সেই ঐতিহাসিক গানের গল্প শোনালেন হাসান মতি

আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক গান। এরমধ্যে অন্যতম একটি ‘যদি রাত পোহালে শোনো যেত’।
১৯৯০ সালে গানটি লিখেছিলেন দেশের প্রখ্যাত গীতিকার হাসান মতিউর রহমান। সুর করার পাশাপাশি এতে সর্বপ্রথম কণ্ঠ দেন মলয় কুমার গাঙ্গুলী। বিশেষ এই দিনে গানটি তৈরির প্রেক্ষাপট জানিয়েছেন হাসান মতিউর রহমান।
তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের কথা। ফ্রান্স শাখা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে পরিবেশনের জন্য বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে দুটি গানের পরিকল্পনা করা হয়। আওয়ামী লীগের এক নেতা আমাকে বলেন, আমি যেন মলয় কুমার গাঙ্গুলীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার সঙ্গে যোগাযোগের পর রাতে গানটি লিখতে বসি।
হাসান মতিউর রহমান বলেন, অনেক ভেবেও কোনো লাইন পাচ্ছিলাম না। ঠিক আজানের আগে একটা প্লট পেলাম। মনে হলো রাত তো শেষ হয়ে যাচ্ছে। ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই!’ সঙ্গে যোগ করলাম, ‘যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো বন্ধবন্ধুর মুক্তি চাই!’ এতে কল্পনায় বঙ্গবন্ধুকে যেমন বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে, তেমনি জেল থেকে তাকে মুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। এরপর পুরো গানটা শেষ করি। এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার প্রথম কোনো লেখা। সকাল ১০টায় মলয় কুমার গাঙ্গুলীর কাছে গানটি নিয়ে যাই। লেখাটা পড়ে তিনি বললেন, ‘অসাধারণ হয়েছে। চলেন সুর নিয়ে বসে যাই।’
এই গীতিকার জানান, লেখার সময়ই সুরের একটা আইডিয়া মাথায় চলে আসে। সেটা শেয়ার করার পর মলয় কুমার গাঙ্গুলী জন্য কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়। ফ্রান্স শাখা আওয়ামী লীগের ওই সম্মেলনে নিজে উপস্থিত থেকে মলয় দা গানটি পরিবেশন করেন। সেখানেই গানটি প্রথম গাওয়া হয়। সম্মেলনে উপস্থিত শেখ হাসিনাসহ সবাই গানটির বেশ প্রশংসা করেন।
হাসান মতি আরও বলেন, তবে গানটি আলোচনায় আসে ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময়। তখন এই গানের সঙ্গে আরও কিছু গান এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ ‘জনতার নৌকা’ নামে একটি ক্যাসেট বের করি আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চেনাসুর থেকে। এক দিনেই সারা দেশে গানটি ছড়িয়ে যায়। ক্যাসেটটি কেনার জন্য মানুষ মারামারি পর্যন্ত করেছে!
কালজয়ী এই গানটির গীতিকার আরও জানান, বৈচিত্র্য আনার জন্য ১৯৯৭ সালে গানটি সাবিনা ইয়াসমীনকে দিয়ে আবার গাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন নেত্রী (শেখ হাসিনা)। এরপর আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এ বছর নতুন সংগীতায়োজনে গানটি করেছেন গান বাংলা টেলিভিশনের চেয়ারম্যান কৌশিক হোসেন তাপস। ১৫ আগস্টের কথা মাথায় রেখে এবার গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন ১৫ জন শিল্পী। তিন দশক ধরে গানটি শ্রোতাদের ভালোবাসা পাচ্ছে। গীতিকার হিসেবে এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের।’
আরআইজে