বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে আট বিভাগে বিশেষায়িত হাসপাতাল
‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’— গানটির কথাগুলো কোটি বাঙালির মনের কথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তার ভাবনা ছিল— ‘একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে চাই স্বাস্থ্যবান জাতি’। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতকে শুধু গুরুত্ব দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি, ব্যাপক সময়োপযোগী পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন। আজ সেই শ্রেষ্ঠ বাঙালির ১০১তম জন্মবার্ষিকী।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য খাতে জাতির জনকের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাস্থ্য বিভাগ আটটি বিভাগে আটটি ক্যান্সার, কিডনি ও কার্ডিয়াক হাসপাতাল স্থাপন করছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে স্বাস্থ্য বিভাগের নানা পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য খাতে বঙ্গবন্ধুর অবদানসহ নানা বিষয় নিয়ে ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক তানভীরুল ইসলাম।
ঢাকা পোস্ট : আজ জাতির জনকের জন্মদিন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে, আজ স্বাস্থ্য খাত কেমন হতো বলে মনে করেন?
জাহিদ মালেক : এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আসলেই কঠিন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা তো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নই বাস্তবায়ন করছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনাতেই কাজ করেন।
আট বিভাগে আটটি ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করা। এটি এই বছরেই আমরা অনুমোদন পেয়েছি এবং এই বছরেই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এছাড়া আট বিভাগে আটটি কিডনি হাসপাতাল এবং আটটি কার্ডিয়াক (হার্টের) হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে
জাহিদ মালেক এমপি, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে হয়তো স্বাস্থ্য খাতে আরও ভালো কিছু হতে পারতো। আমরা এখন যে কাজগুলো বাস্তবায়ন করছি, বঙ্গবন্ধু সেগুলো অনেক আগেই শুরু করেছিলেন। তিনি যে কতটুকু বিচক্ষণ নেতা ছিলেন, তা এর মাধ্যমে সহজেই বুঝা যায়। তিনি বেঁচে থাকলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এই অল্প সময়ের মধ্যে যা করেছেন, আমি মনে করি অনেক ভালো করছেন।
ঢাকা পোস্ট : বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আজ। দিনটি উপলক্ষে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে কোনো ঘোষণা বা বিশেষ কিছু আছে কি না?
জাহিদ মালেক : দিবসটি উপলক্ষে স্বাস্থ্য খাতে আমাদের নতুন কোনো পরিকল্পনা বা ঘোষণা নেই। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে আপনারা জানেন, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আমরা অনেক আগে থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। এ বছর আমরা বেশকিছু নতুন কাজ করেছি। বলতে পারেন সেগুলো বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর সম্মান প্রদর্শনে উৎসর্গ করা। এর মধ্যে অন্যতম হলো- আট বিভাগে আটটি ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করা। এটি এই বছরেই আমরা অনুমোদন পেয়েছি এবং এই বছরেই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
তখন চিকিৎসকরা ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা। বঙ্গবন্ধু তখন তাদের প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করেন। এটা হলো চিকিৎসকদের সম্মান দেওয়া, অনুপ্রাণিত করা
জাহিদ মালেক এমপি, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
এছাড়া আট বিভাগে আটটি কিডনি হাসপাতাল এবং আটটি কার্ডিয়াক (হার্টের) হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
ঢাকা পোস্ট : আলাদা করে আটটি হাসপাতাল হবে, নাকি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতেই নতুন করে এসব ইউনিট স্থাপন করা হবে?
জাহিদ মালেক : আট বিভাগে ইতোমধ্যে যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে, সেগুলোর ভেতরে জায়গা খালি থাকলে সেখানেই আলাদা বিল্ডিং করে বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করা হবে।
ঢাকা পোস্ট : বিশেষায়িত এই হাসপাতালগুলোর সর্বশেষ অগ্রগতির বিষয়ে যদি বলতেন...
জাহিদ মালেক : এগুলোর তো অনুমোদন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে টেন্ডারসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই এগুলোর কাজ শুরু হবে। তিনি উদ্বোধনের জন্য যেদিন সময় দেবেন, সেদিন থেকেই কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে।
ঢাকা পোস্ট : স্বাস্থ্য খাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান নিয়ে কিছু বলেন...
জাহিদ মালেক : স্বাস্থ্য খাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান অনেক। দেশ স্বাধীনের পর এ খাতের অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যেই তিনি স্বাস্থ্য খাতের ভিত গড়ে তোলেন। তখন চিকিৎসকরা ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা। বঙ্গবন্ধু তখন তাদের প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করেন। এটা হলো চিকিৎসকদের সম্মান দেওয়া, অনুপ্রাণিত করা।
সে সময় দেশের জনসংখ্যা ছিল সাত কোটি। সময় অনুযায়ী জনসংখ্যার হারও অনেক বেশি ছিল। মা ও শিশুদের কোনো সুরক্ষা ছিল না। তখন তিনি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানো এবং মা ও শিশুদের সুরক্ষায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর স্থাপন করেন। তিনি নিজেই বলেন, ‘যে হারে লোক বাড়ছে, এভাবে লোক বাড়তে থাকলে কৃষির জন্য কোনো জমিই থাকবে না। তখন তো আমাদের খাদ্যের অভাব হয়ে যাবে। সেজন্য আমাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’ সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর দেখেন, লোকজন অপুষ্টিতে ভুগছে, তখন বঙ্গবন্ধু পুষ্টি পরিষদ গঠন করেন। যাতে পুষ্টি সম্পর্কে জনগণের জ্ঞান হয় এবং সঠিক খাবার গ্রহণ করেন।
দেশ যখন ক্রমেই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন অনুভব করেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ঢাকার মহাখালীতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) প্রতিষ্ঠিত হয়। এর শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ১৯৭৮ সাল থেকে। সেখানে পাবলিক হেলথ নিয়ে পড়াশোনা করানো হয়। রিসার্চের পাশাপাশি সেখান থেকে ডিগ্রিও দেওয়া হয়। যা আজও একই নিয়মে চলছে।
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ঢাকার মহাখালীতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) প্রতিষ্ঠিত হয়
জাহিদ মালেক এমপি, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) প্রতিষ্ঠা করেন। বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনেন এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দেশেই উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করেন। যা রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত পঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল। ১৯৭২ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অস্থায়ীভাবে পঙ্গু হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সেই থেকেই এই হাসপাতাল চলছে এবং সেবা দিচ্ছে।
আজকের এই সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। যেখানে একদিকে লাখো মানুষ চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন অন্যদিকে মেডিকেল কলেজ থেকে হাজারো চিকিৎসক বের হয়ে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর অবদানেই এতকিছু হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, যা পিজি হাসপাতাল নামে বেশি পরিচিত। এটি বাংলাদেশের প্রথম চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়। হাসপাতালটিকে বঙ্গবন্ধু পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউটে রূপ দেন।
গ্রামবাসীদের চিকিৎসাসেবার লক্ষ্যে জাতির জনক দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরবর্তীতে এগুলোকে কমিউনিটি ক্লিনিক হিসেবে রূপ দেন। গ্রামের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি সবসময় ওনার নজর ছিল। কীভাবে তাদের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থাও তিনি করতেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ড্রাগ কন্ট্রোলার অফিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়
জাহিদ মালেক এমপি, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
স্বাধীন বাংলাদেশে ওষুধ শিল্প ছিল অত্যন্ত নাজুক অবস্থায়। ৮০ শতাংশের বেশি ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। এতে প্রচুর টাকা খরচ হতো। দেশে যে সামান্য পরিমাণ ওষুধ উৎপাদন হতো, তা-ও বিদেশি ওষুধ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে ছিল। ওষুধ শিল্পে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ‘ড্রাগ কন্ট্রোলার অফিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
স্বাস্থ্য খাতে এমন অনেক কিছুই বঙ্গবন্ধু করে গেছেন। আজ স্বাস্থ্যসেবায় আমরা যে সুফলগুলো পাচ্ছি, এর অধিকাংশই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর চিন্তার ফসল।
ঢাকা পোস্ট : করোনার টিকাগ্রহীতার সংখ্যা কমে যাচ্ছে, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
জাহিদ মালেক : টিকা নেওয়া এখন জনগণের ইচ্ছা। জোর করে তো আর আমরা টিকা নেওয়াতে পারব না। তবে আমরা সবাইকে টিকা নিতে অনুরোধ জানাই। অন্তত আপনি সুরক্ষিত থাকবেন।
ঢাকা পোস্ট : হঠাৎ করেই দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, এর কারণ কী?
জাহিদ মালেক : আমাদের দোষেই এটা হয়েছে। বর্তমানে জনগণ অনেকটা বেপরোয়া। রাস্তাঘাটে চললে দেখা যায়, লোকজন কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানে না, মাস্ক পরে না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে না। আপনারা দেখেছেন, কক্সবাজার, বান্দরবানসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে কী পরিমাণ মানুষ যাওয়া-আসা করছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, কক্সবাজারের ১৫ লাখসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ২০ লাখ লোক গত এক মাসের মধ্যে ভ্রমণ করেছে। একটু ভাবেন, ২০ লাখ লোক যদি এই পরিস্থিতিতে একটা জায়গায় যায়, মাস্ক না পরে, সামাজিক দূরত্ব না মানে তাহলে করোনা তো স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।
কক্সবাজারের ১৫ লাখসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ২০ লাখ লোক গত এক মাসের মধ্যে ভ্রমণ করেছে। একটু ভাবেন, ২০ লাখ লোক যদি এই পরিস্থিতিতে একটা জায়গায় যায়, মাস্ক না পরে, সামাজিক দূরত্ব না মানে তাহলে করোনা তো স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে
জাহিদ মালেক এমপি, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
বিয়ে-শাদি হচ্ছে নিয়মিত। সেখানেও কেউ মাস্ক পরে না। স্বাস্থ্য বিভাগের যে নির্দেশনা তার কিছুই মানে না।
ঢাকা পোস্ট : মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
জাহিদ মালেক : আপাতত লকডাউনের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করি, তাহলেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। বাড়ছে তো আমাদের বেপরোয়া চলাফেরার কারণেই। নিজেরা সচেতন হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে। আমাদের তো অর্থনৈতিক দিকটাও দেখতে হবে।
আপাতত লকডাউনের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করি, তাহলেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে
জাহিদ মালেক এমপি, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
দিনদিন মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। সামনে বইমেলা। লকডাউন তো ভিন্ন কথা। তবে আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি হবে, যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি না মানি। কারণ, লাখো লোকের জন্য হাসপাতালে জায়গা হবে না। এটা আমরা আগেই বলেছি। আমরা এখন জেনেশুনেই আক্রান্ত হচ্ছি। আমাদের নিজেদেরই সতর্ক হওয়া উচিত। তা না হলে পরে নিজের এবং পরিবারের ক্ষতি হবে।
ঢাকা পোস্ট : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জাহিদ মালেক : আপনাদেরও ধন্যবাদ।
একনজরে স্বাস্থ্য খাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান
১. সংবিধানে স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা পাওয়াকে মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা।
২. আইপিজিএমআর (সাবেক পিজি) হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল হিসেবে স্থাপন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসকরা পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেন। সেই সঙ্গে এখানে প্রতি বছর লাখ লাখ রোগীকে উচ্চ মানসম্পন্ন চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
৩. বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) প্রতিষ্ঠা। এই প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসকদের ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।
৪. স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা।
৫. ১৯৭৩ সালে প্রণীত প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান।
৬. ১৯৭৪ সালে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি-প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা।
৭. ১৯৭৫ সালের ২৩ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ পুষ্টি পরিষদ’ গঠনের আদেশে স্বাক্ষর করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
৮. বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা।
৯. চিকিৎসকদের সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান। আগে যা দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় ছিল।
১০. নার্সিং সেবা ও টেকনোলজির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা।
১১. উন্নয়নশীল দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল নীতি হলো, ‘Prevention is better than cure’। এ নীতি বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নিপসম’ নামের প্রতিষ্ঠান। সেখানে রোগ, রোগতত্ত্ব এবং রোগের প্রতিকার বিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
১২. বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) প্রতিষ্ঠা।
১৩. ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা।
১৪. জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান স্থাপন।
১৫. ওষুধ শিল্পে সরকারি নিয়ন্ত্রণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ‘ড্রাগ কন্ট্রোলার অফিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
একনজরে জাহিদ মালেক
জাহিদ মালেক ১৯৫৯ সালের ১১ এপ্রিল মানিকগঞ্জের সদর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল মালেক ছিলেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী। তার মায়ের নাম ফৌজিয়া মালেক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
জাহিদ মালেক স্বপন ১৯৮৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থাই অ্যালুমিনিয়াম লি., সান লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লি., বিডি থাইফুড অ্যান্ড বেভারেজ লি., রাহাত রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লি., বিডি সান লাইফ ব্রোকারেজ হাউজ লি.-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো মানিকগঞ্জ- ৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু পরাজিত হন। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে পুনরায় অংশগ্রহণ করেন এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি জাহিদ মালেক বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান এবং ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
জাহিদ মালেকের স্ত্রীর নাম শাবানা মালেক। এ দম্পতির এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
টিআই/এমএইচএস/এমএআর/