সোশ্যাল মিডিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত পোস্ট, নজরদারিতে প্রাথমিকের শিক্ষকরা

সরকারি কর্মচারী হিসেবে আচরণবিধি অনুসরণ না করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনভিপ্রেত ও সরকারবিরোধী পোস্ট, ভিডিও, সরাসরি লাইভ ও মন্তব্যে অংশ নিচ্ছেন অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তা— এমন অভিযোগে এবার কড়া নজরদারিতে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এর অংশ হিসেবে বুধবার (১৪ মে) ‘সোশাল মিডিয়া তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপন’ নামের একটি পুনর্গঠিত কমিটি প্রথম সভা করেছে। এ সময় এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে নেওয়া হয়েছে নজরদারিসহ কঠোর সিদ্ধান্ত।
সভায় সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে সরকারি নির্দেশিকা লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে শিক্ষকদের অনলাইন গতিবিধির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসাথে, নির্দেশিকা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে অধিদপ্তর।
জানা গেছে, সভায় ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ (পরিমার্জিত সংস্করণ)’ এবং এ সংক্রান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র পর্যালোচনা করা হয়। আলোচনায় উঠে আসে, কিছু শিক্ষক ও কর্মচারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন পোস্ট, ভিডিয়ো ও তথ্য শেয়ার করছেন, যা সরকারি নীতিমালার পরিপন্থি এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। আবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক নিয়ম লঙ্ঘন করে ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমে লাইভ করা, বিতর্কিত মন্তব্য, ভিডিও আপলোডসহ নানা কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছেন, যা স্পষ্টতই নির্দেশিকার লঙ্ঘন। এমনকি একজন সহকারী ইন্সট্রাক্টর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সরাসরি ট্যাগ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন বলেও সভায় উল্লেখ করা হয়।
সভায় কর্মকর্তারা জানান, মাঠপর্যায়ে বিদ্যমান মনিটরিং টিম থাকলেও কার্যত তারা নিষ্ক্রিয়। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং টিমগুলোর কার্যকারিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে— প্রতিটি পর্যায়ে ফোকাল পারসন নিয়োগ করে তাঁদের ই-মেইল, ফোন নম্বর, হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার সংগ্রহ করা হবে এবং টিম সদস্যরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে তথ্য আদান-প্রদান করবেন। পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত শিক্ষকদের কোনো বিতর্কিত বা নির্দেশিকা-বহির্ভূত কার্যক্রম মনিটরিং করে প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হবে।
এ সময় বেশকিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে— প্রতি দুই মাস পরপর উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সভা আয়োজন করতে হবে এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তথ্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠাতে হবে। একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে-সব পোস্ট, ভিডিও বা তথ্য সন্দেহজনক মনে হবে, সেগুলো কমিটির সভায় উত্থাপন করে প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে যে, শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের কেউ নির্দেশিকা বিরোধী কোনো কার্যক্রমে জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণবিধিমালা ও ২০১৮ সালের শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরএইচটি/এআইএস