মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আনা যাবে আইটিখাতের বৈদেশিক আয়
তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতের বৈদেশিক আয় দেশে আনার প্রক্রিয়াটি আরও সহজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ এম ক্যাশসহ স্থানীয় ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে আনা যাবে এ খাতের বৈদেশিক আয়।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিখাতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয় সহজে প্রত্যাবাসনের জন্য মোবাইলেফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতদিন শুধুমাত্র ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত আয় আনার সুযোগ ছিল। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত এমএফএস সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- বিকাশ, রকেট এবং এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে বৈদেশিক আয় প্রত্যাবাসন এবং আইটিখাতের রপ্তানিকারকদের ওয়ালেট হিসাবের মাধ্যমে করা যাবে।
তবে এ ক্ষেত্রে মোবাইলেফোনে আর্থিক সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিছু নির্দেশনা পরিপালন করতে হবে। সেগুলো হলো-
>> দেশে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশি অর্থ লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে।
>> অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস প্রোভাইডার, ডিজিটাল ওয়ালেট প্রোভাইডার কিংবা এগ্রিগেটরেরা বিদেশি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করতে পারবে।
>> এমএফএস প্রোভাইডাররা অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করবে। বিদেশি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারদের মাধ্যমে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা নস্ট্রো হিসাবে জমা হওয়ার পর তা অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের সেটেলমেন্ট হিসাবে টাকায় স্থানান্তর করবে।
সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে জমা করা তথ্যপ্রযুক্তিখাতের আয় সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারকের নামে পরিচালিত ডিজিটাল ওয়ালেটে জমা হবে।
>> বিদেশি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডাররা এ দেশে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা কিংবা টাকা হিসাব পরিচালনা করতে পারবে। বিদেশি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারদের নামে পরিচালিত হিসাবে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক ওভারড্রাফট সুবিধা দিতে পারবে। তবে ওভারড্রাফট সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে পেমেন্ট গ্যারান্টি থাকতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রপ্তানিকারকরা বৈদেশিক মুদ্রায় রিটেনশন কোটা সুবিধা পেয়ে থাকে। আলোচ্য সুবিধা এক্ষেত্রেও থাকবে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করার পূর্বে বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজনীয় অংশ রিটেনশন কোটা হিসাবে জমা করা যাবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
একই দিনে অপর একটি প্রজ্ঞাপনে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদেরকে ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে নিয়ে আসা বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক বিদেশি ডিজিটাল ওয়ালেটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
নতুন নীতিমালার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১১ সালে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলোকে বিদেশি অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস প্রোভাইডারদের সঙ্গে স্থায়ী সমঝোতার ভিত্তিতে সেবাখাতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয় প্রত্যাবাসনের নীতিমালা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তিখাতের লেনদেনের সংখ্যা বিবেচনায় বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সারদের আয় সহজে নিয়ে আসার লক্ষ্যে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদেরকে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে অংশ করা হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তিখাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত প্রশংসা করে বলেন, নীতিমালাটির আওতায় আইটি খাতের আয় সহজে প্রত্যাবাসিত হতে পারবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ১৬টি ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে। এগুলো হলো- ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ, ডাচ্-বাংলার রকেট, ইসলামী ব্যাংকের এম ক্যাশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ইউক্যাশ, সাউথইস্ট ব্যাংকের টেলিক্যাশ, ওয়ান ব্যাংকের ওকে, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মাই ক্যাশ, প্রাইম ব্যাংকের প্রাইম ক্যাশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের স্পট ক্যাশ, ট্রাস্ট ব্যাংকের মোবাইল মানি, মেঘনা ব্যাংকের ট্যাপ এন পে। রূপালী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, বাংলাদেশ কমার্স, এনসিসি ও যমুনা ব্যাংক দিচ্ছে শিওর ক্যাশ সেবা। এ ছাড়া ‘সোনালী ই সেবা’ নামের মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক।
তবে ডাক বিভাগের ‘নগদ’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত না হওয়ায় এসব সুবিধার আওতার বাইরে থাকবে।
এসআই/এফআর