ডিজিটাল সহিংসতার বিরুদ্ধে রেডিও স্বাধীন ও এশিয়াটিকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

জাতিসংঘ ঘোষিত 16 Days of Activism Against Gender-Based Violence কর্মসূচি চলছে এ বছরের বিশ্বব্যাপী প্রতিপাদ্য- নারীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সহিংসতার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ। এই থিমকে সামনে রেখে রেডিও স্বাধীন এবং এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশনস লিমিটেড যৌথভাবে চালু করেছে ব্যতিক্রমী সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন #MyNumberMyStory।
এই ক্যাম্পেইনের মূল ভাবনা হলো— নারীরা প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি মাসে অনলাইনে কতবার হয়রানির শিকার হন, সেই সংখ্যাটি তারা নিজের শরীরে লিখে প্রকাশ করবেন। এই সংখ্যা কেবল পরিসংখ্যান নয়; এটি প্রতিবাদের ভাষা। এটি একেকটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার অনুবাদ। প্রতিটি সংখ্যা জানায় একজন নারীর রাগ, কষ্ট এবং দীর্ঘদিনের নীরব যন্ত্রণা।
ক্যাম্পেইন শুরু হতেই বিভিন্ন পরিচিত নারী মুখ এতে যোগ দেন। যোগ দেন নানা বয়স ও পেশার অসংখ্য নারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা সামনে আনেন নিজেদের সংখ্যা। অনেকে জানান, অনলাইনে কটূক্তি, অশ্লীল বার্তা, হুমকি কিংবা হয়রানি এখন তাদের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা। তাদের গল্পগুলো ছড়িয়ে পড়তেই বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
তবে ক্যাম্পেইন চলাকালেই দেখা যায় এক উদ্বেগজনক বাস্তবতা। এসব পোস্টের নিচে বাড়তে থাকে বিদ্রূপ, তাচ্ছিল্য ও অপমানজনক মন্তব্য। অনেকে এই নারীদের অভিজ্ঞতাকে হালকা করে দেখার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ উল্টো দোষ চাপান নারীদের ওপরই। এতে স্পষ্ট হয়, ডিজিটাল সহিংসতা শুধু বাস্তব, বরং ক্রমশ নতুন রূপ নিচ্ছে।
এই প্রতিক্রিয়াই প্রমাণ করে, সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ এখনো অনেক বাকি। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে পাওয়া অভিজ্ঞতা দেখায়, নারীদের জন্য নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ গড়ে তুলতে এখনই প্রয়োজন আরও জোরালো উদ্যোগ। প্রয়োজন আইনি সচেতনতা, সামাজিক সহমর্মিতা এবং প্রযুক্তিনির্ভর সুরক্ষা।
রেডিও স্বাধীন ও এশিয়াটিক বলছে, #MyNumberMyStory শুধু একটি ক্যাম্পেইন নয়। এটি একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নারীরা তাদের অভিজ্ঞতা বলতে পারেন। শেয়ার করতে পারেন নিজের লড়াইয়ের গল্প। তারা আশা করছেন, এই উদ্যোগ সমাজে বাস্তব পরিবর্তনের আলোচনাকে আরও এগিয়ে নেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল সহিংসতা এখন বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশেও এর মাত্রা বাড়ছে। তাই এ ধরনের প্রচারণা শুধু সময়োপযোগী নয় বরং প্রয়োজনীয়।
১৬ দিনের এই কর্মসূচি মনে করিয়ে দেয়- অনলাইন ও অফলাইন, সব জায়গায় নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব পালনে সচেতনতা, প্রতিবাদ ও সম্মিলিত উদ্যোগই পারে বড় পরিবর্তন আনতে।