ইসলামিক স্কলারের সমন্বয়ে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের আহ্বান

দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান উন্নয়নে ইসলামিক স্কলারদের সমন্বয়ে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম।
শনিবার (১০ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে এ দাবি জানানো হয়।
ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাসির উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন- ফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, সিনিয়র সহ সভাপতি এবিএম জাকারিয়া, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ১৯৮০ সালে প্রথমবার বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগুলো জাতীয় বেতনের আওতায় আসে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালে হাসিনা সরকারের সচিব বলেছিলেন, জাতীয়করণ করতে ৪০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। অথচ হিসাব করে দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত টাকার প্রয়োজন হবে না। বর্তমানে যে টাকা দেওয়া হয়, তার সঙ্গে আড়াই হাজার কোটি টাকা দিলেই তা সম্ভব। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের আয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা নিলে সরকারের বাড়তি কোনো চাপ নিতে হবে না।
তারা আরও বলেন, বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী অপকর্মের অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাতে দেখা গেছে, ১৬ বছরের রাজত্বকালে প্রতিবছর ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের পাচারকৃত এই ডলারের পরিমাণ সর্বমোট বৈদেশিক সাহায্য ও দেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের সমান। এসব টাকায় যে পরিমাণ কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে শিক্ষাব্যয় দ্বিগুণ ও স্বাস্থ্য ব্যয় তিনগুণ বৃদ্ধি করা যেত। সুতরাং বর্তমানে শিক্ষায় অব্যবস্থাপনা দূর করতে শিক্ষা সংস্কার কমিশনের বিকল্প নেই।
সংগঠনটির দাবিগুলো হলো-
১. দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান উন্নয়নে ইসলামিক স্কলারদের সমন্বয়ে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা।
২. বৈষম্য নিরসনে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করা।
৩. সরকারি শিক্ষকদের ন্যায় ৪৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব ভাতা প্রদান করা।
8. মাধ্যমিকের শিক্ষক সংকট কাটাতে প্রাইমারির ন্যায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আলিয়া মাদরাসায় নারী কোটা বিলুপ্ত করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং এনটিআরসি থেকে পাশকৃতদের সবাইকে নিয়োগ প্রদান করে শিক্ষক সংকট দূর করা।
৫. মাধ্যমিকে সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের সরাসরি সহকারী প্রধান ও প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা।
৬. ঘোষিত সব ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা। যত দ্রুত সম্ভব প্রজ্ঞাপন জারি করা।
৭. অবসর ও কল্যাণ বোর্ডে বিশ্বস্ত সৎ জনবল নিয়োগ দিয়ে তহবিলের টাকা দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৮. দেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের আলোকে সব সেক্টরের সিলেবাস বিন্যাস করা। দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চালু করা।
৯. বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো ও শিক্ষা কমিশন গঠন করা।
১০. নিঃস্বার্থ সর্বজনীন বদলি প্রথা চালু করা।
১১. ইএফটিতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ ও শিক্ষক হয়রানি বন্ধ করা।
১২. আসন্ন বাজেটে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া।
১৩. আলিয়া মাদরাসার পাঠ্যপুস্তক আগের ন্যায় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক ছাপানোর ব্যবস্থা করা যাতে মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তা বজায় থাকে।
আরও পড়ুন
১৪. এক্সক্লুসিভ বা ইনক্লুসিভ ও বিভিন্ন জীবনধারার শব্দের মারপ্যাঁচে কোনোভাবেই যেন ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ বা এলজিবিটিকিউ পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা।
১৫. দেশের সব প্রাইমারি স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ প্রদান এবং ২০১৮ সালের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক-শূন্য পদে নিয়োগ বঞ্চিতদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে দ্রুত নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
১৬. আলিয়া মাদরাসায় ৩০ শতাংশ মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত, মাদরাসা শিক্ষার ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে মাদরাসা শিক্ষার শৃঙ্খলা ও স্বকীতায় প্রভাব পড়বে।
ওএফএ/এমএন