ব্যাংক ঋণ কমাবে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়াবে এনভয় টেক্সটাইলস

Dhaka Post Desk

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:৩০ পিএম


ব্যাংক ঋণ কমাবে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়াবে এনভয় টেক্সটাইলস

ব্যাংক ঋণ কমানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড। ২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া রফতানিমুখী ডেনিম পণ্যের এই কোম্পানিটি এই লক্ষ্যে জিরো কুপন বন্ড ছেড়ে বাজার থেকে ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ পর্ষদ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রোববার (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, এনভয় টেক্সটাইল ৫ বছর মেয়াদি জিরো কুপন বন্ড ছেড়ে ফেসভ্যালুতে পুঁজিবাজার থেকে ২০০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। এ ক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট দিয়ে বন্ড থেকে কোম্পানি পাবে ১৬৮ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ডিসকাউন্ট রেট হবে সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ। অর্থাৎ ১৬৮ কোটি টাকা নিয়ে ৫ বছর পর বিনিয়োগকারীদের ২০০ কোটি টাকা ফেরত দেবে প্রতিষ্ঠানটি।

বন্ডে বিনিয়োগ মোট ১০টি সিরিজে বিভক্ত থাকবে এবং ছয় মাস পরপর একেকটি সিরিজের মেয়াদ শেষ হবে। মেয়াদ শেষ হলে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির কাছ থেকে বন্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন করবে। তবে এগুলো করা হবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনের পর। এছাড়াও রাজধানীর কলাবাগনে এনভয় টাওয়ারের চতুর্থ তলায় ৫ হাজার ৩২৬ স্কয়ার ফিট স্পেস কিনবে এনভয় টেক্সটাইল। যার বাজার মূল্য ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা বলে জানানো হয়েছে।

কোম্পানির তথ্য অনুসারে, এনভয় টেক্সটাইলের দীর্ঘ মেয়াদি ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। আর স্বল্প মেয়াদি ঋণ রয়েছে ২ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দীর্ঘ মেয়াদি ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে বন্ড থেকে উত্তোলিত অর্থ দিয়ে ১০০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হবে। বাকি অর্থ ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে ব্যবহার করা হবে।

এ বিষয়ে এনভয় টেক্সটাইলসের কোম্পানি সচিব এম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কোম্পানির দীর্ঘ মেয়াদে ৫০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ রয়েছে। উচ্চ সুদের এই ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্যই মূলত বন্ড ছেড়ে অর্থ উত্তোলনের জন্য পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৫০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণের মধ্যে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে। এ ছাড়াও বাকি টাকা কোম্পানিতে ব্যয় করা হবে।

কোম্পানির কোন খাতে ব্যয় করা হবে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে। ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে পারলে, বিদ্যুৎ কেনা বাবদ খরচ এক-তৃতীয়াংশের মতো কমে যাবে।

সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, কোম্পানির ৩৬৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা রিজার্ভ রয়েছে। এই টাকা ব্যাংক ঋণ ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবহার করলে তো নতুন করে বন্ড ছাড়ারই দরকার হয় না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিজার্ভ কিংবা সারপ্লাসের টাকা কোম্পানির অভ্যন্তরীণ কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ব্যাংক ও অপারেশনের জন্য করছি না।

কিছুদিন আগে কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ৮ কোটি ৭০ লাখ প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৮৭ কোটি টাকা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কোম্পানিটি। প্রেফারেন্স শেয়ারের টাকা দিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকায় বিদ্যমান কারখানায় ব্লেন্ডেড ইয়ার্ন উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। পাশাপাশি সংগৃহীত অর্থের কিছু অংশ উচ্চসুদের ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে পুরোপুরি অবসায়নযোগ্য।

এদিকে বন্ড ছাড়া ও স্পেস কেনার খবরে রোববার এনভয় টেক্সটাইলসের শেয়ারের দাম বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সর্বশেষ ৪৭ টাকা ৯০ পয়সাতে লেনদেন হওয়া কোম্পানির শেয়ার বোরবার ৪৯ টাকায় লেনদেন শুরু হয়।

অনুমোদিত মূলধন ৪০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৬৭ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোম্পানির বর্তমান শেয়ার সংখ্যা ১৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬৭টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৪৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪৭ দশমিক ৬২, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক শূন্য ৬ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে বাকি ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

চলতি বছরের ৩০ জুন বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। এর আগে ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছিল কোম্পানিটি। সেই হিসাবে আলোচ্য হিসাব বছরে মোট ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পাচ্ছেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা।

এরপর অর্থাৎ চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এনভয় টেক্সটাইলসের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২১ পয়সা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ১৩ পয়সা। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকা।

এমআই/এনএফ

Link copied