ইউআইইউকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছে

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) স্মারকলিপি দিয়েছেন রাজধানীর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা।
এতে তারা সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি, উপাচার্য ও বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেছেন। অভিযোগে শিক্ষার্থীরা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউআইইউকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, তারা ২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ‘ইউআইইউ রিফর্ম’ শিরোনামে আন্দোলন করে উপাচার্যের কাছে ১৩ দফা দাবি পেশ করেছিলেন। তবে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরেও দীর্ঘমেয়াদি কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রথমদিকে গ্রেডিং সিস্টেমসহ কয়েকটি দাবি নিয়ে আলোচনা হলেও পরবর্তীতে গ্রেডিং পদ্ধতি পরিবর্তনের মূল দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে কর্তৃপক্ষ। এর ফলশ্রুতিতে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করতে বাধ্য হন।
তারা আরও অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করে আন্দোলন দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। তাই সম্প্রতি এই এপ্রিল মাসে আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। কারণ, উপাচার্যের পদত্যাগের পূর্বে গত আট-নয় মাসেও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত সংস্কারমূলক দাবিগুলোর কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটেনি। তবে যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র উপাচার্য এবং একজন বিভাগের প্রধানের পদত্যাগের দাবি জানালেও উপাচার্যের পদত্যাগের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ২২ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কেন পদত্যাগ করেছেন, সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে বিভাজন তৈরি করে আন্দোলন দুর্বল করতে চেয়েছে এবং আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের শোকজ নোটিশসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। এমনকি প্রাক্তন শিক্ষার্থী আহসান রফিক ও তার পরিবারকে হেনস্তা করা হয়েছে এবং তার সার্টিফিকেট বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গত জুলাই মাসেও যখন তারা ক্যাম্পাস থেকে মিছিল করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল কমিটি বারবার বাধা দিয়েছে ও অসহযোগিতা করেছে। সিএসই বিভাগের প্রধান নুরুল হুদা বিশেষভাবে নতুন বাজার এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীরা ভিসির প্রশাসন ও নুরুল হুদাকে ‘আওয়ামী মদদপুষ্ট’ ব্যক্তিত্ব হিসেবেও অভিযোগ করেন।
স্মারকলিপিতে ইউআইইউকে একটি ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে’ রূপান্তর করার অভিযোগ তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের আন্দোলনের সময় কর্তৃপক্ষ ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার নামে আর্থিক সুবিধা আদায়ের জন্য নতুন পদ্ধতি চালু করে। যেখানে মিড টার্ম ও ফাইনাল পরীক্ষার জন্য কোর্স প্রতি ২০০০ ও ৩০০০ টাকা ধার্য করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও পরবর্তীতে ক্রেডিট প্রতি ১৫০০ ও ৩০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের ওপর অযৌক্তিক আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে। একইসঙ্গে বৈধ কারণ দেখানো সত্ত্বেও রিটেকের আবেদন অমানবিকভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বলেও তারা উল্লেখ করেন তারা।
আরও পড়ুন
বর্তমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা জানান, বিগত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও অবকাঠামোগত যেকোনো সিদ্ধান্ত কেবলই আর্থিক দিক বিবেচনা করে নেওয়া হয়েছে। এর জের ধরে শিক্ষার্থীরা গত ২৬ এপ্রিল সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নুরুল হুদার পদত্যাগ দাবি করেন এবং আল্টিমেটামের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন না হলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পুনরায় আন্দোলন শুরু করেন। ফল স্বরূপ উপাচার্য আবুল কাসেম পদত্যাগ করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আরও দায়িত্বশীল, সহনশীল ও স্বচ্ছ ভূমিকা নেওয়ার দাবিও জানান ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা।
আরএইচটি/এমএন