ভাসানচরের রোহিঙ্গা শিশুরা শিক্ষার আওতায় আসছে

Nur Muhammad

০৫ এপ্রিল ২০২১, ০৫:১২ এএম


ভাসানচরের রোহিঙ্গা শিশুরা শিক্ষার আওতায় আসছে

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা নোয়াখালীর ভাসানচরে গেছেন এমন শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব শিশুদের কোন ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হবে তা ঠিক করতে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) ভার্চুয়াল এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে। সভায় এসব রোহিঙ্গা শিশুদের কীভাবে শিক্ষা দেওয়া হবে তার পদ্ধতি ঠিক করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনা হবে এটা আগেই সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল। কোন কোন পদ্ধতি ও কোন ভাষায় দেওয়া হবে তা ঠিক করতে এ সভা ডাকা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষা দেওয়া ঠিক হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

তাদের মতে, রোহিঙ্গাদের মূল ধারার শিক্ষা দেওয়া হলে তাদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই আরবি ভাষা জানে।Dhaka Post

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার শরণার্থী ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন দফায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার ব্যস্তচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চরঈশ্বর ইউনিয়নের ভাসানচরে (আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩) স্থানান্তর করা হয়েছে।

সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সভাপতিত্ব করবেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব সভায় অংশ নেবেন।

Dhaka Post

এছাড়াও এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ছাড়াও পাঁচটি এনজিওকে বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে।  

এছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩ এর প্রকল্প পরিচালক, কক্সবাজার ও নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক, নোয়াখালী জেলা শিক্ষা অফিসার, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন (আরআরআরসি) কক্সবাজারের কমিশনার ও হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভায় যোগ দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।Dhaka Post

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মোমিনুর রশিদ আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদেরকে নানা বিদেশি সংস্থা ও এনজিওগুলো শিক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু সরকারিভাবে একটি কর্মসূচির আওতায় তাদের আনার কথা চলছিল। এখন ভাসারচরে যাওয়ার পর বিষয়টি আরও জোরালো হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের সভায় ভাসানচরে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কি ধরনের শিক্ষা দেওয়া যায় তা নির্ধারণ করতে আলোচনা হবে। বয়স্ক রোহিঙ্গারা শুধু আরবি জানে। শুধু বয়স্ক না শিশুদেরও শিক্ষা দেওয়া হবে ও কোন ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হবে এসব বিষয় সভায় আলোচনা হবে। ভাসানচরে পাঠদানের অবকাঠামো নিয়ে সমস্যা হবে না। সেখানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

জানতে চাইলে আরআরআরসির কক্সবাজারের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দোজা নয়ন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হতো। ইউনিসেফের নেতৃত্বে ব্র্যাক, সেভ দ্য সিলড্রেন, ফ্রেন্ডশিপসহ পাঁচটি এনজিও রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা দিতো। মিয়ানমারের ভাষার সঙ্গে অংক, ইরেজিসহ বেসিক বিষয় শিক্ষা দেওয়া হয়। মিয়ানমারের নাগরিক হওয়ায় বাংলা শেখানো হতো না। করোনার কারণে বর্তমানে সারা দেশের মতো রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।Dhaka Post

ভাসানচরে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর জন্য অবকাঠামো সুবিধা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নৌবাহিনী ওখানে অনেক বিল্ডিং নির্মাণ করেছে। সরকার শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে চাইলে অবকাঠামোর সমস্যা হবে না। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউনিসের শিক্ষা প্রজেক্টের সাবেক কো-অর্ডিনেটর তুর্য প্রণয় বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের বার্মিজ, ইংরেজি ও গণিত শিক্ষা দেওয়া হয়। কারণ ওদের দেশে ফিরে গেলে যেন শিক্ষা চালিয়ে নিতে পারে। ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এটাকে স্থায়ী শিক্ষা বলা চলে না। শিক্ষা যাতে বন্ধ না হয়ে যায় সেজন্য শুধু লেখাপড়ার মধ্যে রাখার জন্য এটা করা হয়েছে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওদেরকে আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষা দেওয়া ঠিক হবে না। এটা করা হলে ওদের স্বীকার করে নেওয়া হবে। মিয়ানমারের শিক্ষার মধ্যেই রাখা উচিত।

এনএম/ওএফ

Link copied