৪ দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিল পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা
চার দাবিতে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। স্মারকলিপিতে করোনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্ষতি পোষাতে বিশেষ উদ্যোগ, টিউশন ফি ৫০ শতাংশ কমানোসহ চারটি দাবি উত্থাপন করেছেন তারা।
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ শেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান শিক্ষার্থীদের চার জনের একটি প্রতিনিধি দল। তাদের দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে আসেন। এর আগে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যয়রনত শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) কারিগরি শিক্ষাবোর্ড ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয়। স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা জানান, কারিগরি বোর্ড হঠাৎ করে গত ৮ জানুয়ারি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
ফেব্রুয়ারি মাসে ১৯ তারিখ থেকে এ পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ফরম পূরণের কথা বলা হয়। কিন্তু গত এক বছর একটি ক্লাসও হয়নি। কোন প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা নেওয়া হবে তা স্পষ্ট করেনি। এতে আমরা পরীক্ষা নিয়ে অন্ধকারের মধ্যে রয়েছি।
শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, করোনার মধ্যে পলিটেকনিকগুলো ভর্তি কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে হয়েছে। তারা এখন পুরো টিউশন ফি দাবি করছে। আমরা এসব অযৌক্তিক ফি প্রত্যাহার চাচ্ছি। কিন্তু কারিগরি বোর্ড কোনো সহযোগিতা করছে না। বাধ্য হয়ে বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছি।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি করেছে এর মধ্যে রয়েছে- করোনার মধ্যে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পোষাতে এক বছর সেশনজট কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। হঠাৎ স্থগিত হওয়া দ্বিতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ পর্বের তাত্ত্বিক পরীক্ষাগুলো অটোপাস দিয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলো পরবর্তী পর্বের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া এবং প্রথম, দ্বিতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম পর্বের ক্লাসগুলো চালু করে শর্ট সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া এবং অতিরিক্ত ফি প্রত্যাহার এবং প্রাইভেট পলিটেকনিকের সেমিস্টার ফি ৫০ শতাংশ মওকুফ করা এবং সকল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বরাদ্দ করা।
বিক্ষোভকারীরা জানান, করোনার মধ্যে দেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের জন্য সেমিস্টার ফি ও অতিরিক্ত ফি দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেরই ঝরে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত ফি আদায় ও সেমিস্টার ফি আদায় চরম অমানবিকতার পরিচয়। অবিলম্বে সেমিস্টার ফি ও অতিরিক্ত ফি মওকুফের দাবি জানান তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কোনো সহিংস আন্দোলনে বিশ্বাস করি না। আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত প্রয়োজনে সারাদিন আমাদের কর্মসূচি পালন করব।
গতকাল কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ কয়েক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন তারা।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে চার বছরের ডিপ্লোমা করানো হয়। চার বছরে মোট আটটি সেমিস্টার। আগস্ট মাসে ভর্তি হয়ে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত (আগস্ট-জানুয়ারি) সেমিস্টার চলে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এই ধারায় বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন।
করোনার কারণে প্রায় ১১ মাস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে তারা দুই সেমিস্টার পিছিয়ে পড়েছেন এসব শিক্ষার্থীরা। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কাছে চারটি দাবি জানিয়েছেন তারা।
এর আগে একই দাবিতে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে গেলে কদম ফোয়ারার কাছে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন। তারা ব্যারিকেডের ভেতরেই বিক্ষোভ করেন।
এনএম/এফআর