চেস্টার বেনিংটন : চেয়েছিলেন সবকিছু ধ্বংস করে পালিয়ে যেতে

আজ, ২০ জুলাই। ঠিক আট বছর আগে আজকের এই দিনে বিশ্বসংগীত হারায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে; যার কণ্ঠে ছিল যেমন রাগ, তেমন আবেগ আর বেদনা। তিনি আর কেউ নন, তরুণ প্রজন্মের অন্যতম আইডল চেস্টার চার্লস বেনিংটন।
২০১৭ সালের এই দিনে ৪১ বছর বয়সে এক আত্মঘাতি সিদ্ধান্তে পৃথিবীকে বিদায় জানান এই মার্কিন সংগীত তারকা। ক্যালিফোর্নিয়ার নিজের বাসভবন থেকে উদ্ধার হয় তার ফাঁস নেওয়া মরদেহ। এ খবর ছড়াতেই যেন তার অনুরাগীদের মাথায় বাজ পড়ে বসে! তার আকস্মিক এই বিদায়ে কেঁদে ওঠে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার অসংখ্য ভক্ত; সোশ্যাল মিডিয়ায় ওঠে শোক বার্তার ঝড়।
চেস্টার তার দ্বরাজ কণ্ঠে দিয়ে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য গান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘ইন দ্যা এন্ড’, ‘নাম্ব’, ‘ক্রলিং’, ‘ব্লিড ইট আউট’, যা শ্রোতাদের হৃদয়ের সঙ্গে এক অদৃশ্য অন্তরঙ্গ তৈরি করে রেখেছে আজও।

আরও পড়ুন
তবে কি শুধু চেস্টারের ভক্তরাই কষ্ট পেয়েছিলেন? তার বিদায়ের পর এখনও সেই আলো-সজ্জিত, সেই জাঁকজমক মঞ্চে চেস্টারকে খুঁজতে থাকেন তার সহশিল্পীরাও। ময়দানেও সেই আগের মতো দেখা মেলে না চেস্টার প্রিয় ভক্তদের। তবে চেস্টারের সহশিল্পীরাও যে ব্যাপকভাবে ভেঙে পড়েন বিদায়ে, তা বলার বাকি রাখে না।

যেমন- চেস্টারের মৃত্যুর পর, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার ব্যান্ডদল লিনকিন পার্ক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা আর ‘ওয়ান মোর লাইট’ গানটি মঞ্চে গাইবে না। এটি ছিল ব্যান্ডের সঙ্গে চেস্টারের শেষ অ্যালবামের শিরোনাম গান। ব্যান্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাইক শিনোডা নেন এই সিদ্ধান্ত। বলেছিলেন, ‘গানটি মূলত আমাদের এক নারী সহকর্মীর মৃত্যুর পর লেখা হয়েছিল। কিন্তু চেস্টারের মৃত্যুর পর সবাই ধরে নেয়, এটি তার জন্যই। গানটি এখন এতটাই বেদনাদায়ক যে, আমরা আর মঞ্চে গাইতে পারি না।’

১৯৭৬ সালের ২০ মার্চ অ্যারিজোনার ফিনিক্সে জন্ম নেন চেস্টার চার্লস বেনিংটন। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি ছিল তার দুর্দান্ত আকর্ষণ। তাকে সংগীতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন ব্যান্ড ‘ডিপেচ মোড’ ও ‘স্টোন টেম্পল পাইলটস’। পরবর্তীতে যাদের ব্যান্ডেও কিছু সময়ের জন্য প্রধান কণ্ঠশিল্পী ছিলেন চেস্টার।

কিন্তু শৈশব থেকেই এক ধু ধু অন্ধকারের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে এসেছেন চেস্টার। মাত্র ৭ বছর বয়সে পরিচিত এক পুরুষের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হন। ভয়ে কাউকে কিছু বলেননি। দীর্ঘ ছয় বছর চলতে থাকে এই নির্যাতন। এরপর তার বয়স যখন ১১, তখন ঘটে তার বাবা মা এর বিচ্ছেদ; যা আরও ভেঙে ফেলে চেস্টারকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন মাদকের সঙ্গেও। তাই তো ক্ষোভ নিয়ে চেস্টার একসময় বলেই ফেলেছিলেন, ‘আমি সবকিছু ধ্বংস করে পালাতে চেয়েছিলাম।’

চেস্টারের অনুরাগীরা মনে করেন, তার কণ্ঠের শক্তির উৎস ছিল তার অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণার স্পষ্ট প্রতিধ্বনি। যেই প্রতিধ্বনিএখনও স্পন্দিত হয় কোটি শ্রোতার হৃদয়। তাই তো আট বছর পরেও চেস্টার বেনিংটন বেঁচে আছেন, ভক্তরা তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন।
ডিএ