বদলির তদবির নিয়ে বিব্রত প্রাথমিকের সচিব-মহাপরিচালক
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি প্রাথমিকের বদলি শুরু হয়েছে। যদিও আন্তঃউপজেলা পর্যায়ে এই বদলিতে অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের কোনও কাজ নেই। তারপরও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও প্রাথমিকের সচিবকে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক ফোন ও ডিও লেটার দিচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এতে বিব্রত মহাপরিচালক ও সচিব।
তারা বলছেন, প্রাথমিকের চাকরি হয় স্থানীয় পর্যায়ে। তার আইডির বিপরীতে তাকে নিজ উপজেলায় পদায়ন করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পদায়নের সময় তাকে নিজ উপজেলায় চাকরি করতে এমন স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া থাকে। তারপরও নানা কারণে বদলি করতে হয়। কিন্তু যখন বদলির কার্যক্রম শুরু হয় তখন নানা অজুহাত দেখিয়ে বদলির জন্য জোর তদবির শুরু করেন শিক্ষকরা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, বদলির শুরু হওয়ার পর থেকেই যে পরিমাণ ফোন ও ডিও আসছে তাতে আমি বিব্রত। শুধু বদলি সংক্রান্ত তদবিরের জন্য গড়ে ৫ মিনিটে আমি একটি ফোন পাচ্ছি। এটা কোনও পদ্ধতি হতে পারে না।
যখন বদলির শুরু হয় তখন এ ধরনের বিব্রত পরিস্থিতি পড়তে হয়। বদলির তদবির এড়াতে তিনি মাঝেমধ্যে ফোন বন্ধ রাখেন বলেও জানান।
একই বক্তব্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, বদলির তদবিরের জন্য স্বাভাবিকভাবে অফিস করতে পারছি না। অফিসে বদলির তদবির না করার জন্য নোটিশ দেওয়ার পরও কোনও কাজ হচ্ছে না। এজন্য বদলির সব দর্শনার্থীর সাক্ষাৎ আপাতত বন্ধ রেখেছি।
তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে বদলির জন্য সচিব, মহাপরিচালক কারও সুপারিশ লাগে না। এটা জেলা বা বিভাগীয় কর্মকর্তা পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়। অনলাইনে আবেদন করার পর যোগ্য প্রার্থীরা অটোমেটিক বদলি হতে পারছেন। তারপরও এ ধরনের তদবির মোটেও কাম্য নয়।
জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের নিজ উপজেলা বা থানায় বদলির অনলাইন আবেদন গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন এসব আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে। এ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর এসব আবেদন জেলা-উপজেলা হয়ে অধিদপ্তরে এসে অনুমোদন পাবে। যাতে করে শিক্ষকদের এসব আবেদন কোনোভাবে আটকে না যায়, সেজন্য আগে থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এখন থেকে ভিড় করছেন তারা।
এর আগে গত ৩০ মার্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের নিজ উপজেলা বা থানায় বদলির অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়। যা চলে ১ এপ্রিল পর্যন্ত।
জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক আবেদন যাচাই হয়। ৩ ও ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসাররা আবেদন যাচাই শেষ করেছেন। ৫ থেকে ৭ এপ্রিল উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসাররা আবেদন যাচাই ও অগ্রগতি শেষ করেছেন। ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সহকারী শিক্ষকের আবেদন যাচাই ও অনুমোদন এবং প্রধান শিক্ষকের আবেদন যাচাই ও অগ্রগতি সম্পন্ন করেছেন। ১৫ থেকে ১৭ এপ্রিল বিভাগীয় উপ-পরিচালক আবেদন যাচাই ও অনুমোদন করেন। এরপর তা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বদলির অনলাইন আবেদন শুরু হয় ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি।
এনএম/এমএসএ