রিয়াজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি

রাজধানীর টিকাটুলীতে অবস্থিত শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সদ্য সাবেক সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতি ও যৌন হয়রানিসহ কোনো অভিযোগেরই প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। তাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলেছে কমিটি। একইসঙ্গে সরকারি তদন্ত কাজে বাধা প্রদান করায় প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক হামিদা খাতুন, খণ্ডকালীন সিনিয়র শিক্ষক আকলিমা আক্তার ও সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারা, সহকারী শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা, সিনিয়র শিক্ষক রেখা মন্ডল দীনা ও শরীর চর্চা শিক্ষক মো. সবুজ মিয়ার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সুপারিশ করেছে কমিটি।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ নিয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আবুল বাশার, সদস্য সচিব ও বোর্ডের উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (গোপনীয়) জাকির হোসেন এবং উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ) হেলাল উদ্দিনের যৌথ স্বাক্ষরে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে বোর্ড।
রিপোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, গভর্নিং বডির সদ্য সাবেক সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির কোনো প্রমাণ কমিটির কাছে উপস্থাপিত হয়নি। এছাড়া কলেজের ফান্ড লুটপাটেরও কোনো সত্যতা মিলেনি। তার সময়ে কলেজের ফান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি গভর্নিং বডির সদ্য সাবেক সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দিনকে সম্পূর্ণভাবে সামাজিক, রাজনৈতিক, মানসিক ও পারিবারিকভাবে হেয় করার লক্ষ্যে স্বার্থান্বেষী কিছু শিক্ষক ও কোনো কুচক্রী মহলের চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ বলে তদন্ত দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন রাজধানীর টিকাটুলির শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কলেজের ফান্ড তছরুপ করেছেন বলে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দেন কলেজের কিছু শিক্ষক। তিনি শিক্ষকদের যৌন হয়রানি করেছেন বলেও অভিযোগ দেন তারা। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে রিয়াজ গভর্নিং বডির সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নেন। পরে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে রিয়াজকে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়।
এর আগে আর্থিক অনিয়ম ও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলে রিয়াজ উদ্দিন গত ১৫ সেপ্টেম্বর শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নেন। পরে তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেন।
এদিকে, রিয়াজ উদ্দিনের পদত্যাগের পর ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটিকে) গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব দেয় শিক্ষা বোর্ড। এর আগে রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি টাকার এফডিআর আত্মসাৎ, যৌন হয়রানিসহ কয়েকটি অভিযোগ এনে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের কাছে লিখিত আবেদন করেন প্রতিষ্ঠানটির ছয় জন শিক্ষক।
রিয়াজ উদ্দিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা বোর্ডের গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. তোফায়েল আহমেদ ভূইয়াসহ ১৮ জন শিক্ষকের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য গ্রহণ করেন।
১৩ কোটি টাকা এফডিআর আত্মসাতের বিষয়ে তদন্ত কলেজের অধ্যক্ষ, একাধিক শিক্ষক ও অভিযুক্ত রিয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেন। কমিটি নিশ্চিত হয় সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানটির স্থিতি ছিল ৭ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার ৫০৯ টাকা এবং রিয়াজ উদ্দিন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার সময় স্থিতি ছিল ৮ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ১৭৬ টাকা। অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি তদন্ত দলের কাছে প্রমাণিত হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাবেক সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে। রিয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরকারীদের মধ্যে ১ নম্বর স্বাক্ষরকারী হামিদা খাতুনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তদন্ত কমিটির কাছে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন, যৌন হয়রানি সংক্রান্ত কোনো প্রকার লিখিত বা মৌখিক বক্তব্য কোনো শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। লিখিত বক্তব্যে কলেজের অধ্যক্ষও জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং অভিভাবক সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির বিষয়ে মৌখিক কিংবা লিখিত কোনো ধরনের অভিযোগ করেননি। রিয়াজ উদ্দিনকে সামাজিক, পারিবারিক ও মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে স্বার্থান্বেষী কিছু শিক্ষক ও কোনো কুচক্রী মহলের চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ বলে তদন্ত দলের কাছে প্রতীয়মান হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে বোর্ডের তদন্ত কমিটি পর্যবেক্ষণে বলেছে, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের কিছু অভ্যন্তরীণ বিষয়সহ স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে সাবেক সভাপতিদের মাধ্যমে শিক্ষকরা নিয়োগপ্রাপ্ত হন। রিয়াজ উদ্দিন বিধি সম্মতভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় উদ্যোগী হলে প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষক এবং স্থানীয় কিছু ব্যক্তির প্রতিহিংসার শিকার হন বলে তদন্ত দল মনে করে।
/এমএম/এসএসএইচ/