আক্রান্ত ১৮ হাজার সম্মুখযোদ্ধা, মৃত ৮২
সারাবিশ্বে আবারও বেড়েছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। মহামারিতে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, চিকিৎসক, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন খাতে কর্মরত সদস্যরা। করোনার সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সেবামূলক নানা কার্যক্রমের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুও হয়েছে অনেকের।
করোনা মোকাবিলা, পেশাগত দায়িত্ব পালন, লকডাউনসহ সরকারি নির্দেশনা যথাযথ বাস্তবায়ন এবং ডিএমপিসহ দেশের বিভিন্ন ইউনিটে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার মোট ১৮ হাজার ৮১১ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৮২ জন। এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩১৭ জন।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ছয়জন অতিরিক্ত আইজিপি, ১০ জন ডিআইজি, ১৯ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ১১২ জন পুলিশ সুপার, ১৮৭ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ২২৮ জন সহকারী পুলিশ সুপার, ৯৫৭ জন ইন্সপেক্টর, ৩০০৭ জন এসআই, ২৮৩৫ জন এএসআই, ৫৫০ জন নায়েক, ৮৮২৩ জন কনস্টেবল এবং অন্যান্য ২০৭৭ সদস্য রয়েছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা নিজেরাই আক্রান্ত হয়েছেন। শুধুমাত্র ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ১৭৮ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ১১১ জন। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৫ জন মারা গেছেন। এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪২ জন।
ডিএমপিতে আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন তিনজন যুগ্ম কমিশনার, ১৬ জন উপ-পুলিশ কমিশনার, ৫০ জন অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার, ২৯ জন সহকারী পুলিশ কমিশনার, ১৮০ জন ইন্সপেক্টর, এসআই ৫৮৮ জন, এএসআই ৫০৫ জন, নায়েক ১০৭ জন, কনস্টেবল ১৫৫৩ জন এবং অন্যান্য ১৪৭ জন।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা অনেক মানবিক আচরণ করেছেন। যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। আক্রান্তদের সহায়তা থেকে শুরু করে হাসপাতালে নেওয়া পর্যন্ত সেবা দিয়েছে পুলিশ। লকডাউন চলাকালে ঘরে থাকার আহ্বান জানানোসহ যাদের ঘরে খাবার ছিল না তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া ডিএমপির পক্ষ থেকে প্রতিটি থানা এলাকায় রান্না করা খাবার অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ এবং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় জীবাণুনাশক পানি ছিটিয়েছে পুলিশ। লকডাউনের সময় পুলিশ দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষকের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছে।
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, মহামারি চলাকালে অনেকেই সংক্রমণের ভয়ে আক্রান্তদের পাশে না গেলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তখন পুলিশ উপস্থিত হয়েছে। এমনকি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থাও করেছেন পুলিশের সদস্যরা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষকে হাসপাতালে নিয়েছে পুলিশ। এসব কার্যক্রম করতে গিয়ে একক পেশা হিসেবে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এ বাহিনীর সদস্যরা।
এখানেও থেমে থাকেনি পুলিশ। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য সুস্থ হয়ে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্লাজমাও দিয়েছেন।
পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা
রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্তদের জীবন বাঁচাতে নিয়মিত প্লাজমা দিচ্ছেন করোনা থেকে সু্স্থ হওয়া পুলিশ সদস্যরা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্লাজমা ব্যাংক স্থাপন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। করোনাকালে আক্রান্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের নানাভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে পুলিশ সদরদপ্তর ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
করোনায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণ পুলিশের পক্ষে কথা বলছে, পুলিশের জন্য লিখছে। যারা কথায় কথায় পুলিশের সমালোচনা করতেন, তারাও আজ পুলিশের পক্ষে হৃদয় উজাড় করে বলছেন, পুলিশকে সমর্থন করছেন। করোনায় সামনে থেকে কাজ করায় আজ ফ্রন্ট ফাইটারের (সম্মুখযোদ্ধা) উপাধি পেয়েছে পুলিশ। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এত সম্মান, এত মর্যাদা আর কখনও পায়নি এ বাহিনী। সম্মান টাকা দিয়ে কেনা যায় না, মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে মানুষের সঙ্গে থাকতে হয়, তাদের কাছে যেতে হয়, মানুষকে ভালোবাসতে হয়।’
করোনাকালে পুলিশের চিকিৎসাব্যবস্থার আধুনিকায়নের বিষয়ে আইজিপি বলেন, পুলিশের চিকিৎসাব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের আরও আধুনিকায়ন করা হবে। দেশের বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালগুলোও আধুনিকায়ন হচ্ছে। পুলিশ মেডিকেল সার্ভিস প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জেইউ/এমএইচএস