হুমায়ুন ফরীদি আছেন প্রিয়জনদের স্মৃতিতে

Dhaka Post Desk

বিনোদন ডেস্ক

২৯ মে ২০২১, ১২:৩৬ পিএম


হুমায়ুন ফরীদি আছেন প্রিয়জনদের স্মৃতিতে

হুমায়ুন ফরীদি চলে গেছেন ৯ বছর। বেঁচে থাকলে আজ তিনি ৬৯ বসন্ত পার করতেন। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে এই অভিনেতা পর্দার পেছন থেকে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। বাংলা সিনেমার খল নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা পেলেও বাস্তবে তিনি ছিলেন আদর্শ ব্যক্তিত্ব। যিনি দেশের অভিনয় জগতের পথিকৃৎ।

অভিনয় দিয়ে অগণিত মানুষকে মুগ্ধ করেছেন হুমায়ুন ফরীদি। তার জীবনবোধও সবাইকে নাড়া দিয়েছে বারবার। বিশেষ করে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জীবন, মৃত্যু, প্রেম নিয়ে এই অভিনেতার কথাগুলো স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। 

মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হুমায়ুন ফরীদি বলেছেন, ‘মৃত্যুর মতো এতো স্নিগ্ধ, এতো গভীর সুন্দর আর কিছু নেই। কারণ মৃত্যু অনীবার্য, তুমি যখন জন্মেছো তখন মরতেই হবে। মৃত্যুর বিষয়টি মাথায় থাকলে কেউ পাপ করবে না। যেটা অনীবার্য তাকে ভালোবাসাটা শ্রেয়।’

Dhaka Post

হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে বাবা-ছেলের সম্পর্ক ছিল সংগীতশিল্পী প্রীতম আহমেদের। অভিনেতার ৬০তম জন্মদিন পালন প্রসঙ্গে এক স্মৃতি শেয়ার করেন। তিনি বলেন, ‘পরিচালক আশরাফুল আলম রিপন, ছড়াকার আহসান কবির ও অভিনেতা পাভেল ভাই ৬০তম জন্মদিনের প্রস্তাব নিয়ে আমার বাসায় এসেছিলেন। জানালেন বাবার (হুমায়ুন ফরীদি) ৬০তম জন্মদিন বড় করে পালন করতে চান। তারা বলতে গেলে প্রথমেই যদি না করে দেয় আর রাজি করানো যাবে না। তাই সেই দায়িত্ব দিলেন আমাকে।’

প্রীতম আরও বলেন, ‘আমি বাবাকে ফোন দিয়ে বেশ গুছিয়ে প্রস্তাব দিলাম। তিনি সরাসরি বলে দিলেন, ঘোষণা করে জন্মদিন পালন করার মতো বড় কিছু হই নাই। শুরুতে রাজি ছিলেন না তিনি। সেই অনুষ্ঠানে আমি থাকতে পারিনি কিন্তু আজও দেশের পক্ষ থেকে মানুষটাকে দেওয়া আনুষ্ঠানিক সম্মান একটাই। সেই আয়োজনে হুমায়ূন ফরীদির প্রতি অসাধারণ ভালোবাসা প্রদর্শন করেছিলেন উপস্থিত সবাই।’

২০১১ সালের ২৯ মে রাজধানীর ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত হয়েছিল হুমায়ুন ফরীদির ৬০তম জন্মদিন। প্রিয় বন্ধুর জন্মদিনে আফজাল হোসেন তাকে উপহার দিয়েছিলেন তার সম্পাদনায় ‘হুমায়ূন ফরীদির জন্মোৎসব : বালাইষাট’ বইটি। কেক কাটার পর এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। যেখানে অভিনেতার সম্পর্কে লিখেছিলেন আতিকুল হক চৌধুরী, সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ূন আহমেদ, নির্মলেন্দু গুণ, আলী যাকের, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, মামুনুর রশীদ, ফেরদৌসী মজুমদার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আফজাল হোসেন। সেখানে বন্ধু হুমায়ুন ফরীদির কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘জন্মদিনের অনুভূতি?’ অভিনেতা বলেন, ‘জীবন মানে হলো ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। প্রতিটি জন্মদিন আমাকে জানিয়ে দেয়, মৃত্যুর দিকে এক পা এগিয়ে গেলাম।’

Dhaka Post

১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ুন ফরীদি। মঞ্চ থেকে তার অভিনয় যাত্রা শুরু। এরপর ছোট পর্দা বা বড় পর্দা সব ক্ষেত্রেই তিনি পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য। তার নান্দনিক অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে মুগ্ধ করেছেন কোটি মানুষের হৃদয়। অভিনয় শিল্পের এক অনন্য কারিগর তিনি। 

অভিনেতা হিসেবে হুমায়ুন ফরীদি যেমন শক্তিমান, মানুষ হিসেবেও ছিলেন অনন্য। শহিদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে আবদুল্লাহ আল মামুন নির্মিত ‘সংশপ্তক’ নাটকে কানকাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসিত হন হুমায়ূন ফরীদি। ৯০ এর দশকে তিনি পা রাখেন চলচ্চিত্র জগতে। খলনায়ক-নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন অসংখ্য সিনেমায়।

অভিনয়ের জন্য ২০০৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন হুমায়ুন ফরীদি। এছাড়াও ২০১৮ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়েছে। কিংবদন্তি এই অভিনেতা ২০১২ সালের ১৩ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

এমআরএম 

Link copied