ঘরে ঘরে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য পৌঁছাতে চাই
মানসম্পন্ন পোশাক তৈরিতে বিশ্বনন্দিত বাংলাদেশের স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেড। দেশে তৈরি স্নোটেক্সের পোশাক গত ২৫ বছর ধরে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেমন- যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্নোটেক্সের পণ্য দ্যুতি ছাড়াচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দ্যুতি ছড়ালেও নিজ দেশের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছিল উন্নতমানের পণ্য থেকে। বিষয়টি মাথায় রেখে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন পোশাক সব শ্রেণির মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে যাত্রা শুরু হয় স্নোটেক্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘সারা লাইফস্টাইল লিমিটেড’-এর। ২০১৮ সালে মিরপুরে মাত্র একটি আউটলেট দিয়ে শুরু। এখন এর আটটি আউটলেট। সাশ্রয়ী মূল্যই নয়, দেশীয় ঐতিহ্য ও পাশ্চাত্যের মিশ্রণে সারা’র পোশাকের নতুনত্বে মুগ্ধ ফ্যাশন-সচেতন সব বয়সী মানুষ।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘সারা’র প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে সফল এক উদ্যোক্তার গল্প। তিনি শরীফুন রেবা, ‘সারা’ লাইফস্টাইল ও স্নোটেক্সের পরিচালক। মাত্র চার বছরের মাথায় কঠোর পরিশ্রমে ‘সারা’-কে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। বর্তমানে মিরপুর, বসুন্ধরা সিটি, মোহাম্মদপুর, বারিধারা, উত্তরা, বনশ্রী ও ওয়ারি এবং রংপুরে ‘সারা’র আউটলেট রয়েছে। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এসব আউটলেটে থাকছে জমকালো আয়োজন।
পোশাক শিল্পে প্রাণের নবসঞ্চারণ আনা ‘সারা লাইফস্টাইল লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্প, বর্তমান কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন শরীফুন রেবা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সাইদ রিপন।
ঢাকা পোস্ট : সারা’র পেছনের গল্পটা শুনতে চাচ্ছি?
শরীফুন রেবা : সারা’র গল্পটা শুরু স্নোটেক্স থেকে। স্নোটেক্সের মাধ্যমে ২৫ বছর আগে আমাদের পোশাক শিল্পে আসা। প্রথমে একটি মাত্র ফ্যাক্টরি ছিল। এরপর পর্যায়ক্রমে ফ্যাক্টরির সংখ্যা বেড়েছে।
ঢাকার ধামরাইতে জায়গা কিনে প্রথমে স্নোটেক্স আউটার ওয়্যার লিমিটেডের যাত্রা শুরু। এর দুই থেকে তিন বছর পর স্পোর্টস ওয়্যার। গার্মেন্ট ব্যবসায় আমাদের অনেক রেকর্ড আছে। এ ব্যবসা করে অনেকে ভালো অবস্থানে ছিলেন। একটা পর্যায়ে তারা পড়ে যান। অনেকে ব্যবসাটা আর ধরে রাখতে পারেননি। তবে, বর্তমানে আমাদের পোশাক শিল্প অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘সারা’র প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে সফল এক উদ্যোক্তার গল্প। তিনি শরীফুন রেবা, ‘সারা’ লাইফস্টাইল ও স্নোটেক্সের পরিচালক। মাত্র চার বছরের মাথায় কঠোর পরিশ্রমে ‘সারা’-কে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। বর্তমানে মিরপুর, বসুন্ধরা সিটি, মোহাম্মদপুর, বারিধারা, উত্তরা, বনশ্রী ও ওয়ারি এবং রংপুরে ‘সারা’র আউটলেট রয়েছে। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এসব আউটলেটে থাকছে জমকালো আয়োজন
চিন্তা করলাম, আমরা যে প্রোডাক্টগুলো বানাচ্ছি, সেগুলো সব দেশের বাইরে পাঠাচ্ছি। ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডাতে চলে যাচ্ছে। দেশের মানুষের কাছে তা পৌঁছাচ্ছে না। এছাড়া গার্মেন্ট ব্যবসা সফলভাবে কতদিন করা সম্ভব— এ চিন্তা থেকেই সারা ফ্যাশন লিমিটেডের যাত্রা। যেহেতু এ ব্যবসায় আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, সেহেতু দেশের মানুষের কাছে কম দামে মানসম্মত পোশাক পৌঁছে দিতে পারব— এমন বিশ্বাস ছিল আমাদের।
সেই বিশ্বাস থেকেই ২০১৮ সালে মিরপুরে প্রথম সারা’র আউটলেট চালু করি। বর্তমানে আমাদের আউটলেটের সংখ্যা আট। এর মধ্যে ঢাকায় সাতটি এবং রংপুরে রয়েছে একটি। রাজধানীর বাসাবোতে আরও একটি আউটলেট দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
ঢাকা পোস্ট : সারা’র যাত্রার এক বছর না যেতেই সারাবিশ্বে করোনা মহামারি শুরু হয়। ফলে পোশাক শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনারা কোনোভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কি না?
শরীফুন রেবা : কোভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি বললে ভুল হবে। সারা’র ক্ষতি হয়নি। তবে, আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে পারিনি। কোভিডের সময় আমাদের যে টার্গেট ছিল সেটা ফুলফিল হয়নি। আবার লসও হয়নি। আমাদের যে প্রোডাক্টগুলো রেডি ছিল সেগুলো বিক্রি হয়নি। এ কারণে টার্গেট পূরণ হয়নি।
ঢাকা পোস্ট : কোভিড-পরবর্তী সময়ে আপনাদের পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা সম্পর্কে যদি বলতেন…
শরীফুন রেবা : কোভিডের কারণে আমরা আমাদের লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আমরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামি। এখন ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমাদের আউটলেটগুলোতে কাস্টমাররা আসছেন। আমরা সাধ্যমতো ভালো প্রোডাক্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ক্রেতার সন্তুষ্টি। সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য তাদের হাতে পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ঢাকা পোস্ট : সারা’র পণ্য নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণির মানুষের জন্য তৈরি হচ্ছে কি না?
শরীফুন রেবা : নির্দিষ্ট নয়, সব শ্রেণির মানুষের জন্য সারা পণ্য তৈরি করে। আমাদের আউটলেটগুলোতে সব শ্রেণির মানুষ আসছেন। কারণ, ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য এখানে মেলে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের পোশাক ২০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ৮০০ থেকে শুরু হয়ে চার হাজার টাকার মধ্যে পুরুষদের পাঞ্জাবি মিলছে। মূলত, ক্রেতাদের চাহিদা মতো সব দামের পণ্য সারা’তে পাবেন।
আমাদের টার্গেট নির্দিষ্ট কোনো জনগোষ্ঠী নয়, সব শ্রেণির মানুষ। ঘরে ঘরে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন পোশাক পৌঁছে দিতে চাই আমরা। সাধারণ মানুষও আমাদের আউটলেটগুলোতে আসছেন। পণ্য কিনছেন। তাদের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে পণ্য দিতে পেরে আমরাও খুশি।
ঢাকা পোস্ট : দেশে আপনাদের পণ্যের প্রসার ঘটছে। বিদেশে পাড়ি জমানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
শরীফুন রেবা : আমাদের মূল ব্যবসা কিন্তু স্নোটেক্স। স্নোটেক্সের পণ্য ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। সারা আমাদের দেশীয় চাহিদা মেটাবে। এর সেটআপ দেশীয়ভাবে তৈরি। তবে, আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাব। একটু সময় লাগবে।
ঢাকা পোস্ট : পণ্যের প্রচার ও প্রসারে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
শরীফুন রেবা : দেশের প্রতিটি জেলাতে আউটলেট করতে চাই। ঢাকাতে আরও কিছু আউটলেট দিয়ে ঢাকার বাইরে কাজ শুরু করব। কোভিডের কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা এগোতে পারিনি। কোভিড না এলে এতদিনে হয়তো জেলাপর্যায়ে কাজ শুরু করতাম।
ঢাকা পোস্ট : এবারের ঈদ কালেকশনে অন্যতম কোনো আকর্ষণ বা ছাড় আছে কি না?
শরীফুন রেবা : বিকাশ, রকেট বা কার্ডে পে করলে ছাড়ের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া বিভিন্ন প্যাকেজ আছে, সেখানেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে আমরা ছেলেদের জন্য কিছু অকেশনাল পাঞ্জাবি এনেছি, একদমই নতুন। নতুন ফ্লোরাল শর্টস্লিপ শার্টও এসেছে। এছাড়া নরমাল, ক্যাজুয়াল ও ফরমাল শার্ট, নতুন ডিজাইনের কাবলি ও মিনিমি সেট আছে।ঈদের জন্য ডিজাইনে ভিন্নতা আনা হয়েছে। আমাদের ডিজাইনাররা সবসময় নতুন নতুন ট্রেন্ড নিয়ে কাজ করেন। এ কারণে পোশাকে নতুনত্বের স্বাদ এবারের ঈদেও পাবেন ক্রেতারা।
মেয়েদের জন্য থাকছে সিঙেল পিস কামিজ, লন থ্রি পিস, আনইস্টিচ লন, আকর্ষণীয় পার্টি থ্রি পিস, এথনিক কুর্তি, ফ্যাশন টপস, কাফতান, সুতির শাড়ি, ডিজিটাল প্রিন্টের শাড়ি এবং ডেনিম এর কালেকশন।
ছেলেশিশুদের শার্ট বা ফতুয়ায় প্রাধান্য পাচ্ছে শর্ট স্লিভ ও ফুল স্লিভ। লং প্যান্টের পাশাপাশি রয়েছে কোয়ার্টার প্যান্ট। সাদার পাশাপাশি ভাইব্রেন্ট কালারেরও পাঞ্জাবি থাকছে। মেয়েশিশুদের জন্য থাকছে ফ্রক, পার্টি ফ্রক, থ্রি পিস, জাম্প সুট, ফ্যাশন টপস, নিমা সেট ও টপ বটম সেট।
ঢাকা পোস্ট : সাধারণের নাগালের মধ্যে থাকবে— বলা হলেও কিছু পণ্যের দাম কিন্তু বাড়তি। কারণ কী?
শরীফুন রেবা : কিছু পণ্যের দাম একটু বাড়াতে হচ্ছে। কোভিডের কারণে বিশ্বব্যাপী আর্থিক টানাপোড়েন শুরু হয়। আমরা যাদের কাছ থেকে ফেব্রিক কিনতাম, তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। কারণ, বেশি দামে তাদের কাঁচামাল কিনতে হয়। বাধ্য হয়েই আমাদের দাম একটু বাড়তি রাখতে হচ্ছে। মূলত, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে।
ঢাকা পোস্ট : সারাদেশে আউটলেট করার কথা বলছেন। ই-বাণিজ্যে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
শরীফুন রেবা : ই-কমার্সে আমাদের একটা ভালো রেসপন্স আছে। যে কেউ চাইলে সারা’র ওয়েবসাইট, ফেসবুক বা ইনস্টগ্রামে পণ্য অর্ডার করতে পারেন। প্রোডাক্ট দেখে অর্ডার করলে আমরা হোম ডেলিভারি দিই। ঢাকার মধ্যে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি। প্রোডাক্ট বুঝে পাওয়ার পর পে করার সুযোগ দিচ্ছি আমরা। ঢাকার বাইরে কুরিয়ারে পে করে প্রোডাক্ট নিতে হয়। এছাড়া প্রোডাক্ট নেওয়ার পর কোনো ত্রুটি পেলে ১৫ দিনের মধ্যে পরিবর্তনের সুযোগ থাকছে।
এসআর/এমএআর/