কৃষিঋণে অনীহা ১২ ব্যাংকের

করোনায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবিলার পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তারপরও কৃষিঋণ বিতরণে অনীহা দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) কিছু ব্যাংক বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জন করেছে। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ শতাংশের কম কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে। এরমধ্যে ২০ শতাংশেরও নিচে রয়েছে ১২ ব্যাংক। ৩৩ ব্যাংকের বিতরণের হার ৫০ শতাংশের নিচে।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চরমভাবে ব্যার্থ সীমান্ত ও মধুমতি ব্যাংক। তাদের কৃষিঋণ বিতরণের হার এক শতাংশের ঘরেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে গত ছয় মাসে এক টাকাও বিতরণ করেনি দুই ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- উরি ব্যাংক ও কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ। ছয় মাসে যেসব ব্যাংকের ঋণ বিতরণের হার ২০ শতাংশেরও নিচে সেগুলো হলো- সরকারি খাতের রূপালী ব্যাংক, বিদেশি খাতের উরি ব্যাংক, বেসরকারি খাতের এবি, কমিউনিটি, গ্লোবাল ইসলামি, আএফআইসি, মধুমতি, সীমান্ত, স্ট্যান্ডার্ড, দি সিটি, ইউনিয়ন ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ব্যাংক খাতে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ হয়েছে ১২ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। বিতরণের পরিমাণ বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গত অর্থবছর ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ছয় মাসে বিতরণ হয়েছিল ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা ছিল ৪৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এতে করে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কৃষিতে ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে এক হাজার ২৭৮ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে সরকারি মালিকানার বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। এ ঋণ পুরো বছরের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর জন্য নির্ধারিত ১৫ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ হয়েছে ছয় হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা যা ৪৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ খাতে ঋণ বিতরণে সুদ-ভর্তুকিসহ নানা সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কৃষি খাতে ঋণের অন্তত ৬০ শতাংশ শস্য খাতে দিতে হবে। তারপরও এখাতে প্রয়োজনীয় ঋণ দিচ্ছে না ব্যাংক।
এদিকে করোনার সময়েও কৃষি খাতের উৎপাদন সচল ছিল। তাই এ খাতে ঋণের প্রয়োজনও বেশি ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো তাদের সঠিক সময় ঋণ সহায়তার দেয়নি। ফলে প্রথমবারের মতো গেল অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয় ব্যাংকগুলো। গেল (২০১৯-২০২০) অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ রেখেছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু অর্থবছর শেষে এ খাতের ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। সেই হিসেবে গেল অর্থবছরে লক্ষ্যের চেয়ে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ বা এক হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ কম হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কৃষি খাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
চলতি (২০২০-২০২১) অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। করোনা মহামারির আর্থিক সংকট মোকাবিলায় এবং সরকারের কৃষি ও কৃষকবান্ধব নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে টেকসই উন্নয়নের নির্ধারিত লক্ষ্যের প্রথম ও প্রধান তিনটি লক্ষ্য তথা দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধা মুক্তি ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের উদ্দেশ্যে পল্লী অঞ্চলে ব্যাপক হারে কৃষিঋণ প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
এসআই/ওএফ