আমার ছেলে হারাম খায় না, সমালোচনার জবাবে খালিদের স্ত্রী

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও চাইম ব্যান্ডের ভোকালিস্ট খালিদ হোসেনের মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন না তার স্ত্রী শামীমা জামান ও ছেলে জুহাইফা আরিক। তারা দু’জনেই সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকেই জেনেছেন গায়কের মৃত্যুর খবর।
বাবার মৃত্যুর খবরে খালিদের একমাত্র ছেলে জুহাইফা আরিক নিউইয়র্ক থেকে এক ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা সম্পূর্ন সুস্থ ছিলেন। তিনি ভালো ছিলেন। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। আমি এই মুহূর্তে বিস্তারিত বলতে পারছি না। পরে বলবো। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেবেন।’
এদিকে খালিদের মৃত্যুর পর নিউইয়র্ক থেকে ছেলের ভিডিওবার্তা পাঠানোর বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি অনেকে। এমনকি ভিডিওর সময় আরিকের সানগ্লাস পরে থাকা নিয়েও সমালোচনা করেছেন নেটিজেনরা।
বিষয়গুলো ভালোভাবে নেননি খালিদ হোসেনের স্ত্রী। নিউইয়র্ক থেকেই এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। শামীমা জামান বলেন, ‘এই ছেলে ১২ বছর বয়স থেকে নামাজ পড়ে, মাশাল্লাহ, এই ছেলের গানের গলা থাকা সত্ত্বেও গান না শিখে কোরআন শিখেছে। এই ছেলে বাবাকে নামাজ পড়তে বলতে বলতে হতাশ হয়েছে। সে তার অসুস্থ মায়ের সেবা করেছে ৭ মাস, রাত ৪ টা পর্যন্ত বায়েজিদ বোস্তামির মতো দাঁড়িয়ে থেকে। ছেলে তার মায়ের মৃত্যুর অপেক্ষায় একা একটি বাসায় কাটিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, এই ছেলে তার আল্লাহর হুকুম পালন করতে আমেরিকান মেয়েদের আহবান সত্ত্বেও একটা প্রেম করেনি। এই ছেলে তেমন বন্ধু হয়না যখন সে দেখে বন্ধুগুলো গাজা খায়। এই ছেলে প্রতিটি কাজে আগে আল্লাহর বিধান কি জেনে নেয়, আমেরিকার স্কুলের হারাম চিকেন দেখলে না খেয়ে থাকে তবু হারাম পেটে দেয়না, এই ছেলেকে তার বাবার টাকা দিতে হয়না, তার মা তার জন্য যথেষ্ট উপার্জন করে। তার বাবার চিন্তা এই ছেলেকে নিয়ে নয় যতটা, তার গান আর ভক্ত শিষ্যদের নিয়ে। তাই খুব খেয়াল করে আমার ছেলেকে নিয়ে না জেনে একটা খারাপ কথা উচ্চারণ করলে ওপর আল্লাহ তার বিচার করবেন।
খালিদের মৃত্যুর বিষয়টি ছেলে বুঝে উঠতেই পারেনি জানিয়ে শামীমা বলেন, ‘আরিক স্কুল থেকে এসে বুঝতেও পারছেনা আসলে কি ঘটে গেছে, ও স্মার্ট তো তাই হঠাৎ করে খ্যাত হয়ে কিভাবে কথা বলবে? যত্তসব। আর সানগ্লাস? উন্নত দেশে কান্না লুকাতেও সানগ্লাস পরে মানুষ। শুধু সাংবাদিক তানভীর তারেকের অনুরোধে ও এই কথাগুলো বলতে রাজি হয়েছে। বড়দের সম্মান করে বলে, নয়তো মিডিয়ায় কথা বলতে বা কাজ করতে ও পছন্দ করেনা।’
জানা যায়, অনেক দিন ধরেই গানের সঙ্গে ছিলেন না ‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একেবারেই গান থেকে দূরে সরে যান, বেছে নেন প্রবাস জীবন। আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস করতেন। তার একমাত্র ছেলে আরিক সেখানে পড়াশুনা করেন। মাঝে মাঝে দেশে আসলেও একাই থাকতেন খালিদ। নিজের গন্ডির বাইরে খুব একটা বের হতেন না। কিছুদিন থাকতেন ফের উড়াল দিতেন প্রবাসে। এবারও এলেন। কিন্তু আর প্রবাসে ফেরা হলো না। ফিরলেন অনন্তের পথে।
আশির দশকের প্রথম দিকে জনপ্রিয় ব্যান্ড চাইমের মাধ্যমে সঙ্গীতাঙ্গনে প্রবেশ করেন খালিদ। ব্যান্ডটির হয়ে বেশ কিছু অ্যালবামে গেয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে নব্বই দশকে সলো ক্যারিয়ারেও সফলতা পান।
‘সরলতার প্রতিমা’, ‘যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে’, ‘কোনো কারণে ফেরানো গেল না তাকে’, ‘হয়নি যাবারও বেলা’, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’, ‘তুমি নেই তাই’, ‘নাতি খাতি বেলা গেল’, ‘কীর্তনখোলা নদী’, ‘ঘুমাও’– এর মতো বহু জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন খালিদ।
প্রিন্স মাহমুদ, জুয়েল-বাবুর সুরে তার গানগুলো শ্রোতাদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে আগেই। তবে ২০১০ পরবর্তী সময়গুলোতে গানে অনিয়মিত ছিলেন খালিদ। দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান নিউ ইয়র্কে। সম্প্রতি তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। জনপ্রিয় এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে শোবিজ অঙ্গনে।
এনএইচ