বছরজুড়ে সমালোচিতদের ‘আলোচিত’ রায়
শেষ হচ্ছে ২০২০ সাল। ঘটনাবহুল বছরটি সবাই মনে রাখবে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। স্থবির হয়ে পড়ে অর্থনীতির চাকা। একে একে বন্ধ হয়ে যায় শিল্প-কলকারখানা, সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস ও আদালত।
করোনার চাপে কিছুটা হলেও ‘শাপে বর’ নেমে আসে আদালত প্রাঙ্গণে। সেখানে লাগে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া। তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে কোভিড-১৯ মহামারির সময়েও দারুণ দক্ষতার সঙ্গে হাইকোর্ট তার ভার্চুয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করে। ফৌজদারি, দেওয়ানি ও রিট অধিক্ষেত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল কোর্ট বিচারপ্রার্থীদের চাহিদার উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করে।
করোনার মধ্যেও আদালতপাড়ায় চলেছে বেশকিছু আলোচিত মামলার বিচারকার্যক্রম। আলোচিতরা হয়েছেন সমালোচিত। এমন কয়েকটি রায়ে সাধারণের মধ্যেও সন্তোষের পরশ বুলিয়ে দিয়েছে।
টাকার বিনিময়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করিয়ে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার মতো লঙ্কাকাণ্ডের সাক্ষীও এ সময় হয় দেশ। এমন অভিযোগে জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরীসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। আলোচিত ওই ঘটনা ছাড়াও করোনাকেন্দ্রিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্রও প্রকাশ পেয়েছে সারাবছর।
এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট এবং রাষ্ট্রপরিচালনায় শীর্ষস্থানীয় কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থপাচারসহ নানা অনিয়ম এমনকি ক্ষমতার অপব্যবহারেরও অভিযোগ ওঠে। শেষ হতে চলা বছরে এমন কিছু মামলার রায় জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি বয়ে আনে।
বছরজুড়ে উল্লেখযোগ্য রায়ের মধ্যে রয়েছে- রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা, যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমনের বিরুদ্ধে দায়ের করা অস্ত্র মামলা, রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা, ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী হত্যা মামলা, শিশু সায়েম হত্যা মামলা এবং সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার রায়সহ আরও বেশকিছু আলোচিত মামলার রায় এসেছে করোনার এ বছরে।
অস্ত্র মামলায় রিজেন্ট চেয়ারম্যান সাহেদের যাবজ্জীবন
রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় করা মামলায় সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া অস্ত্র আইনের ১৯ (এফ) ধারায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। উভয় সাজা একই সঙ্গে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেন।
নানা অনিয়মের অভিযোগে গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র্যাব। ১৫ জুলাই র্যাব সাহেদকে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেফতারের কথা জানায়। তার বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেফতারের পর হেলিকপ্টারে উড়িয়ে তাকে ঢাকায় আনা হয়।
গত ১৯ জুলাই সাহেদকে নিয়ে তার উত্তরার বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। পরবর্তীতে তার বাসার সামনে থাকা নিজস্ব সাদা প্রাইভেটকারে পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ১০ বোতল ফেনসিডিল, একটি পিস্তল ও একটি গুলি উদ্ধার করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করা হয়।
অস্ত্র মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীর ২৭ বছর কারাদণ্ড
অবৈধ অস্ত্র রাখায় যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমনকে ২৭ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
গত ১২ অক্টোবর অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় দুজনকে ২০ বছর করে এবং ১৯ (এফ) ধারায় তাদের সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুটি ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন এবং অবৈধভাবে অর্থপাচারের অভিযোগে শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালে পাপিয়ার ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বেশকিছু বিদেশি মুদ্রা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা এবং বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।
ঢাবির শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় মজনুর যাবজ্জীবন
রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় একমাত্র আসামি মজনুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গত ১৯ নভেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার এ রায় ঘোষণা করেন।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে ওই ছাত্রী বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন। কুর্মিটোলা বাসস্টেশনে নামার পর তাকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি অনুসরণ করতে থাকে। মাঝপথে তাকে ধরে নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। ওই ঘটনায় ৬ জানুয়ারি সকালে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে ওই ছাত্রীর বাবা জাকির হোসেন ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন।
অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী হত্যা মামলায় দুই গৃহকর্মীর মৃত্যুদণ্ড
ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীন হত্যা মামলায় দুই গৃহকর্মী রিতা আক্তার ওরফে স্বপ্না ও রুমা ওরফে রেশমাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
গত ৪ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে দণ্ডবিধি ৩৮১ ধারায় তাদের প্রত্যেককে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত।
২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানী এলিফ্যান্ট রোডের নিজ বাসায় খুন হন মাহফুজা চৌধুরী। পরের দিন ১১ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনায় নিহতের স্বামী ইসমত কাদির গামা নিউ মার্কেট থানায় মামলা দায়ের করেন।
১৯ বছর পর হুজির ১০ সদস্যের মৃত্যুদণ্ড
রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার ১৯ বছর পর নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি) ১০ সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। গত ২০ জানুয়ারি ঢাকার অতিরিক্ত তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- হুজির সদস্য মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নূর ইসলাম। তাদের মধ্যে প্রথম চারজন কারাগারে আছেন, বাকিরা পলাতক।
গত ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশ চলাকালে বোমা হামলায় পাঁচজন নিহত হন। আহত হন অনেকে। নিহতরা হলেন- খুলনার বটিয়াঘাটার হিমাংশু মণ্ডল, খুলনার রূপসা উপজেলার আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার আবুল হাসেম, মাদারীপুরের মুক্তার হোসেন ও খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা বিপ্রদাস। ওই ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মুক্তিযোদ্ধা আতিক উল্লাহ হত্যায় সাতজনের মৃত্যুদণ্ড
ঢাকার কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আতিক উল্লাহ চৌধুরীকে হত্যার পর মরদেহ পোড়ানোর অভিযোগে করা মামলায় সাতজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
গত ২ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. জাহাঙ্গীর ওরফে জাহাঙ্গীর খাঁ, আহসানুল কবির ইমন, রফিকুল ইসলাম আমিন ওরফে টুণ্ডা আমিন, শিহাব আহমেদ শিবু, তাজুল ইসলাম তানু, মো. আসিফ ও গুলজার হোসেন।
২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন কোন্ডা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আতিক উল্লাহ চৌধুরী। নিখোঁজের পরদিন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর এলাকার একটি হাসপাতালের পাশ থেকে তার আগুনে পোড়া বিকৃত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর প্রথম রায় : তিন পুলিশের যাবজ্জীবন
রাজধানীর পল্লবী থানা পুলিশ হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনি নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে পুলিশের সাবেক তিন সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় দেন।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পল্লবী থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদ, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল, এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু। এছাড়া আসামিদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই তিন আসামির প্রত্যেককে ভুক্তভোগী পরিবারকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতেও রায়ে বলা হয়।
২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১১ নম্বর সেক্টরে স্থানীয় একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালে পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় জনি ও তার ভাই সুমনকে সেখান থেকে চলে যেতে বললে তিনি পুলিশকে ফোন দেন। পুলিশ এসে জনিকে আটক করে। স্থানীয়রা পুলিশকে ধাওয়া দিলে তারা গুলি ছোঁড়ে। আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের একপর্যায়ে জনির অবস্থার অবনতি হয়। প্রথমে তাকে ন্যাশনাল হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক জনিকে মৃত ঘোষণা করেন।
জনির মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর হত্যায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড
বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান পায়েল হত্যায় দুই সহোদরসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান গত ১ নভেম্বর এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাসের চালক মো. জামাল হোসেন, তার ভাই ও বাসের হেলপার ফয়সাল হোসেন এবং সুপাভাইজার মো. জনি।
২০১৮ সালের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধুর সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান পায়েল। নিখোঁজের একদিন পর ২২ জুলাই মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে পায়েলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই ঘটনায় একই বছর ২৪ জুলাই পায়েলের মামা গোলাম সোহরাওয়ার্দী বিপ্লব গজারিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনি, চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শিশু সামিউল হত্যায় মা ও তার কথিত প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড
রাজধানী ঢাকার আদাবর এলাকায় বহুল আলোচিত সামিউল হত্যা মামলায় তার মা আয়শা হুমায়রা এশা ও তার কথিত প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেকের পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেয়া হয়। গত ২০ ডিসেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ই রায় ঘোষণা করেন।
২০১০ সালের জুন মাসে মায়ের অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলে শিশু সামিউল। ২২ জুন তাকে অপহরণ করে মামলার আসামি শামসুজ্জামান বাক্কু। ২৩ জুন সামিউলকে হত্যার পর তার মরদেহ ফ্রিজে রাখা হয়। ২৪ জুন সামিউলের মরদেহ বস্তায় ভরে নবোদয় হাউজিং এলাকার একটি খালি প্লটে ফেলে যায় শামসুজ্জামান বাক্কু। পরে সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আসামিদের মধ্যে শামসুজ্জামান বাক্কুর বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ ছিল। সামিউলের মায়ের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ ছিল।
গ্রেফতার হওয়ার পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন শামসুজ্জামান বাক্কু। এরপর তাকে জামিন দেয়া হলে ২০১১ সাল থেকে তিনি পলাতক। আয়শা হুমায়রা এশাকে ২০১৫-১৬ সালের দিকে একবার জামিন করেছিলেন সামিউলের বাবা ও মামলার বাদী কে আর আজম। সেসময় তার সঙ্গে কিছুদিন সংসারও করেছিলেন তিনি। এদিকে মামলার রায় ঘোষণার এক মাস আগে থেকে সামিউলের মা আয়শা হুমায়রা এশা পলাতক রয়েছেন।
দুদকের মামলায় সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক খালাস
ঢাকার সাবেক মেয়র ও বিএনপির প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন সম্পদের হিসাববিবরণী দাখিল না করায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২৩ নভেম্বর ঢাকা বিশেষ জজ-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম মামলার রায়ে তাকে খালাস দেন।
২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ইশরাক হোসেন এবং তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের সম্পদের বিবরণী দখিলের নোটিশ দেয় দুদক। ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর দুদকের কনস্টেবল তালেব কমিশনের নোটিশটি নিয়ে ইশরাকের বাসায় যান। কিন্তু ইশরাক তখন বাসায় না থাকায় উপস্থিত চারজনের (সাক্ষী) সামনে বাসার নিচতলার প্রবেশ পথের দেয়ালে সেই নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়ে আসেন। তারপরও দুদকের বেধে দেওয়া সাত কার্যদিবসের মধ্যে ইশরাক তার সম্পদের হিসাব নির্ধারিত ফরমে দাখিল না করায় ২০১০ সালের ২৯ আগস্ট রমনা থানায় দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক সামছুল আলম মামলাটি দায়ের করেন।
এছাড়া গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে চয়ন একাডেমির অষ্টম শ্রেণির ছাত্র কাউসার হত্যা মামলায় স্বামী-স্ত্রীসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত।
গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের শিক্ষার্থী আয়াজ হত্যা মামলায় ইনজামামুল ইসলাম ওরফে জিসান নামে এক ব্যক্তিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক।
এমএআর