বিশাল, মার্জনা করো...

সোমবার (৭ নভেম্বর) সকালে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন তরুণ গীতিকবি ও সাংবাদিক ওমর ফারুক বিশাল। মাত্র ৩২ বছর বয়সে জীবনের সব আয়োজনকে তুচ্ছ করে অনাকাঙিক্ষতভাবে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন এই তরুণ। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সংগীতাঙ্গনের অনেকেই। এই গীতিকার-সাংবাদিককে স্মরণ করে লিখেছেন তারই সহযোদ্ধা গীতিকবি সোমেশ্বর অলি
ছেলেটার মধ্যে কী বাউলিয়ানা ছিল! ছিল কী কবির ভঙ্গিমা? কবি হতে চেয়েছিল। চেয়েছিল গানে হবে তার স্বতন্ত্র অবস্থান। কিছুটা তো হলোও। কিন্তু অসমাপ্ত রয়ে গেল তার স্বপ্ন, শেষ হলো না কত কাজ!
দীর্ঘ অথচ পরিপাটি বাবরি দোলানো চুলের কবি ওমর ফারুক বিশালের যাত্রাপথ এত স্বল্প হবে কে জানতো! সড়কে জীবন গেলে আমরা কেবল আফসোস করি, কিছুদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলি, তারপর হয়তো ভুলেও যাই। কৃতি মানুষদের মধ্যে কতজনকে যে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পরপারে যেতে হল অকালে, সেই খতিয়ান তুলে ধরলে নিজের নামও স্পষ্ট হয়ে ওঠে অজান্তে; অথচ এর কোনো প্রতিকার-ব্যবস্থা নেই। অকাল প্রয়াণের সব শেষ নাম, বিশাল। এমন শোক সহজে কেটে যায় না, এমন শোক পরিবার-পরিজনকে আহত করে রাখে অবশিষ্ট জীবন। একে একে এভাবে প্রতিভা-হত্যার, জীবন কেড়ে নেয়ার দায় নেয় না রাষ্ট্র বা সমাজ। আহা, জীবন কত তুচ্ছ!
বিশাল গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করেছেন গানে, গীতিকবিতায়। কিছু গানে তার বক্তব্য, উপস্থাপনার কৌশল ও কাব্যগুণ আমাকে ভাবিয়েছে, দ্বিতীয়বার শুনতে বাধ্য করেছে। আমার পছন্দের সংগীতশিল্পী অনুপম রায় বিশালের কথায় গান গেয়েছিলেন— এটা জেনে ও সেই গান শুনে বেশ ভালো বোধ হয়েছিল আমার।
বিশাল রচিত সাব্বির নাসিরের 'আমারে দিয়া দিলাম তোমারে' গানটা প্রথম শুনে মনে হয়েছিল, এটা তো আমারই লেখা গান, এমন বাউলিয়ানা তো আমি লালন করি, আমার লিরিকেও এসব ধরতে চাই। আহা, বিশালের প্রতি আমার প্রথম মুগ্ধতা এই গান দিয়ে। এরপর 'আধা', ‘বাড়ির খোঁজে’, ‘পোড়ামন’, ‘তোমার ভালো মন্দে, ‘দুঃখদল’সহ আরও কিছু গানে বিশালকে অন্যরকমভাবে পাওয়া গেছে।
ছেলেটার সঙ্গে আমার যোগাযোগ উল্লেখ করার মতো নয়। আমার কাজের প্রতি তার ভালো লাগার খবর তার নিজের মুখেই শুনেছি একাধিকবার। আমিও যতটুকু সম্ভব তার সঙ্গে মিশেছি রাখঢাকহীন। আমার পুরনো কর্মস্থল বাংলানিউজে চাকরি করার আগ্রহ প্রকাশ করলে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম, বড় ভাই হিসেবে। এ কারণে আমার প্রতি তার কৃতজ্ঞতার শেষ ছিল না।
শেষবার দেখা, কয়েক মাস আগে, খুব সম্ভবত জিগাতলা মোড়ে কোনো এক সন্ধ্যায়। বিশাল ছিল কয়েকজনের সঙ্গে, আমি সস্ত্রীক বাসায় ফিরছিলাম। কিছু এলোমেলো কথা, গীতিকবি সংঘ প্রসঙ্গ, 'ভালো থাকবেন, ভাই'— এই তো। বিশাল, কতটা ভালো আছি, এই লেখাটা পড়ে বুঝে নিও।
মোবাইলের নোটবুকে এই লেখা যখন লিখছি, আমিও তখন সড়কে, গাড়িতে, গতিময় জীবনের পথে। অনিশ্চিত ও একমুখী এই যাত্রায় কে কখন হারিয়ে যাব কে জানে। কিন্ত কিছু প্রস্থান দাগ রেখে যায়, অপরাধ বোধ জাগিয়ে তোলে। ওমর ফারুক বিশাল, আমাদের অপরাধ মার্জনা করো।
আরআইজে