ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় ফ্লোর প্রাইস দিয়েছি

Dhaka Post Desk

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

৩১ জুলাই ২০২২, ০২:০০ পিএম


ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় ফ্লোর প্রাইস দিয়েছি

ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় দরপতন রোধে ফ্লোর প্রাইস দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

তিনি বলেন, কারণ আমাদের দেশে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি। উন্নত দেশে শিক্ষিত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এমনটি করা লাগে না।

রোববার (৩১ জুলাই) রাজধানীর পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) মিলনায়তনে ‘সিএমজেএফ টক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সিএমজেএফ প্রথমবারের মতো ‘সিএমজেএফ টক’ এর আয়োজন করা হয়েছে।

এসময় সিএমজেএফের সভাপতি জিয়াউর রহমান ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সিএমজেএফের সাবেক সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল, তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনসহ সিএমজেএফর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক শিবলী বলেন, শুধু ইক্যুইটি (শেয়ার ও ইউনিট) দিয়ে জিডিপির তুলনায় বাজারের আকার ধরে রাখা এবং ২০ শতাংশের বেশি করা সম্ভব নয়। যেসব দেশে জিডিপির তুলনায় পুঁজিবাজারের আকার তুলনামূলক বড়, সেসব দেশে ডেবট (বন্ড) মার্কেট দিয়ে বড় হয়েছে। আমাদের দেশেও বন্ডের লেনদেন শুরু হলে বাজারের আকার বড় হয়ে যাবে। তখন লেনদেনের পরিমাণও অনেক বেড়ে যাবে।

কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বড় বিনিয়োগকারীরা সাপোর্ট দেবেন বলার পরও বাজারে পতনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ওই সভার পর বড় বিনিয়োগকারীরা কিনেছিল। তবে আমাদের দেশে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি। তারা এত পরিমাণ বিক্রির চাপ দিচ্ছিলেন, যা বড়রা কুলিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে আবার নানা ধরনের নেতিবাচক খবর বাজারে প্রভাব ফেলেছে।

আরও পড়ুন: দরপতন ঠেকাতে আবারও ফ্লোর প্রাইস আরোপ

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিজেদের পোর্টফোলিও ম্যানেজ করতে হয় না। যা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রফেশনাল লোকজন দিয়ে ম্যানেজ করা হয়। যার ফলে ভালো রিটার্ন পাওয়া যায়। গত দুই বছরের বিশ্লেষণে ৮০-৯০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ১০-১২ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে দেখেছি। এবছরও ভালো লভ্যাংশ দেবে বলে আশা করছি। তাই যারা বাজার সম্পর্কে ভালো বোঝেন না, তারা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।

বিনিয়োগ সীমা কস্ট প্রাইসে গণনার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি করার জন্য বর্তমান গভর্নর সচিব থাকার সময় উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিচের কর্মকর্তাদের আপত্তির কারণে হয়নি। তবে এবার হয়ে যাবে। এটি বাস্তবায়নে আইন পরিবর্তনের পরিবর্তে অন্য কোনোভাবে করার কাজ করা হচ্ছে।

রোড শোর সফলতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিদেশে টাকা আনতে যাই না। দেশকে ব্র্যান্ডিং করতে যাই। দেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে যাই। এখন অনেকেই বাংলাদেশকে ভালোভাবে জানে। যে কারণে অনেকে আমাদের দেশে বিনিয়োগের জন্য যোগাযোগ করছেন।

ক্যাপিটাল ম্যার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) অবণ্টিত লভ্যাংশ না দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে অধ্যাপক শিবলী বলেন, যারা এখনও দেয়নি, তাদের জরিমানাসহ আগামীতে দিতে হবে। এটা অনেকটা দৈনিক ভিত্তিতে সুদ গণনার মতো হবে। এ লক্ষ্যে গেজেট প্রকাশের জন্য কাজ করা হচ্ছে।

আয় থেকে শাস্তি কম দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অনেক পুরাতন অভিযোগ দেখতে হচ্ছে। যা ১০-১৫ বছর আগেরও আছে। তারপরও আমরা বিগত ২ বছরে যে পরিমাণ শাস্তি প্রদান করেছি, তা আগের ১০ বছরেও করা হয়নি। এর মধ্যে আবার করোনায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দিকটিও বিবেচনা করতে হচ্ছে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ভালো কোম্পানি আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। তবে সবাই চায় ভালো অ্যাকাউন্টস জমা দিয়ে আসতে। এ কারণে অনেকে আসার জন্য অপেক্ষা করছে। হয়ত জুন ক্লোজিংয়ের হিসাবে কয়েকটি ভালো কোম্পানির আবেদন জমা পড়তে পারে। তবে আমরা যখন ভুয়া অ্যাকাউন্টস বুঝতে পারি, তখন সেসব আইপিও ফাইল বাতিল করে দেই।

এসময় অনেক ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটি অনেকটা কোম্পানির পর্ষদের মানসিক সমস্যা। তারা ভাবে কোম্পানি যেহেতু ভালো ব্যবসা করছে, সেহেতু শেয়ারবাজারে কেন যাব। এছাড়াও কোম্পানির মালিকানা অন্যদের হাতে ছাড়তে চায় না। এজিএমে অপমানিত হতে হবে ভেবেও আসতে চায় না।

এমআই/এসএসএইচ

Link copied