ভবন নির্মাণে সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন ভোগান্তি বাড়াবে

রাজধানীতে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন থেকেও অনুমোদন নিতে হলে গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়বে। তাই এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করার দাবি জানিয়েছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব আয়োজিত ‘ভবন নির্মাণে রাজউকের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন গ্রহণের বিধানের প্রতিবাদ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে’ এ কথা জানান আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব সভাপতি শামসুল আলামিন কাজল, সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ, সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সোহেল রানাসহ রিহ্যাব নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের সভাকক্ষে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত কার্যক্রমের পর্যালোচনা সভা সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত সভায় প্রস্তাব আকারে সিদ্ধান্ত হয়, অবকাঠামো নির্মাণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন নিতে হবে বলে জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিপত্র বা সরকারি আদেশ জারি না হলেও মন্ত্রীর উক্তি দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আবাসন ব্যবসায়ীরা বলেন, ভবন নির্মাণে অনুমোদন নিতে গিয়ে অনেক সময় মাসের পর মাস ফাইল আটকে থাকে রাজউকে। এবার সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন নিতে গেলে একই ভোগান্তি হবে দুই জায়গায়। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন গ্রাহক। বিনিয়োগে বাধার মুখে পড়বেন ব্যবসায়ী।
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজউক ৫০ বছরের বেশি সময় থেকে ঢাকায় ছোট-বড় সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের অনুমোদন দিচ্ছে এবং তদারকি সংস্থা হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ভালো বা মন্দ যাই হোক না কেন রাজউক ও তার জনবল এই কাজে একটি সক্ষমতা অর্জন করেছে। তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ৫০ বছরের অভিজ্ঞতালব্ধ সক্ষমতা অর্জনে সিটি করপোরেশন অদ্যাবধি নবীনতম বলে স্পষ্টত প্রতীয়মান। সিটি করপোরেশনের তো এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় জনবল নেই, কোনো কাঠামো নেই। ফলে ভোগান্তি বেড়ে যাবে আরও কয়েকগুণ।
তিনি বলেন, নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণে অনুমোদনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন পেলে তাতে দ্বৈত প্রশাসনের সৃষ্টি হবে। এই সিদ্ধান্ত আসলেই সাংঘর্ষিক ও অবাঞ্ছিত। আমরা ভোগান্তি কমাতে রিহ্যাব থেকে দীর্ঘদিন ধরে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সেখানে আরও নতুন তদারকি সংস্থা যুক্ত করা হচ্ছে। যা মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে বিবেচিত হবে। আবাসন খাত অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে অবদান রেখে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশন থেকে এই ধরনের প্রস্তাব বিনিয়োগবান্ধব নয়। দেশের বিদ্যমান আবাসন সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে আমরা আবাসন খাতের বিনিয়োগকে সহজ করার দাবি জানাই। আমরা সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে অর্ধশতকের অভিজ্ঞ রাজউককে পরিকল্পিত শহর গঠন ও তদারকির দায়িত্ব অব্যাহত রাখার দাবি জানাচ্ছি।
রিহ্যাব সভাপতি জানান, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে পত্রিকা মারফত জানতে পারি, কেবল বহুতল ভবনই নয় যেকোনো ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন নিতে হবে। এক্ষেত্রে একই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কতবার অনুমোদন নিতে হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এটা সর্বজনবিদিত যে, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার জনগণের ভোগান্তি কমাতে চাচ্ছে। এজন্য অনেক কিছু ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা প্রচলন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেইরকম একটি ক্ষেত্রে এই জাতীয় সিদ্ধান্ত গৃহায়ন শিল্পের জন্য একটি গভীর ও নবতর সংকট সৃষ্টি করবে। সরকার যেখানে ইজি অব ডুইং বিজনেস করার প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে সেই অবস্থায়, এই ধরনের সিদ্ধান্ত ইজি অব ডুইং বিজনেস পরিপন্থী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
এসআই/জেডএস