ঢাকা শহরে সন্তান জন্ম দেওয়া বাবা-মা সবচেয়ে বড় অসহায়

রাজধানীর উত্তরায় বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে, যাদের মধ্যে ২৫ জনই শিশু। এছাড়াও আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন শতাধিক।
মর্মান্তিক এই ঘটনা সারাদেশে শোকের মাতম সৃষ্টি করেছে। কোমলমতি শিশুদের এমন মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না দেশের মানুষ। শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন তারকারাও।
তাদেরই একজন অভিনেত্রী শাহানাজ খুশি। ব্যক্তিজীবনে দুই সন্তানের জননী তিনি। উত্তরার বিমান দুর্ঘটনার পরে সোমবার রাতে আর ঘুমাতে পারেননি অভিনেত্রী।
এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে শাহানাজ খুশি বলেছেন, ঢাকা শহরে সন্তান জন্ম দেওয়া বাবা-মা সবচেয়ে বড় অসহায়। কারণ তারা সার্বক্ষণিক এক যুদ্ধের মধ্যে থাকেন।
অভিনেত্রী তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আমার ধারণা, কোনো মানুষ কাল রাতে ঘুমাতে পারে নাই। সব মা-বাবা এবং অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ অসহায়ভাবে জেগে ছিল। সবার গলার কাছে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের কালো ধোঁয়া দলা পাকিয়ে আছে, সেটা না পারা যায় গিলতে, না পারা যায় সহ্য করতে!
আরও পড়ুন
এরপর অভিনেত্রী লেখেন, ঢাকা শহরে সন্তান জন্ম দেয়া মা-বাবা সবচেয়ে বড় অসহায়। কেউ কল্পনাও করতে পারে না সেই মা-বাবার সার্বক্ষণিক যুদ্ধ। এছাড়াও যে মা-বাবার অর্থনৈতিক হিসাব কষে চলতে হয়, রিক্সা/সিএনজি/ বাসে চড়তে হয়, তাদের জীবন আরও দ্বিগুণ কঠিন।
‘বাচ্চার জন্মের পর থেকেই ভাবতে হয়, কোন স্কুলে পড়াতে পারবো, কিভাবে ভর্তি করবো, বাসা সেখান থেকে কতটা দুরে, যাওয়া আসা কিভাবে হবে, উপার্জনের সাথে মিলবে কিনা সব ইত্যাদি বিশদভাবে।
ভর্তি করতে পারলে এক রকম, না পারলে অন্য রকম কষ্ট। স্কুল, কোচিং বিজনেস, সামাজিকতা, ঘরকন্না সব মিলিয়ে জীবনের সব দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়। সন্তানের প্রয়োজনে তখন হয় মা বাবার সুর্যোদয়-সুর্যাস্ত। পিতামাতা হবার অপার স্বপ্নের আনন্দ স্কুল-কলেজ-কোচিং এর টাকা গুনতে গুনতে ঝাপসা হয়ে যায়।’
ঢাকা শহরের বাবা-মায়ের জীবনে সন্তান ছাড়া কোনো স্পেস নাই উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী আরও বলেন, সব মা-বাবারই যুদ্ধ করতে হয়, কিন্তু ঢাকা শহরের মা বাবার জীবনে সন্তান ছাড়া কোন স্পেস নাই। তাদের নানান দুর্ভাবনার মধ্যে কিছুক্ষণের ভাবনার থেকে মুক্তির জায়গা স্কুল। সেখানে বাচ্চাদের দিয়েই কেউ কাজে যায়, বাজারে যায়, ঘড়ির কাঁটার সাথে দৌড়ে সব দায়িত্ব শেষ করার চেষ্টা করে, অতঃপর আবার দৌড়ে স্কুলে-কোচিংয়ে যায়…….।
‘এ বাঁচার মানে কেউ বুঝবে না! কেউ জানে না মা-বাবার সন্তানই কোন পুর্নতা-কি অপার শুন্যতা! অল্প কিছুদিনে মধ্যে বরাবরের মতোই সবাই সব ভুলে যাবে, স্বাভাবিকভাবেই চলবে সব। শুধু মা বাবার বুকেই জ্বলবে এ আগুন আমৃত্যু- মাইলস্টোন স্কুলের ধোঁয়া তাদের নিঃশ্বাস-চোখ থেকে কোনদিন সরবে না! আহা রে আমাদের কলিজা ছেঁড়া ধন! হায় রে আমাদের মা-বাবার হবার আজন্ম অসহায়ত্ব!’
এনএইচ