মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা: কেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ে জরুরি নির্দেশনা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই শুক্রবার (২ এপ্রিল) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা এখনও পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে অনড় অবস্থানে। এর মধ্যেই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।
বুধবার (৩১ মার্চ) অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সকাল ৮টার মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। সকাল সাড়ে ৯টায় কেন্দ্রের প্রধান ফটক বন্ধ হয়ে যাবে।
আরও বলা হয়েছে, আগামী ২ এপ্রিল যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সকাল ৮টার মধ্যে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। ৯টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রধান ফটক বন্ধ হয়ে যাবে। সাড়ে ৯টার পর কোনো শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা
এদিকে চলমান করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে বুধবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধনও করেছেন তারা।
মানববন্ধনে তাওসিব হাসনাইন তারন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আগামী ২ এপ্রিল বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সব পরীক্ষা স্থগিত করা হলেও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হচ্ছে না। একদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই সাধারণ মানুষদের জনসমাগম করতে নিষেধ করছে; অপরদিকে তারাই আবার জনসমাগম করতে এত বড় একটা পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন করতে যাচ্ছে। আমাদের কী তাহলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সরকার যে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে, তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজেরাই লঙ্ঘন করছে। কেননা ১৮ দফার ‘ড’ নং দফায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে করোনায় আক্রান্ত কিংবা করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর লঙ্ঘন করে করোনায় আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে আসতে বাধ্য করছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান মেডিকেল ভর্তিচ্ছুরা
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখীতার মধ্যেই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন ও এ নিয়ে নিজেদের দাবির কথা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে চান ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীই একমাত্র তাদের সুরক্ষার বিষয়টি বুঝতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন।
ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে আতকিয়া সাদিয়া আনিকা নামের এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের দাবি নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাই। তিনিই আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। আশা করি, তিনি আমাদের সুরক্ষার বিষয়টি বুঝবেন। আমরা তার মুখ থেকেই শুনতে চাই তিনি আমাদের ঝুঁকিতে ফেলে এই পরীক্ষাটা নিতে চান কিনা।
তিনি বলেন, দেশে করোনা এখন নিয়ন্ত্রণহীন। আমরা বলছি না যতোদিন করোনা বিদায় না হবে, ততোদিন পরীক্ষা দেবো না। আমাদের দাবি হচ্ছে, আগে সব পরীক্ষার্থীদের টিকা দিন, তারপর টিকা নিয়ে আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবো। টিকা ছাড়া এ পরিস্থিতিতে আমরা পরীক্ষায় বসতে চাই না।
যথাসময়েই পরীক্ষা হবে, থাকবে বিশেষ ব্যবস্থাও
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ মুহূর্তে পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। ইতোমধ্যেই ২ এপ্রিল পরীক্ষা নিতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গত রোববার (২৮ মার্চ) স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সব কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন সুষ্ঠুভাবে সবকিছু সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংক্রমিতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কেউ আশঙ্কা করে থাকেন যে তার মধ্যে করোনা উপসর্গ আছে অথবা কারও মাঝে সংক্রমণ থাকে, তবে আমরা তাদের আলাদাভাবে বিশেষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরীক্ষা নেব। এক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো প্রতিটা কেন্দ্রে আইসোলেশন কক্ষের ব্যবস্থা থাকছে। তাপমাত্রা পরিমাপ করে সবাইকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। আশা করছি সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। সবাই যার যার প্রস্তুতি নিয়ে এতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আগামী ২ এপ্রিল এমবিবিএস ও ৩০ এপ্রিল বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা রয়েছে।
টিআই/এসএম