পুঁজিবাজারে আশানুরূপ নয় নারীর অংশগ্রহণ
দেশের পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ এক চতুর্থাংশ। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে এ সংখ্যা আরও কম, মাত্র ১০-১৯ শতাংশ।
সবচেয়ে হতাশার চিত্র বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি)। এখানে চেয়ারম্যান কিংবা কমিশনার পদে গত ২৮ বছরে কোনো নারী নিয়োগ দেয়া হয়নি। একই অবস্থা দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে, মার্চেন্ট ব্যাকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান পদেও। এসব পদেও কখনোই নারী ছিলেন না।
তবে আশার কথা, এরই মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। দুই স্টক এক্সচেঞ্জে, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বেশির ভাগ কোম্পানিতে একাধিক নারী পরিচালককে রাখা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, কোম্পানির পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এমডি কিংবা সিইও পদে নারীদের অংশগ্রহণ ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামাজিক কারণেই পুজিঁবাজারে নারীরা এগিয়ে আসছে না। এর মধ্যে পুঁজিবাজার হচ্ছে অর্থনীতির সবচেয়ে কঠিন জায়গা। তাই সাহস করে এ খাতে নারীরা আসতে চান না। তবে জীবিকার তাগিদে ধীরে ধীরে নারীরা এগিয়ে আসবেন বলে মনে করেন তারা।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমিশনসহ পুঁজিবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম। তবে দিন দিন এটা বাড়ছে। আগামীতে নারীদের অংশগ্রহণ পুঁজিবাজারে কিভাবে বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ডিএসইর সাবেক পরিচারলক ও মডার্ন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) খুজিস্তা নূরে নাহরীন মুন্নী বলেন, নারী উদ্যোক্তা হওয়া যেমন কঠিন, তেমনি নারী কর্মকর্তাদের কাজ করাও কঠিন। তাই এই সেক্টরে নারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কম।
তিনি বলেন, একসময় আমার হাউজে নারী ও পুরুষ কর্মকর্তাদের সংখ্যা সমান ছিল। কিন্তু এখন তা এক তৃতীয়াংশে চলে এসছে। তার কারণ, একজন নারী পড়াশোনা শেষে এ খাতে কাজ শুরু করেন। মাস ছয় কিংবা ১ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তার বিয়ে হয়ে যায়। এছাড়াও পুঁজিবাজার একটি জটিল জায়গা তাই আইটি এবং হিসাব বিজ্ঞানে দক্ষ না হলে টেকা সম্ভব হয় না।
সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ৪৩৪। ৭ মার্চ পর্যন্ত বেনিফিশিয়ারি ওনার্স ( বিও) অ্যাকাউন্টধারীদের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ৪৩৪। এর মধ্যে পুরুষ বিওধারীর সংখ্যা ১৯ লাখ ৬২ হাজার ২১২টি। আর নারীদের সংখ্যা ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৮৬টি। অর্থাৎ চার ভাগের একভাগ নারী। বাকি তিন ভাগই পুরুষ। এক বছর আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মোট বিও সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৪৯ হাজার ১৯৮টি। এর মধ্যে পুরুষদের সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৭৯ হাজার ২৫টি আর নারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৯৩৫।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মকর্তাদের চিত্র
বিএসইসি
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সর্বোচ্চ ফোরাম চেয়ারম্যান ও চার সদস্য। এই ফোরামে গত ২৮ বছর ধরে কোনো নারী কমিশনার কিংবা চেয়ারম্যান পদে আসেননি। প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ পদ হচ্ছে নির্বাহী পরিচালক, এ পদে বর্তমানে ৯ জন রয়েছেন। এই ৯ জনের মধ্যেও কোনো নারী নেই। তবে পরিচালক পদে ১৪ জনের বিপরীতে নারী আছেন মাত্র একজন। এছাড়া নির্বাহী পরিচালক থেকে অ্যাকাউন্ট অফিসার পদে মোট ৮১ জন কর্মকর্তার মধ্যে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা মাত্র ৮ জন। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নারী সংস্থাটির চেয়ারম্যান কিংবা কমিশনার পদে বসেননি।
ডিএসই
দেশের বৃহৎ পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৫৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ৪৭ জন নারী। এই ডিএসইর ট্রেক হোল্ডার ও ব্রোকারেজ হাউজের সদস্য সংখ্যা ২৫০টি। এর মধ্যে নারী মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউজের সংখ্যা ১৯টি। এই প্রতিষ্ঠানগুলোয় নারী চেয়ারম্যান, এমডি কিংবা সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সিএসই
দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সঞ্জে ৮৪ কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন নারী। এছড়া ১৪৬ জন স্টক ব্রোকারের মধ্যে নারী প্রতিনিধি রয়েছেন মাত্র চারজন।
বিএমবিএ
ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ও রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে। এই কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার জন্য কাজ করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) তথ্য মতে, দেশে এখন ৬৩টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬টি মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নারী। এছাড়াও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫০টি কোম্পানির মধ্যে এমডি কিংবা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পরিমাণ আরও কম। ব্রোকারজে হাউগুলোয় নারী কর্মকার্তাদের হারও কম।
ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিএসইতে নারী কর্মীদের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। এখানে চেয়ারম্যান,এমডি, সিএফও, সিআরও,সিটিও পদে নারীরা না থাকলেও অনান্য পদে অনেক নারীই চাকরি করছেন।
তিনি বলেন, গত ১০ বছর ধরে পুঁজিবাজারে অবস্থা ভালো না থাকায় লোকবলও কম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে নতুন করে
কোনো কর্মকর্তা আসেননি। নতুন করে লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের প্রাধান্য দেবে ডিএসই।
বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সেক্টরে এতোদিন নারীরা আসেননি, এখন আসতে শুরু করেছেন। এটা পজেটিভ, ভবিষতে এ খাতে নারী-পুরুষ সমান হবে।
এমআই/এসকেডি