তারপরও মিলছে না বিমাদাবির ১৫০০ কোটি টাকা

Mahfuzul Islam

২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০১:১৩ পিএম


তারপরও মিলছে না বিমাদাবির ১৫০০ কোটি টাকা

৪৫টি বিমা প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহকদের পাওনা এক হাজার ৮২০ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ৬৫ টাকা / প্রতীকী ছবি

গ্রাহকের প্রায় ১৩ হাজার বিমাদাবির দেড় হাজার কোটি টাকা ৪৫টি নন-লাইফ (সাধারণ বিমা) কোম্পানির পকেটে! টাকা পেতে কাগজপত্র নিয়ে গ্রাহকরা বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। অনুরোধ করছেন, টাকাগুলো দিতে। কিন্তু কাজ না হওয়ায় তদবির-সুপারিশ করছেন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে। তারপরও বিমাদাবির টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা!

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) বিশেষ প্রতিবেদনেও গ্রাহকদের বিমাদাবির টাকা না দেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে।

• সাড়ে ১২ হাজার বিমাদাবির অর্থ আটকা
• সাবেক মন্ত্রীর সুপারিশও পাত্তা পাচ্ছে না
• কারণ জানতে চেয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর (সাধারণ বিমা প্রতিষ্ঠান) বিমাদাবি নিষ্পত্তির হার ৩৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। যা মোটেও কাম্য নয়। শতভাগ বিমাদাবি নিষ্পত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। এ অবস্থায় ‘জাতীয় বিমা দিবস ২০২২’ পালনের আগে শতভাগ বিমাদাবি নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

জুলাই ২০২১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর সময় পর্যন্ত ৪৫টি বিমা প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহকরা ২০ হাজার ৯৮১টি বিমাদাবির জন্য আবেদন করেন। এসব দাবির বিপরীতে টাকার পরিমাণ এক হাজার ৮২০ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ৬৫। এর মধ্যে গ্রাহকদের আট হাজার ১৩৪টি বিমাদাবির ৪১৭ কোটি ৪৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৫ টাকা পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু ১২ হাজার ৭০৯টি বিমাদাবির এক হাজার ৪১৩ কোটি ৫৮ লাখ ১৮ হাজার ৯২৮ টাকা পরিশোধ করা হয়নি 

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যক্তির সম্পদ, দেশি-বিদেশি কোম্পানি এবং কোম্পানির বিভিন্ন সম্পদের ঝুঁকি কমাতে নির্ধারিত হারে প্রিমিয়াম দিয়ে বিমা করেন উদ্যোক্তা বা কোম্পানির মালিকরা। এ বিমার মেয়াদ হয় এক বছর, দুই বছর কিংবা তিন বছর। লক্ষ্য, বিমা করা সম্পদ যদি আগুনে পুড়ে যায়, কিংবা পানিতে ডুবে যায়; বিমা কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেবে। বিশ্বজুড়ে চালু আছে এ নিয়ম।

আইডিআরএ প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, জুলাই ২০২১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর সময় পর্যন্ত ৪৫টি বিমা প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহকরা ২০ হাজার ৯৮১টি বিমাদাবির জন্য আবেদন করেন। এসব দাবির বিপরীতে টাকার পরিমাণ এক হাজার ৮২০ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ৬৫। এর মধ্যে গ্রাহকদের আট হাজার ১৩৪টি বিমাদাবির ৪১৭ কোটি ৪৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৫ টাকা পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু ১২ হাজার ৭০৯টি বিমাদাবির এক হাজার ৪১৩ কোটি ৫৮ লাখ ১৮ হাজার ৯২৮ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। যা শতাংশের হিসাবে ৩৮ দশমিক ৪৮। অর্থাৎ গ্রাহকদের ৬১.৫২ শতাংশ বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানগুলো।

Dhaka Post
১২ হাজার ৭০৯টি বিমাদাবির এক হাজার ৪১৩ কোটি ৫৮ লাখ ১৮ হাজার ৯২৮ টাকা পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানগুলো / প্রতীকী ছবি

গ্রাহকদের বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ না করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। ২০২১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে গ্রাহকদের বিমাদাবির সংখ্যা ছিল নয় হাজার ৩৪৪টি। টাকার অঙ্কে যা দাঁড়ায় ৫০২ কোটি ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ২৩১। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ২৭৩টি বিমাদাবির ৭৮ কোটি ৯৪ লাখ ছয় হাজার ৫৪৫ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি চার হাজার ৭১টি বিমাদাবির ৪২৩ কোটি ২২ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৬ টাকা পরিশোধ করা হয়নি।

বিমাদাবির টাকার অঙ্কের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সরকারি বিমা প্রতিষ্ঠান ‘সাধারণ বিমা করপোরেশন’। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ১৯৬ গ্রাহক পাবেন ২৯৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

গ্রাহকদের বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ না করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। ২০২১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে গ্রাহকদের বিমাদাবির সংখ্যা ছিল নয় হাজার ৩৪৪টি। টাকার অঙ্কে যা দাঁড়ায় ৫০২ কোটি ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ২৩১। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ২৭৩টি বিমাদাবির ৭৮ কোটি ৯৪ লাখ ছয় হাজার ৫৪৫ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি চার হাজার ৭১টি বিমাদাবির ৪২৩ কোটি ২২ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৬ টাকা পরিশোধ করা হয়নি

সংখ্যার দিক দিয়ে বিমাদাবি পরিশোধ না করায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ‘ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটি ৭০৪টি বিমাদাবির মধ্যে ১৯২টি দাবি পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ মোট ১০ কোটি ৩৬ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ টাকার বিমাদাবির মধ্যে এক কোটি ৫৬ লাখ ৪৭ হাজার ৩৭৬ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এখনও বাকি রয়েছে ৫১৮টি বিমাদাবির আট কোটি ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪১৮ টাকা।

কেন বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে না

বিমা খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাহকদের বিমাদাবি পরিশোধ না করার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। একটি হচ্ছে- বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছার অভাব। আরেকটি হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে নগদ অর্থ না থাকা। ফলে তারা দেরিতে টাকা পরিশোধে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করছে। এতে বিমা খাতের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন গ্রাহকরা। বিকল্প চিন্তা করছেন তারা।

নির্দিষ্ট সময়ে বিমাদাবির অর্থ কেন পরিশোধ করা হচ্ছে না— জানতে চাইলে খাত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে না, বিষয়টা তা নয়। কাগজপত্র সঠিক না থাকলে তো বিমাদাবি পরিশোধ করা যায় না। নন-লাইফ কোম্পানিগুলোর বিমাদাবি পূরণে সার্ভে রিপোর্টের প্রয়োজন হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশন দরকার হয়। এগুলো পেতে অনেক সময় লাগে। তাই বিলম্ব হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্ঘটনা চিহ্নিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পটেই বিমাদাবির অর্থ পরিশোধের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আমাদের দেশের বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি পরিশোধ করতে চায় না। করলেও নানা টালবাহানা করে।

‘কোনো দুর্ঘটনায় সম্পদ নষ্ট হয়ে গেলে, ঘটনা সত্য নাকি মিথ্যা; যাচাইয়ের জন্য সার্ভেয়ার নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে তা বিমা প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠায়। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এ নিয়ম আরও সহজ করা প্রয়োজন।’

কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে কত পাওনা

অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১১১ গ্রাহক বিমাদাবি বাবদ চার কোটি ৩২ লাখ ৬৬ হাজার ২৪২ টাকা পাবেন। এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৫৮ দাবির বিপরীতে সাত কোটি ৮০ লাখ ৮৩ হাজার ৫২১ টাকা, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১৩১ দাবির বিপরীতে আট কোটি ৯৫ লাখ ৩৩ হাজার ১১২ টাকা, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১১টি বিমাদাবির বিপরীতে এক কোটি ৭৯ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৮ টাকা, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৫৪১ গ্রাহক ১২ কোটি ৭২ লাখ ২২ হাজার ৬৯৪ টাকা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ২০০ গ্রাহক ১৫ কোটি ৬৪ লাখ ৮১ হাজার ৪০৫ টাকা এবং সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের কাছে ৬৮ গ্রাহক বিমাদাবির দুই কোটি ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৬ টাকা পাওনা রয়েছে।

সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের কাছে ১০৪ গ্রাহক এক কোটি ৬০ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮২ টাকা, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১২২ গ্রাহক ৫০ কোটি চার লাখ ১৭ হাজার ৭৫৫ টাকা, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১০৮ গ্রাহক ১০ কোটি ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৯২৮ টাকা, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের কাছে সাত গ্রাহক তিন কোটি ৫৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৩ টাকা, ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৬৯ গ্রাহক দুই কোটি ২৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৯ টাকা, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের কাছে ২৭৪ গ্রাহক ২৪ কোটি ৭০ লাখ ৪৮ হাজার ১৪১ টাকা, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের কাছে ২০৪ গ্রাহক সাত কোটি ৩১ লাখ ৭২ হাজার ২২০ টাকা, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১২৬ গ্রাহক সাত কোটি ৩০ লাখ ৭৮ হাজার ২৬১ টাকা, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১৭৫ গ্রাহক পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ১৯ হাজার ৭৪৩ টাকা পাওনা।

গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১৬৫ গ্রাহক ছয় কোটি ৩০ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৫ টাকা, গ্রিন ডেল্টার কাছে চার হাজার ৭১ গ্রাহক ৪২৩ কোটি ২২ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৬ টাকা, ইসলামিক কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১৫১ গ্রাহক চার কোটি ২২ লাখ ১১ হাজার ৭৩৮ টাকা, ইসলামি ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছে ৯৮ গ্রাহক বিমাদাবির ২৬ কোটি ৫৭ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪৩ টাকা পাবেন।

জনতা ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৭৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৭৪ টাকা, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৭৮ গ্রাহক বিমাদাবির ছয় কোটি ৮১ লাখ চার হাজার ৮৬৪ টাকা, মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৪৫৫ গ্রাহক নয় কোটি ৪৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯১ টাকা, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৩১১ গ্রাহক বিমাদাবির আট কোটি ৩৪ লাখ টাকা পাবেন।

নিটল নিলয় গ্রুপের নিটল ইন্স্যুরেন্সের কাছে গ্রাহকের ৫৮৬টি বিমাদাবির বিপরীতে তিন কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার ২৭ টাকা, নর্দার্ন জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ১৬৪টি দাবির বিপরীতে পাঁচ কোটি ৫৪ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৬ টাকা, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১১২ গ্রাহক এক কোটি ৬৯ লাখ ১৯ হাজার ২১৫ টাকা, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের কাছে ২৬২ গ্রাহক ৪৭ কোটি ২৫ লাখ ২৬ হাজার ৬০৪ টাকা, ফনিক্স ইন্স্যুরেন্সের কাছে ২৮৪ গ্রাহক ৩৭ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার ৯৯৪ টাকা, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১৩৯ গ্রাহক ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৩৫ হাজার ৭২ টাকা, প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১২৩ গ্রাহক ৪৬ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৭৮৩ টাকা, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৫৩০ গ্রাহক ৪০ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ১৪২ টাকা পাবেন।

এছাড়া পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১১৬ গ্রাহক বিমাদাবির বিপরীতে পাঁচ কোটি ৯৪ হাজার ৫৮৫ টাকা, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৭৮৮ গ্রাহক ১৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৫৪ হাজার ২০ টাকা, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১৫৫ গ্রাহক সাত কোটি ৪০ লাখ ৮৪ হাজার ২৩০ টাকা এবং রূপালী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৩২৬ গ্রাহক বিমাদাবির পাঁচ কোটি ১৩ লাখ ২৮ হাজার ১৯০ টাকা পাবেন।

Dhaka Post
শতভাগ বিমাদাবি নিষ্পত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না / প্রতীকী ছবি

সরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ বিমা করপোরেশনের কাছে ১৯৬ গ্রাহক বিমাদাবির ২৯৭ কোটি ৬৫ লাখ ৮৭০ টাকা পাবেন। একইভাবে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৮০ গ্রাহক বিমাদাবির চার কোটি ৪৬ লাখ তিন হাজার ৪৯৯ টাকা, সিকদার ইন্স্যুরেন্সের কাছে ২৫ গ্রাহক নয় কোটি ৮২ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৭ টাকা, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১৭৩ গ্রাহক এক কোটি ২৭ লাখ ৬৪ হাজার ২৮৯ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১০৫ গ্রাহক ১৬ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজার ৬৫০ টাকা, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৭৭ গ্রাহক তিন কোটি ৫৬ লাখ ৭৩ হাজার ২১৬ টাকা, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৩৯ গ্রাহক ছয় কোটি ৯০ লাখ এবং ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৫১৮ গ্রাহক বিমাদাবির আট কোটি ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪১৮ টাকা পাবেন।

গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকার বিমাদাবি পরিশোধের বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিমা খাতের আস্থা সংকটের মূল কারণ বিমাদাবি পরিশোধে গড়িমসি। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। প্রতিষ্ঠানগুলো কী কারণে গ্রাহকদের বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ করেনি, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্রুত অর্থ পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বিমা কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ না করায় সাবেক এক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আইডিআরএ-এর কাছে সুপারিশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। একই সঙ্গে দ্রুত গ্রাহকদের বিমাদাবির অর্থ পরিশোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। শুধু তিনি নন, এমন সুপারিশ প্রতিনিয়ত আসছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপ দিচ্ছি বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ করতে।

প্রতিষ্ঠানগুলো যা বলছে

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে না— জানতে চাওয়া হয় গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ডিজিটাল বিজনেস ও ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন-প্রধান মনিরুজ্জামানের কাছে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি গ্রাহকের বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ করেছি। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন।

‘যাদের কাগজপত্র ঠিক ছিল তারা দ্রুত পেয়ে যাচ্ছেন। বিমাদাবির অর্থ পরিশোধের জন্য প্রথমত প্রতিষ্ঠানের কাছে সঠিক কাগজপত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে গ্রাহকরা প্রায়ই ভুল করেন। এছাড়া সার্ভে রিপোর্ট ও পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টের দরকার হয়। এজন্য একটু দেরি হয়। বিমাদাবির অর্থ দিচ্ছি না— এমন অভিযোগ সঠিক নয়।’

Dhaka Post
সঠিক কাগজপত্র জমা না দেওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করা যাচ্ছে না বিমাদাবির অর্থ- বিমা কোম্পানি / প্রতীকী ছবি

একই প্রশ্নের উত্তরে সরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ বিমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাধারণত কোম্পানির সদিচ্ছা এবং বিমাদাবির সঠিক কাগজপত্র না থাকায় এর অর্থ পরিশোধে বিলম্ব হয়।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের সচিব মাসুদ রানা ‘কী কারণে বিমাদাবির অর্থ দেওয়া হয় না, তা আমার জানা নেই’ বলে মন্তব্য করেন। তবে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ আনোয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গ্রাহকদের বড় একটা অংশ প্রথমেই ক্লেইম করে বসেন। তারা কিন্তু প্রোপার ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেন না। এছাড়া বড় ক্লেইমগুলোতে একটু বেশি সময় লাগে। কারণ, এগুলো পুনঃবিমা করা থাকে। সেই টাকা সাধারণ বিমা কোম্পানির কাছ থেকে এনে দিতে হয়। এজন্য সময় লাগে।’
 
এমআই/এমএআর/ওএফ

Link copied