সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অধিভুক্ত কলেজ করার দাবি

রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষকরা।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা বলেন, কবি নজরুল কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজসহ সাতটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বহুদিন ধরে স্বল্প খরচে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা দিয়ে আসছে। এই কলেজগুলো সংকুচিত করা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশাধিকার কমে যাবে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বড় ধাক্কা হবে।
শিক্ষকরা বলেন, ইডেন ও বদরুন্নেসার মতো কলেজগুলো রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েদের জন্য উচ্চশিক্ষার অন্যতম আশ্রয়স্থল। এ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবর্তন করলে নারীশিক্ষা ও ক্ষমতায়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি সংবিধানের ২৮(১), ২৮(২), ২৮(৪) অনুচ্ছেদ এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG ৪.৩ ও ৪.৪)-এর পরিপন্থি হবে।
তারা সতর্ক করে বলেন, অধ্যাদেশ প্রণয়নের আগে অংশীজনের মতামত না নিলে বড় ধরনের শিক্ষার্থী আন্দোলন তৈরি হতে পারে। ইডেন কলেজের সাম্প্রতিক আন্দোলন তারই ইঙ্গিত বহন করে।
শিক্ষকরা রংপুরের ঐতিহাসিক কারমাইকেল কলেজের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানেও বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের উদ্যোগ আন্দোলনের মুখে বন্ধ হয়। পরে আলাদাভাবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং কারমাইকেল কলেজ কলেজ হিসেবেই রাখা হয়।
সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সাত কলেজকে অব্যাহতি দেওয়ার পর একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু সম্প্রতি ‘ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন কাঠামোর খবর প্রকাশিত হওয়ায় শিক্ষক সমাজে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তার মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কলেজগুলোর সক্ষমতা কমে যাবে এবং শতবর্ষের ঐতিহ্য বিনষ্ট হবে।
তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০-এ কলেজগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্রন্থাগার ও ল্যাব সম্প্রসারণের কথা থাকলেও উল্টোভাবে এসব প্রতিষ্ঠানকে সংকুচিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মানববন্ধনে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, সাত কলেজকে বিদ্যমান অবকাঠামো ও মানবসম্পদ কাজে লাগিয়ে কলেজিয়েট বা অধিভুক্ত কাঠামোয় পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে। পাঠদান ও প্রশাসনের দায়িত্ব শিক্ষা ক্যাডারের অধীনে রাখতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণা বাজেট, ল্যাব ও লাইব্রেরি সুবিধা বৃদ্ধি, আবাসন সংকট নিরসন এবং বৃত্তি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৬ মার্চ রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে পৃথক করে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা দেয় সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রস্তাবিত নাম নির্ধারণ করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। কলেজগুলো হলো—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।
আরএইচটি/এআইএস