স্বস্তি ফিরেছে অক্সিজেনে
করোনাভাইরাস মহামারিতে সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে পড়েছে। কয়েকদিন পরপর আবিষ্কার হচ্ছে ভাইরাসটির নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট (ধরন)। একটির চেয়ে আরেকটি যেন বিধ্বংসী রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে আর রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদের।
মহামারির এই সময়ে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস অক্সিজেন। অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও ২০ থেকে ২৫ দিন আগে আলোচনার শীর্ষে ছিল ক্লিনিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডার। মুমূর্ষু সময়ে ঠিকমতো অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে কোভিড পজিটিভ রোগী এবং তাদের স্বজনদের সংশয় ছিল বেশি।
এপ্রিল মাসজুড়ে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেনের সংকটও প্রকট হয়। ঠিক ওই সময় ভারত সরকার অক্সিজেন রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং অক্সিজেনের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে শিল্প প্রতিষ্ঠানে এর ব্যবহার ও সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেয় বিস্ফোরক পরিদফতর। তবে, বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। রাজধানীতে এখন স্বাভাবিক আছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা, রিফিল ও সরবরাহ— এমনটি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উৎপাদকরা।
এপ্রিলের শুরুর দিকে হঠাৎ করে ক্লিনিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট শুরু হয়। যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তখন ব্যবসায়ীদের ভাষ্য ছিল, ক্লিনিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা এতটাই বেশি যে শেষপর্যন্ত রিফিল সংকটে পড়তে হয়েছে। এক ট্রাক সিলিন্ডার রিফিল করিয়ে আনতে দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত সময় লেগেছে। গত ১০ দিন ধরে সেই সংকট কাটিয়ে উঠেছেন রাজধানীর ব্যবসায়ীরা
বর্তমানে দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। সংক্রমণ রোধে সরকার ইতোমধ্যে সারাদেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বর্তমানে নিষেধাজ্ঞার তৃতীয় ধাপ চললেও এটি নতুন করে বাড়ানো হয়েছে ১৬ মে পর্যন্ত। চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুর দিকে হঠাৎ করে ক্লিনিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট শুরু হয়। যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তখন ব্যবসায়ীদের ভাষ্য ছিল, ক্লিনিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা এতটাই বেশি যে শেষপর্যন্ত রিফিল সংকটে পড়তে হয়েছে। এক ট্রাক সিলিন্ডার রিফিল করিয়ে আনতে দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত সময় লেগেছে। গত ১০ দিন ধরে সেই সংকট কাটিয়ে উঠেছে রাজধানীর ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (৩ মে) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁও, মগবাজার ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বিপরীত পাশে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীতে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলের কোনো সংকট নেই। সময়মতো তারা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সিলিন্ডার রিফিল করিয়ে আনতে পারছেন। এমনকি কমে গেছে নতুন সিলিন্ডার ক্রেতার সংখ্যাও। আগে যেখানে দিনে প্রতিটি ব্যবসায়ী পাঁচ থেকে আটটি সিলিন্ডার বিক্রি এবং ১০/১২টি সিলিন্ডার রিফিল দিতেন, সেখানে এখন গত সাত দিনে একটি নতুন সিলিন্ডার বিক্রি হয়নি। রিফিল সিলিন্ডারের চাহিদাও কমে গেছে। দাম রয়েছে আগের মতো স্বাভাবিক।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কলোনি বাজার এলাকায় মেসার্স তাহের এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা ইয়াসিন আরাফাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে যে অক্সিজেনের সংকট ছিল, সেটা এখন পুরোই স্বাভাবিক। প্রায় ১০ দিন হলো সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। এখন চাওয়া মাত্রই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করানো সম্ভব হচ্ছে। গ্রাহকের চাহিদাও এখন সীমিত।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের উল্টো পাশে মিজান সার্জিক্যাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী ইসমাইল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিলিন্ডার রিফিলের এখন আর কোনো ঝামেলা নেই। খুব দ্রুতই রিফিল করে আনা সম্ভব হচ্ছে। অবস্থা এখন এতটাই স্বাভাবিক যে গত সাত দিনে কোনো নতুন সিলিন্ডারের গ্রাহক দোকানে আসেননি। বিক্রি বড় কথা নয়, সবাই করোনামুক্ত থাকুক এটাই চাই।
এদিকে, ক্লিনিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গত কয়েকদিনে তেমন কোনো চাপ নেই। রিফিল থেকে শুরু করে সরবরাহ পর্যন্ত সবকিছুই স্বাভাবিক। রিফিলের চাপ প্রায় ৫০ শতাংশ কমে এসেছে। উৎপাদনের পুরোটাই আমরা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
ইসলাম অক্সিজেন প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুস্তাহিম বিল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল হচ্ছে অনেক কম। প্রায় ৫০ শতাংশ কমে এসেছে। কোম্পানির বাইরে কোনো ট্রাকের লাইন নেই। কোনো ডিমান্ড নাই, একেবারেই নরমাল।
জ্বালানি খাতের কোম্পানি লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেডের মানব সম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এবং প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র সায়কা মাজেদ বলেন, আমরা দিনে ৯০ টন অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারি। এর পুরোটাই সরবরাহ করছি। আগের চেয়ে চাপ এখন কম। উৎপাদিত অক্সিজেনের ১০ শতাংশ আমরা সিলিন্ডারে রিফিল করি। বাকি ৯০ শতাংশের পুরোটাই লিকুইড হিসেবে হসপিটালের জন্য সরবরাহ করি।
স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেডের ঢাকা ডিপোর ডিস্ট্রিবিউশন অফিসার গৌতম বলেন, আমাদের ঢাকা প্লান্টে এখন কোনো চাপ নেই। তবে কাঁচপুর প্লান্টে কিছুটা চাপ রয়েছে। ঢাকার অবস্থা স্বাভাবিক বলা যায়।
এদিকে, দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে দৈনিক সংক্রমণের হার দিন দিন কমতে শুরু করেছে। ফলে হাসপাতালগুলোতেও সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা পেতে হাহাকারও তেমন নেই। বর্তমানে দেশের মোট আইসিইউ শয্যার অর্ধেকই খালি রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের মোট এক হাজার ৯০টি কোভিড আইসিইউ শয্যার মধ্যে ৫৮৬টিই খালি রয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ মে) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, দেশের আট বিভাগের হাসপাতালগুলোর মোট ১২ হাজার ২৮৯টি কোভিড ডেডিকেটেড সাধারণ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে এখন নয় হাজার ২৯১টি শয্যা খালি রয়েছে। এছাড়া এক হাজার ৯০টি কোভিড আইসিইউ শয্যার মধ্যে ৫৮৬টি খালি রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে দেশে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১১ হাজার ৭০৫ জন। এ সময় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৯১৪ জন। মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল সাত লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৬ জনে।
এমএইচএন/এমএইচএস/এমএআর/