় তা নেতিবাচক প্রভাব ফলবে। এ অবস্থায় ‘গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ এবং ‘এনার্জি সিকিউরিটি ফান্ড’-এর জমানো তহবিল ব্যবহারের প্রস্তাবও দেন তিনি।
আরএম/জেডএস