শিশুদের হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত নিশ্চিত করতে পারলে উপকৃত হবে সবাই

একটি শহর যদি ৮ থেকে ৮০ বছরের মানুষের জন্য নিরাপদ ও প্রবেশগম্য হয়, তাহলে শহরটি সবার জন্যই নিরাপদ ও প্রবেশগম্য। একইভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হলে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সবাই উপকৃত হবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ্যাস্ট্রোজেনেকা, কার ফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাসের খান, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেসা, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এমএ মান্নান মনির, ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট অ্যান্ড একাডেমিক আহমাদ আল মুহাইমিন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রভাষক নিয়াজ মো জাফরী।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার।
এ সময় পবা সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া শিশুবান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর গড়ে তোলা সম্ভব নয়। নগরের ৬০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে হেঁটে যাতায়াত করেন কিন্তু নগর পরিকল্পনায় তাদের উপেক্ষা করে প্রাধান্য দেওয়া হয় ৫-৭% জনগণকে, যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, সমাজ ব্যবস্থা উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
আহমাদ আল মুহাইমিন বলেন, সড়ক ও ফুটপাত আমাদের গুরুত্ব গণপরিসর এবং এখানে শিশু-কিশোরদের প্রাধান্য নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ঢাকা শহরে এমন অনেক এলাকা আছে, যেখানে রাস্তাই একমাত্র গণপরিসর। নগর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, নীতিনির্ধারকসহ সকল অংশীদার এবং শিশুদেরও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
নিয়াজ মো. জাফরী বলেন, শুধুমাত্র অসংক্রামক রোগ নয়, কোভিডের মতো সংক্রামক রোগ প্রতিহত করার জন্যও হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াত জরুরি। কারণ, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াত করা সম্ভব। পাশাপাশি গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করা প্রয়োজন। একটা শহর কতটা উন্নত তা নির্ভর করে তার গণপরিবহন ব্যবস্থার উপর, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যার উপর নয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের জন্য আমাদের শহরটি নিরাপদ করে গড়ে তুলতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে গাউস পিয়ারী বলেন, আমাদের নগরে শিশুদের খেলার জায়গার পরিবর্তে গাড়ি পার্কিংকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমরা একটি অসুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলছি এবং বয়স্ক মানুষদের আরও গৃহবন্দি করে ফেলছি। আমাদের সকলকে একত্রিত হয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সভায় রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা দূর করে নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ পরিবেশ তৈরির জন্য তিনটি নকশার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন সুপারিশ, যেমন- বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ, সড়কের পাশ থেকে পার্কিং, দোকানের মালামাল অপসারণ, বাসার সামনে সবুজায়ন বৃদ্ধি, সড়কের পাশে পকেট পার্ক তৈরি ইত্যাদি তুলে ধরেন।
এএজে/এসকেডি