বেতন-ফি মওকুফসহ আট দাবিতে ঢাবিতে মতবিনিময় সভা

করোনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন-ফি মওকুফ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকাদানসহ আট দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের তৃতীয় তলায় এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অংশগ্রহণ করেন।
ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি ফয়েজ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন- জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য গণমাধ্যমকর্মী রহমান মোস্তাফিজ, প্রথম আলোর সহ-সম্পাদক সোহরাব হাসান, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহিন হোসেন প্রিন্স, প্রকৌশলী আল্লামা আল-রাজি, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও অভিভাবক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক তনুজ কান্তি দে, সাবেক ছাত্রনেতা ও অভিভাবক মোস্তাক হোসেন, ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি মোতাহার হোসেন জুয়েল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজীব কান্তি।
সভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য গণমাধ্যমকর্মী রহমান মোস্তাফিজ বলেন,‘করোনার সময়ে দেখেছি শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নিতে অভ্যস্ত হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের উপর অনলাইন ক্লাস চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার শিক্ষার্থীদের সুবিধা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। হাইকোর্টের রায় অমান্য করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’
প্রথম আলোর সহ-সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘স্বাধীনতার এত বছর পরেও শিক্ষাধারার কোন পরিবর্তন হয়নি। বারবার শিক্ষানীতি ঘোষণা করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয় নাই। দেশের সব শিক্ষার্থীকে যুক্ত করে ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি আদায় করে নিতে হবে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা দরকার উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডা. এসএম ফজলুর রহমান বলেন, ‘করোনায় দেশের বহু মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে। শিফট করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু করা প্রয়োজন। সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও ছাত্র আন্দোলনের ভয়ে সরকার এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা দরকার।’
সভাপতির বক্তব্যে ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘বেতন-ফি মওকুফসহ আট দফা দাবিতে শিক্ষার সংকট নিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন তার আন্দোলন চালিয়ে যাবে। সব শিক্ষার্থীকে যুক্ত করে ছাত্র ইউনিয়ন তার লড়াই সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
মতবিনিময় সভায় আট দফা দাবিতে সংহতি জানিয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএম আকাশ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক রুবাইয়াত ফেরদৌস, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. আব্দুজ জাহের, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লুনা নূর, মানবেন্দ্র দেবসহ বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবিগুলো হলো- করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতন ফি-মওকুফ করা, নামে-বেনামে ফি আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার রোডম্যাপ ঘোষণা করা, সেশনজট রোধে দ্রুত এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আবাসিক হল খুলে দিয়ে আবাসনের ব্যবস্থা করে পরীক্ষা নেওয়া, অছাত্র-সন্ত্রাসীদের হল থেকে বিতাড়ন করা এবং অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে টিকা দেওয়া।
ওএফ